ফজলুল বারী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় একটা কথা বলেন, তাহলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই জনগন কিছু পায়।কথা সত্য। এর একশো প্রমান দেয়া যায়। কিন্তু জনগন যা পায় তা যে আবার তাদের পকেট কেটে নিয়ে যাওয়া
হয়, তা কি সত্য নয়? বিদ্যুৎ দেয়া হলো শতভাগ। কিন্তু এরপরেই দেখা গেলো এর কাঠামো কত দূর্বল! শতভাগ বিদ্যুতের দাবিটি হঠাৎ করে যাতে লোডশেডিং’এ খেলো হয়ে না পড়ে, এর বিকল্প কি ভাবা হয়েছে?
সোলারের মতো বিকল্প বিশ্বের দেশে দেশে সব সময় উজ্জ্বল হয়ে আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্রিকেট স্টেডিয়াম মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড তথা এমসিজির পুরোটা সোলার বিদ্যুতে চলে।
অস্ট্রেলিয়ার যে সব বাড়িওয়ালা বাড়ির চালে সোলার প্যানেল বসাতে চায় তাদের সহায়তা দেয় সরকার। এসব বাড়ির সোলার প্যানেলে উৎপাদিত বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিদ্যুত চলে যায় জাতীয় গ্রিডে। এদেশের স্কুলের পাশে
যে গতিসীমার সাইনবোর্ড, এগুলোও সোলার বিদ্যুৎ।
বাংলাদেশে এক সময় সোলার বিদ্যুতের অনেক হাকডাক শোনা গিয়েছিল। এসব আর শোনা যায়না কেনো? দেশের প্রথম পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্ট বিদ্যুৎ কাপ্তাই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে কত ঘটনা ঘটে গেলো। তলিয়ে গেলো পাহাড়িদের কৃষি জমি। পাহাড়ি শরণার্থী-শান্তিবাহিনীর সৃষ্টি হলো। সেই কাপ্তাইর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জায়গাটির সংস্কার গভীরতার অভাবে প্রকল্পটিই দিনে দিনে পরিত্যক্ত হবার জোগাড়! এসব নিয়ে কিন্তু কোথাও কোন আওয়াজ নেই! সবাই নতুন নতুন প্রকল্পের খোঁজে ব্যস্ত! নতুন প্রকল্প মানেই নতুন দুর্নীতির সুযোগ! সেটাই কী সত্যি?
ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারনে শতভাগ বিদ্যুতের দেশে লোডশেডিং শুরু হয়েছে! ইউক্রেন যুদ্ধ একটি দুর্যোগ। বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ। বাংলাদেশ নিজেই একটি দুর্যোগ প্রবন দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্নীতির দুর্যোগ, রাজনৈতিক দুর্যোগ! কোন না কোন দুর্যোগ এখানে হানা দেয় ফী বছর! এমন কোন একটি দুর্যোগে শতভাগ বিদ্যুৎ সেবা কার্যক্রম কিভাবে নিরবিচ্ছিন্ন রাখা হবে বা যাবে, এটা কেউ একবার ভাবলেননা! বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর চেহারায় আচরনে কী বোঝার উপায় আছে কোথাও কোন দুর্যোগ
আছে? এসব ভাবার দায়িত্বতো তার। তার কাজতো হলো সারাক্ষন বলা, কেউ কিছু বোঝেনা! সব বোঝেন তিনি! কিন্তু তার মতো সব বুঝদারের একেকটি কর্মকান্ডে মানুষ যে সর্বশান্ত হচ্ছে এর টালি কে করবে? শতভাগ বিদ্যুতের দেশ হঠাৎ করে চলে গেলো লোডশেডিং’এ। এতে করে যা প্রশংসা কুড়িয়েছে শেখ হাসিনার সরকার, এরসব যে জলে গেলো! এতে করে প্রতিদিন দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব কষেছেন কেউ? ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে
জনগনকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বলা হয়েছে। কিন্তু সরকরের কোন একজন মন্ত্রী-এমপি-নেতা কোথায় কিভাবে সাশ্রয়ী হয়েছেন, এর কোন নিউজ-ছবি কেউ কী কোথাও দেখেছেন? মানুষকে যারা সাশ্রয়ী হতে বলছেন, তারা কেউ সাশ্রয়ী হয়েছেন কিনা তা কেউ জানলোনা বুঝলোনা! একটা রাজনৈতিক সরকার কিন্তু এখানে রাজনৈতিক আচরন করছেনা।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে চালের দাম রান্নার তেলের দাম থেকে শুরু করে কোনটায় সরকারি লোকজনের পরিকল্পনায় ছাপ দেখেছে দেশের মানুষ? না এসব কিছুর কোন একটাতে দেশের কৃষকরা লাভবান হয়েছে? দিনে দিনে প্রকাশিত সত্য হচ্ছে বাংলাদেশ এখন আর ধান চাউল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ন নয়! চাউল আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ। বাজার অর্থনীতিতে সরকার কথায় কথায় বাজার নিয়ন্ত্রন করে ফেলবে এমনটা তাদের কেউ বলছেনা। কিন্তু বাজারের কারসাজি কি সরকার নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছে? একটা পণ্যের বার্ষিক কত চাহিদা, উংপাদন কতটা হয়, বাকিটা কিভাবে আসবে সেটাতো আগাম পরিকল্পনা করা সম্ভব। সরকারের এত মন্ত্রী এত কর্মকর্তা! শাসকদলের এত নেতাকর্মী! কোথাও কথা একটাও মাটিতে পড়তে
পারেনা! কিন্তু কার গাফিলতিতে কোথায় একেকবার বারবার দেশের মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছেন। তা কি সরকার কোথাও একবারও টের পায়নি? তাদের কোন একজনকে কি একটিবারের জন্যে জবাবদিহি করানো হয়েছে? বিরোধীদল কিছু করতে পারেনা, কিছু করতে পারেনি, তারা অথর্ব কথা সত্য। কিন্তু বাজার দূর্বিপাকে সরকার কোথায় কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এর প্রমান দেবেনতো! কখন কাকে কত টাকা ভাতা দিয়েছেন গর্ব করে বলেন! কিন্তু ভাতার টাকার কতগুন আবার পকেট কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এটা কি স্বীকার করা হবে?
জ্বালানি তেলের দাম যেটা বাড়ানো হলো, আমরা যারা বিদেশে থাকি তারা জানি এটা বিদেশের জন্যে কোন দামই নয়। কিন্তু বাড়ানোর পদ্ধতিটা বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্যে আত্মঘাতী। বাংলাদেশের মানুষ এটা সহ্য করতে পারেনা। এতে তাদের পকেট আরও বেশি কাটা যাবে। বাংলাদেশের তেলের বাজারটাই আজ পর্যন্ত বুঝলামনা। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী যখন তেলের বাজার চড়া তখন তেলের দাম বাড়ানো হলোনা! বাজার যখন পড়তির দিকে তখন বাড়ানো হলো দাম! এর পিছনে কার লাভ কার ক্ষতি বা কার কারসাজি তা একটি রাজনৈতিক সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে আলাপই করলোনা!
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আবার আপনার কথায় আসি, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই দেশের মানুষ কিছু পায়। কিন্তু এমন এলোমেলো সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছে কিভাবে নিচ্ছে কেন নিচ্ছে এসব যদি দেশের মানুষের সামনে স্পষ্ট করতে না পারেন, ফলাফল যে শূন্য হয়ে যায়! এই যে সেদিন বললেন আপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মানে নাগিনীরা ফেলছে নিঃশ্বাস! কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রের পথ যদি তৈরি করে দেয়া হয়, এটা কার দোষ? মানুষকে পক্ষে রাখতে পারলেইতো ষড়যন্ত্রকারীরা কামিয়াব হতে পারবেনা। মানুষকে যে বিপক্ষে ঠেলে দেয়া হচ্ছে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী।