গত ১৮ মার্চ ক্যাসুলা পাওয়ারহাউস আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৭ সালে গড়ে উঠা ফারিয়া নাজিমের “ভবের হাট” নামে পরিচিত বাংলাদেশী লোকসংগীতের দলের সপ্তম পরিবেশনা। করোনাকালীন সময়েও ঘরোয়া পরিবেশে ভবের হাট অনুষ্ঠান করে ঘরে আটকে থাকা মানুষদের বিনোদন দিয়েছিল । রং ,পরিবেশ , গান এবং নৃত্য , অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা , শব্দের নিয়ন্ত্রণ , অডিঅটোরিয়ামের পরিবেশ এবং ঘড়ির কাটা ধরে অনুষ্ঠান চালানো এই সব কিছুই ছিল। দর্শকরা পিন-পতন নীরবতায় উপভোগ করেনা অনুষ্ঠানটি। কোন বাঙালিয়ানা অনুষ্ঠানে এই সবগুলো একসাথে কম মিলে। দর্শক কানায় কানায় পূর্ন ছিল এবং অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত ছিল দর্শক পূর্ন।
ভবের হাট সিজন সেভেন অনুষ্ঠানটির শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়।
এর পর পরই তানিম হায়াত খান রাজিতের ক্ল্যাসিক্যাল সরোদের মূর্ছনায় শুরু হয়। সিডনির তিন গুণী শিল্পীকে ভবের হাতের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট , ফুলের তোড়া ও উত্তরণী তুলে দেন কমিউনিটির ব্যক্তিত্ত্ব ,বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ড. রফিকুল ইসলাম। যে তিনজন শিল্পীকে সম্মানিত করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন সিডনির প্রতিষ্ঠিত নৃত্য শিল্পী ও নাচের শিক্ষক অর্পিতা সোম চেীধুরীকে,সিডনির আরেক গুণী শিল্পী বিশিষ্ট সরোদ বাদক, গীতিকার ও সুরকার তানিম হায়াত খান রাজিত এবং তৃতীয়জন হলেন অষ্ট্রেলিয়ার স্বনামধন্য বিশিষ্ট তবলা বাদক রাসেদুল কবীর সুইটি। সম্মাননা পেয়ে ,রাসেদুল কবীর সুইটি আবেগ আপ্লুত হয়ে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন , ‘আমি বহুদিন বহু অনুষ্ঠান করেছি , কিন্তু আজকে সম্মানিত বোধ করছি, তাই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। ‘ ভবের হাটকে কৃতজ্ঞতা জানান তিন গুণী শিল্পী।
দুইটি মন মাতানো নৃত্য পরিবেশনা করেন অর্পিতা সোম ও তার দলের অন্যতম সদস্য হেনা, শীতল, পরশী, নীড় এবং সারিতা। দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল উপস্থিত শিল্পীদের গানের সাথে সাথে নৃত্য পরিবেশন যা কিনা এর আগে কম দেখা গিয়েছে সিডনিতে।
শাকিল চৌধুরীর উপস্থাপনা ছিল চমৎকার। প্রতিটা পর্বের আগে শাকিল তুলে ধরেন বাংলার লোক সঙ্গীতের ইতিহাস , লালনদের গল্প, বাউলদের কথা , হাসান রাজা , গগন হরকরা, শাহ আব্দুল করিমের কথা এবং বাংলা লোকগীতির ভান্ডার সমৃদ্ধ করার ইতিহাস। ছোট ছোট তথ্য দিয়ে শাকিল প্রতিটা গানের আগে এমনভাবে তুলে ধরেন অনেক অজানা তথ্য।
গান পরিবেশন করেন, বনফুল বড়ুয়া, রুহুল আমিন, জাওয়াদ হাসান, লামিয়া আহমেদ ও ভবের হাটের কর্ণধার ফারিয়া আহমেদ। যন্ত্রীদের মধ্যে তবলায় বিজয় সাহা, গিটারে সোহেল খান, অক্টোপ্যাডে আলী কাওসার. দোতারায় ফয়সাল সজীব, কী-বোর্ডে নিলাদ্রী চক্রবর্তী, গিটারে বনফুল। সাউন্ড নিয়ন্ত্রন করেন, টমাস ও রহমান। স্টীল ফটোগ্রাফীতে ছিলেন কবিরুল ইসলাম এবং ভিডিওতে আনিসুর রহমান। মঞ্চসজ্জা ও প্রজেক্টর পরিচালনায় ছিলেন জাকী খন্দকার ও সুমন কবীর।
সবশেষে, সকল সুধী দর্শক, আগত অতিথি, সন্মানিত স্পন্সর ও সকল শিল্পী কলাকুশলীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ভবের হাট অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও পরিচালনায় থাকা ফারিয়া আহমেদ। আগামী বছর ভবের হাট সিজন এইটে বাংলার মাটি ও মানুষের গানের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তী টানেন।