বিএসপিসি’র রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জন্মজয়ন্তী উদযাপিত

বিএসপিসি’র রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জন্মজয়ন্তী উদযাপিত

নির্মল চক্ৰৱৰ্তী: বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আমাদের নুউত্তরসূরিদের মাঝে পৌঁছে দিতে গত ২৭বৎসর ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটি পূজা ও সংস্কৃতি। তাঁরই ধারাবাহিকতায় গত সন্ধ্যায় ব্ল্যাকটাউন সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। সন্ধ্যে ঠিক ছটায় শুরু হয়ে মাঝে মাত্র কুড়ি মিনিটের বিরতি দিয়ে একটানা রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠানে হল ভর্তি উপচে পড়া দর্শক মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে তাদের ভালোলাগা, ভালোবাসার অনুভূতি।

বাংলাদেশ সোসাইটি পূজা ও সংস্কৃতির গর্ব তাদের বাংলা স্কুল। বিদেশের মাটিতে নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে, গান গাইতে ও বাংলা গানের সাথে নাচের পারদর্শিতার জন্যে প্রতি রোববার বিকেল চারটা থেকে বসে আমাদের ছোট্ট সোনামনিদের কলকাকলিতে মুখরিত এই স্কুল। বাংলা স্কুলের ছোট্ট সোনামনিরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “মেঘের কোলে রোদ হেসেছে” আবৃত্তির মাধ্যমে উদ্বোধন করে এই অনুষ্ঠানের। নীল পরীর মতো পোশাকে কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশন করে আমাদের কচি-কাচারা দর্শকদের মন জয় করে নেয় মুহূর্তেই। ছ’বছরের নিচের বাচ্চাদের বাংলা ভাষার শিক্ষক শর্মিষ্ঠা বৌদির অনুষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি বাংলা গানের শিক্ষক লারিনা নুপুর রোজারিও বাচ্চাদের সাথে থেকে তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার পাশাপাশি সাহায্য করেন গান ও নাচ পরিবেশনে। ঠিক তার পরপরই দশ বৎসরের নিচের এবং তার থেকে একটু বড় মেয়েদের দু দুটো অনবদ্য নাচ। তাঁদের নাচের তাল, লয়, সুর এবং নাচের ছন্দ-গতিতে বিমোহিত হয়ে পড়েন হল ভর্তি দর্শক শ্রোতা। নাচের শিক্ষিকা শ্রেয়সী দাস এবং প্রজ্ঞা কর্মকারের তত্ত্বাবধানে আমাদের মেয়েদের নাচের জন্যে যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর ভালোবাসা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন দর্শক-শ্রোতা। বিএসপিসির বাংলা স্কুলের অধ্যক্ষা শ্রীমতি সুস্মিতা জেমি সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পরপরই ধন্যবাদের পালা ছিল বিএসপিসির সভাপতি শ্রী রথীন্দ্রনাথ ঢালী ও সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতি রানী মন্ডলের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পালা। আর এই ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে শেষ বিএসপিসির বাংলা স্কুলের পরিবেশনা।

শুধু বাংলা স্কুলের ছেলেমেয়েদের কথাই বা কেন বলবো। বাংলা স্কুলের বাবা মায়েদের রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তের কবিতা ও গানের যুগলবন্দী ছিল দর্শকদের জন্যে একটা বাড়তি কিছু। এ পর্বের পরিচালনা করেন শ্রীমতি সুমিতা দে, তবলায় সহযোগিতা করেন শ্রী দেবাশীষ দত্ত ও কিবোর্ডে নীলাদ্রি চক্রবর্তী। ঠিক তার পরপরই ছিল “গুণীজন সম্বর্ধনা”। সিডনির প্রথিতযশা শিল্পী ও কিংবদন্তি পুরুষ সিরাজুল সালেকীনকে বিএসপিসির পক্ষ থেকে দেয়া হয় এ সম্মাননা। শিল্পীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দিয়ে সোসাইটির সদস্য শ্রী মৃনাল দে বলেন “শিল্পী সিরাজুল সালেকীনকে সম্মাননা দিতে পেরে আসলে সম্মানিত হয়েছে বিএসপিসি”। এ পর্বের পরিচালনা করেন বিএসপিসির সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা শ্রীমতি দেবযানী রায় চৌধুরী ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএসপিসির বর্তমান সভাপতি শ্রী রথীন্দ্রনাথ ঢালী।
নজরুল পর্ব নিয়ে ফিরে আসেন সোসাইটির বাবা মায়েরা। নজরুলের কালজয়ী গান “কারার ওই লৌহ কপাট” ও “আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে” গান ও বৃন্দ আবৃত্তির সংমিশ্রনে এই পর্ব ছিল ঠাসবুনোটে গাঁথা। বিএসপিসির সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা শ্রীমতি দেবযানী রায় চৌধুরীর সুললিত উপস্থাপনায় ও কিবোর্ডে নীলাদ্রি চক্রবর্তী ও তবলায় শ্রী দেবাশীষ দত্তের সঙ্গত এই পর্বকে করে তোলে মোহনীয়। এই পর্বের পর কুড়ি মিনিটের ছোট্ট বিরতিতে দর্শক-শ্রোতাদের পরিবেশন করা হয় রাতের খাবার।
ছোট্ট বিরতির পর মঞ্চ আলোকিত করতে মঞ্চে ওঠেন সিডনির প্রথিতযশা সংগঠন প্রতীতির শিল্পীবৃন্দ। সিরাজুল সালেকীনের পরিচালনায় ও শান্তুনু করের তবলা সঙ্গতে প্রতীতির শিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটো গান, নজরুলের একটি ও কবিকিশোর সুকান্ত ভট্টাচার্যের দুটো গান। প্রতীতির শিল্পীবৃন্দের সুললিত ও সুসৃঙ্খল গান মুগ্ধ করে রাখে হল ভর্তি দর্শক শ্রোতাকে।

সবশেষে ছিল “কলাঙ্কন” নৃত্য একাডেমির কর্ণধার অমৃতা পাল চৌধুরীর সুযোগ্য পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শ্যামা” গীতিনাট্যের অংশবিশেষ নিয়ে এক অনবদ্দ পরিবেশনা। শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলের মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে নৃত্য কলাকুশলী বৃন্দের নাচ আবারো বিমূর্ত্য আমেজে আপ্লুত করে রাখে দর্শক শ্রোতাকে। বিএসপিসির সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা দেবযানী রায়ের সুশৃঙ্খল ধারাবর্ণনা, বিএসপিসির এ অনুষ্ঠানকে নিয়ে গিয়েছিলো এক উচ্চমাত্রায়। সবশেষে বিএসপিসির বর্তমান সভাপতি শ্রী রথীন্দ্রনাথ ঢালী ও সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতি রানী মন্ডলের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয় বিএসপিসির এ বছরের রবীন্দ্র-নজরুলসুকান্ত জন্মজয়ন্তীর এ মহাযজ্ঞ।