গত ২৭শে মে, শনিবার ২০২৩ সন্ধ্যায় সিডনির ইঙ্গেলবার্নের গ্রেগ পার্সিভাল কমিউনিটি সেন্টার হলে ‘ফিরে চল মাটির টানে শ্লোগানে’ পালিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশের ৫২ তম স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষ ১৪৩০ বরণ অনুষ্ঠান।
কানায় কানায় পূর্ন ছিল হলটি। হলের প্রবেশের পরপরই অভ্যর্থনা জানানো হয় সিঙ্গারা , মিষ্টি ও সাথে চা/কফি দিয়ে। সবাই আড্ডায় মেতে উঠে করিডোরে। দেখেই মনে হবে এই যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সির আড্ডা। পুরানো দিনের বন্ধুদের নিয়ে গল্প ও আড্ডার জন্য চমৎকার একটি পরিবেশ ছিল। এই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার অনুষ্ঠান নিয়ে ঘোষণা আগাম ঘোষণা দেয় হলের ধারণ ক্ষমতা পূর্ন হয়ে যাবার। অনুষ্ঠান চলাকালীন হলটি কানায় কানায় পূর্ন ছিল। এলামনাই এসোসিয়েশনেই অনেকেই মন্তব্য করেন ,” এলামনাই এসোসিয়েশনেই পরবর্তী অনুষ্ঠানের ভেন্যু অবশ্যই অনেক বড় আকারে নেয়া প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত সমস্বরে গেয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। মাতৃভূমির জন্য যারা জীবন উৎসর্গকরেছেন, তাঁদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাইদের উদ্দেশ্যে যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া ও অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলেন জাহিদ মাহমুদ ও লিঙ্কন শফিউল্লাহ।
এরপরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ অনুষ্ঠানের ঊদ্বোধনী বক্তৃতায় তুলে ধরেন মহান ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে। তিনি বলেন ,”বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লেখা গৌরবোজ্জ্বল দিনটি হলো আমাদের স্বাধীনতা দিবস ।১৯৭১ ২৬ মার্চে স্বাধীনতা দিবস থেকে ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে যারা তাদের আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। কত শত মায়ের অশ্রু, বোনের সম্ভ্রম ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীনতা। রাজাকার – আলবদররা হত্যা করেছে বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্র, শিক্ষক,কর্মচারী।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সরাসরি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে লিখা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন গর্বের মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। ”
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (সাবেক) জনাব মোস্তফা আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, “আমার বেশ ভালো লাগছে দেখে কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া যা এখন আমাদের সমস্ত এলামনাইর প্রাণ। আর এই সংগঠনের আরও সাফল্য কামনা করি সর্বদা। ”
অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিডনিস্থ কনসুলেট প্রধান মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন। তিনি বলেন ,”আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমারই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এলামনাই হিসেবে আজকে আসতে পেরে। এইখানে রয়েছে আমার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিমাখা শ্রদ্ধেয় বড় ভাই বোনেরা , আছে আমার বন্ধুরা এবং ছোট ভাই ও বোনেরা। মনে হচ্ছে আমি আবার সেই দিনগুলোতে ফিরে এসেছি। ”
সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনায় এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সিরাজুস সালেকিন উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ দেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানান।
সাংস্কৃতিক পর্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার করেন নুসরাত জাহান স্মৃতি। এই পর্ব ছিল দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এর সন্তানদের নিয়ে একটি পর্ব যেখানে ছিল গান , নাচ ও ফ্যাশন শো। অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা প্রজন্মদের এই পর্বটি সকলকে মাতিয়ে রাখে। গানে গায় সাফিনা জামান নাচে অংশ নেয় তাশফিয়া শফিক ঈশিকা , তারা হুদা ও সাফিনা জামান এবং ফ্যাশন শোতে অংশ নেয় ইশান বিশ্বাস,নিয়ন আহমেদ,সৈয়দ তাইসির আলম,প্রান্তিক হক ,প্রতীক হক,ফারহান শফিক প্রিয়,পূর্বা ,সুমাইয়া রাফা,নাফিয়া নাঈম,মিলি ইসলাম ও রফিক ইসলাম। আর এই পর্বটি সুন্দর করতে কাজ করেছেন নুসরাত হুদা কান্তা , নার্গিস বানু ও সাকিনা আক্তার।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল এলামনাই পরিবারের সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন হায়াৎ মামুদ , মাফরুহা আলম ,পলি ফরহাদ , সিন্থিয়া রহমান , শহিদুল আলম বাদল এবং সংগীত পরিবেশনায় তামিমা শাহরীন,শরিফা সুলতানা মুন্নী,নভেরা নুসরাত ইলোরা,সাব্বির বিন শহিদ,মাসুদ মিথুন ও শুভ্রা মুস্তারিন। নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন অর্পিতা সোম চৌধুরী।
সাংস্কৃতিক পর্বের পরে এলামনাই এর পরিচালনা পরিষদের উপস্থিত সকল সদস্যদের ধন্যবাদ দেন এবং পরিচয় করিয়ে দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক বাদল। সবশেষে রাতের খাবারের নিমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সার্বিক সহায়তা ছিলেন খাইরুল হক চৌধুরী ,মোঃ হালিমুস্সান , মোঃ হাদী , রফিক উদ্দিন , গোলাম মাওলা , সেলিম মমতাজ ,তানিয়া ফারজানা সহ অনেকেই। অনুষ্ঠানের শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মাহাদী ও আত্ত্বাবুর রহমান আর তবলায় সহায়তা করেন বিজয় সাহা।