গত ২৩ জুন রবিবার সিডনির গ্লেনউড হাবে এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসনের ইতিকথার উপর মোট ৩৪ টি বাস্তব জীবনের গল্প দিয়ে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে ৩২ জন লিখেছেন যার যার অস্ট্রেলিয়ার দিনগুলো।
OUR STORY” নামক গ্রন্থটি মূলত আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্যই সম্পাদিত। সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেছেন মোস্তফা আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রাজ্জাক।বইটির প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচনঅনুষ্ঠান এর সমুদয় অর্থায়ন করেছে “Bangladeshi group of the Keeping in Contact (KIC) program supported by STARTTS and Funded by WentWest, Western Sydney Primary Health Network”.
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সম্পাদক মোস্তফা আব্দুল্লাহ বলেন ,”যে আমাদের সবার জীবনেরই এক একটা গল্প আছে। আমাদের জীবনের গল্প। অনেকের কাছে এটি একটি নতুন দেশে এসে সে দেশ টিকে নিজেরই দেশ বলে মানিয়ে নেয়ার গল্প। নিজ দেশ থেকে বহু দুরে – তার পরও আজও তো সেটা নিজেরই দেশ। এমনি কিছু দেশান্তরীদের নূতন দেশে থিতু হওয়ার গল্প কাহিনী নিয়ে সংকলিত হয়েছে “OUR STORY” নামক গ্রন্থটি।”
ক্যান্সার কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া, সিডনি চিলড্রেন হাসপাতাল এবং অন্যান্য চ্যারিটি কাজের জন্য সিডনির বুকে অতি পরিচিত প্রয়াত ড. আবদুল হকের দৌহিত্র জাকি আব্দুল হক (১১) উপস্থিত লেখকদের উদ্দেশ্যে চমৎকার বলে ,”আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই জন্য , যে এই বইটিতে অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের প্রজন্মের জন্য একটি দলিল তৈরী করেছেন ,যেখানে রয়েছে আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্ট্রেলিয়াতে থিতু হবার সময়ের সুখ, দুঃখ , হাসি, কান্না এবং সবশেষে এগিয়ে যাবার গল্পগুলো। আমি মনে করি এই বইটা আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রত্যেকেই হয়তো এই বইটি তাদের ঘরে একটি কপি রাখবে। ” জাকি আব্দুল হক, উপস্থিত লেখকদেরকে “OUR STORY বইটি তুলে দেয়।
বইটির আরেক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন , ” আমরা বাংলাদেশীদের অস্ট্রেলিয়ায় অবিভাসনের হাজারো জীবনের গল্প থেকে মাত্র কিছু গল্প দিয়ে শুরু করলাম,আগামীতে যেন এই যাত্রা অব্যাহত থাকে। আমরা আশা করি এই ধরণের প্রকাশনা অব্যাহত থাকুক।”
অতিথি বৃন্দের মধ্যে কাউন্সিলর সাবরিন ফারুকী বলেন,”আমরা যখন পরিচিত হয়ে যাই , আমরা শুধু সেই রঙ্গীন দিকটাই দেখি অথচ প্রতিটা সাফল্যের পিছনে শত শত ব্যর্থতার গল্প রয়েছে সেইগুলো আমরা জানিনা। আমি নিজে , অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম যখন চাকুরীর জন্য দরখাস্ত করতে থাকি, তখন চাকুরীর দরখাস্তের বিপরীতে হয় না-বোধক উত্তর অথবা কোন উত্তরই আসতো না , ইন্টারভিউতে ডাকা তো দূরের কথা। অথচ আমার যোগ্যতায় বাংলাদেশে অনেক বড় চাকুরীর সুযোগ ছিল এবং এই দেশেও আছে। এইটা মাত্র একটা গল্প , এই রকম অনেক অনেক গল্প দিয়েই আমাদের অস্ট্রেলিয়াতে আমরা থিতু হয়েছি। “OUR STORY বইটি প্রকাশনার এই মহান দায়িত্ব পালন করার জন্য সম্পাদক ও লেখকদের অভিবাদন জানাই। ”
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ড শেষ মুহূর্তে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হয়ে পরায় উপস্থিত থাকতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করে ও অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করে একটি বার্তা পাঠান, যা কিনা অতিথি বৃন্দের জন্য সম্প্রচার করা হয়। উপস্থিত ছিলেন KIC, STARTTS ও WentWest এর কর্মকর্তা বৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নানাবিধ পেশার অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশীরা।
উপস্থিত অতিথিবৃন্দের কাছে বইটির বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সবাই এই মহতী উদ্যোগটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনেকেই বইটির বেশ কিছু সংখ্যা সংগ্রহ করে নিয়ে যান নিজের জন্য ও নূতন প্রজন্মের আত্মীয় সজন ও বন্ধু বান্ধব দের সন্তান সন্তানাদিদের উপহার দেয়ার উদ্দেশে। নিসন্ধেহে বইটি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস রত প্রতিটি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পরিবারের বুক-সেলফে স্থান করে নেয়ার যোগ্য দাবি দার।
এ ধরনের প্রচেষ্টা এই অস্ট্রেলিয়াতে এটাই প্রথম এবং অনেকেরই ধারনা ও আশাবাদ যে, এই প্রকাশনাটির ওপর ভিত্তি করে আগামীতে আরও অনেকেই এগিয়ে আসবে এই ধরনের ইতিহাস সমৃদ্ধ আরও সঙ্কলন প্রকাশের উদ্দেশে। ৩২৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত বইটির মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৩০ ডলার। তবে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সন্মানারথে কেবল মাত্র সেদিনের জন্য ২০ ডলার নির্ধারণ করা হয়।
বইটিতে যারা গল্প লিখেছেন ফখরুদ্দিন চৌধুরী , মেহমুদ খান , ড. ফজলুল হক , ফারুক চৌধুরী, পুশকিন রাহমান , মোহাম্মদ আলমগীর , সালাউদ্দিন আহমেদ, মোস্তফা আবদুল্লাহ , আব্দুল কাদের গামা , ম আদিল খান , ড. এ এ রহমান , আজাদ আলম ,তাজিন আবদুল্লাহ , সৈয়দ তৌফিক ইমাম , ম সিরাজুল ইসলাম , মমতা বি চৌধুরী , ড.আব্বাস ভূঁইয়া , আতিয়া নাসরিন গনি , ডাঃ এন জেসি চৌধুরী , আনিসুর রহমান , মামুনুর রশীদ , ড. এম এ রাজ্জাক , শিল্পী রহমান , লরেন্স ব্যারেল, ড. নূর রহমান , ড.রফিউল আলম , নির্মল পাল, ডঃ তানভীর আহমেদ , ড. স্বপন পাল , সুতপা বড়ুয়া , ফারুক কাদের।