ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন: গতকাল ২৫ আগস্ট, রবিবার সিডনীর রকডেলে রেড রোজ ফাংশন সেন্টারে সম্মিলিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ড. সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে ও আনিসুর রহমান রিতুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শুরুতেই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে পচাত্তরের পনেরোই আগস্টে শাহাদাতবরণকারী সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। সভায় শাহাদাতবরণকারী সকলের আত্মার শান্তি কামনা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আলম হিরো দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ পচাত্তরের পনোরোই আগস্টে শাহাদাতবরণকারী সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আলোচকরা তাদের বক্তৃতায় বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
সভায় গত পাঁচই আগস্ট অস্ত্রের মুখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করানোর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বক্তারা বর্তমানের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা কামনা করেন।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ তুলে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। সাধারণ ছাত্র-জনতার আবেগকে পুঁজি করে জামাত-হেফাজত-বিএনপি ক্ষমতায় যাবার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে আজ অস্থিতিশীল করে তুলছে। মার্কিন তাবেদার ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালিন যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে, তা বাংলাদেশের সংবিধানের চরম লঙ্ঘন। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে চরম নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তীকালিন সরকার, ছাত্র নেতৃবৃন্দ না জামাত-বিএনপি, দেশটা আজ চালাচ্ছে কারা? কোথাও কোনকিছুর উপর যেন কারো নিয়ন্ত্রণ নাই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন চলছে। গত এক মাসে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের হাতে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী হতাহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ নিরাপরাধ অনেকের বিরূদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে আইনের শাসনের ব্যাপারটাকে হাস্যকর করে তোলা হয়েছে। আদালতও আজ আর নিরাপদ নাই। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের উপরে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হচ্ছে। বৈষম্যহীণ সমাজ ব্যবস্থা গড়বার কথা বলে তারা যে বৈষম্যের সুত্রপাত করেছে, তা রুখে দিতে না পারলে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বাক স্বাধীনতার কথা বলে তারা আজ মিডিয়ার কণ্ঠ রূদ্ধ করে রেখেছে। মিডিয়ায় বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
পর্যাপ্ত পূর্বাভাস ও সতর্কতা থাকা সত্বেও বন্যার্তদের রক্ষায় বর্তমান সরকার প্রাথমিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারপরও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বক্তারা আহ্বান জানান। অস্ট্রেলিয়াস্থ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে গঠিত ত্রাণ তহবিলে দলের কর্মী-সমর্থকদের অনুদান প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
সভায় বক্তারা আত্মসমালোচনা করে আশা প্রকাশ করেন, অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অচিরেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়াবে। হামলা-মিথ্যে মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগকে দাবায়ে রাখা যাবে না। বাংলার মানুষের সমর্থনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, ডা. লাভলী রহমান, ড. কাইয়ুম পারভেজ, ড. নিজাম উদ্দিন, আব্দুল জলিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েতুর রহিম বেলাল, ড. মাসুদুল হক, গাউসুল আলম শাহজাদা, মোস্তাক মিরাজ, সেলিমা বেগম, নির্মাল্য তালুকদার, নোমান শামিম, ড. মাহবুব আলম প্রদীপ, ড. সাখাওয়াৎ নয়ন, হারুনুর রশীদ, শাহরিয়ার পাভেল, ইমরুল কায়েস, শামীম সরদার, হেলালউদ্দিন, মুঈদুজ্জামান সুজন, প্রমুখ।