কোন শিশু যখন প্রথম পা ফেলে হাঁটতে শুরু করে তখন তাঁকে দেখে মনে হয় না যে সেও একদিন আপন শক্তিতে দৃঢ় পদক্ষেপে হেঁটে বেড়াবে এই চরাচরে। আজ থেকে ছয় বছর আগে সিডনীতে “ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া “ নামের যে সংগঠনটির জন্ম হয়েছিল হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ সে সাত বছরে পা রেখেছে। এই পথ চলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব কর্মদ্যোগি প্রাক্তন ছাত্ররা তাঁদের সময় এবং শ্রম দিয়ে এই সংগঠনটিকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছেন তাঁরা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখেন।গত ৯ই আগষ্ট রোববার ২০১৫, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন অষ্ট্রেলিয়া(DUAAA) সারম্বরে উদযাপন করে তাঁর ষষ্টতম বার্ষিক পুনর্মিলনী ও সাধারণ সভা। সিডনীর ম্যাকুয়ারিফিল্ডসের ম্যাকআর্থার এডভেন্টিস্ট কলেজের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই মহতি সন্মিলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েকে যার ভালোবাসেন, যারা তাঁদের ছাত্র জীবনে ফেলে আসা দিনের কথা মনে করে নষ্টালজিয়াতে ভোগেন সেই সব প্রাক্তন ছাত্র ছত্রীরা সিডনী, ক্যানবেরা, মেলবর্ন, এডিলেইড থেকে শত কাজের মাঝেও ছুটে আসেন এই দিনটিতে উপস্থিত থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই সময়কে ফিরে পাবার জন্যে।
এবারের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের মূল সংগঠন “ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন”এর বর্তমান সভাপতি জনাব রকিবুদ্দিন আহমেদ। সন্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬১ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ও পরে শিক্ষক, বর্তমানে সিডনীতে বসবাসরত ডঃ মোখলেসুর রহমান।
এই অনুষ্ঠানটি ছিল কয়েকটি পর্বে বিভক্ত। দুপুর সাড়ে বারটায় সংগঠনের সভাপতি জনাব মোস্তফা আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভা। সভাপতি তাঁর বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। সাধারণ সম্পাদক জনাব আনিস মজুমদার পূর্ববর্তি সধারন সভার মিনিটস, ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং কোষাধ্যক্ষ জনাব কামরুল ইসলাম বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পেশ করেন। সাধারণ সদস্যরা সবগুলো প্রস্তাবই অনুমোদন করেন। জনাব আনিস মজুমদার “ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন অষ্ট্রেলিয়া”-র কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন।
এরপর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় সালেহ আহমেদ ও সেলিমা বেগমের সাবলীল উপস্থাপনায়। জনাব আনিস মজুমদার স্বাগত ভাষণে উপস্থিত সবাইকে অনুষ্ঠানে স্বাগতম জানান এবং সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি জানান বার্ষিক পুনর্মিলনী ছাড়াও ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া গত তিন বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন মেধাবী ছাত্র ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করে আসছে এবং প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারীতে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করছে আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস। প্রধান অতিথির ভাষনে জনাব রকিবুদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন ভূমিকা এবং এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্তন ছাত্র হিসাবে এর প্রতি সবার দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় আনেক কিছু দিয়েছে এখন সময় এসেছে দায় মোচনের। তিনি সবাইকে ২রা জানুয়ারি ২০১৬, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পচানব্বুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত “হিরণ্ময় মেলবন্ধনে” অংশগ্রহণের আমন্ত্রন জানান। সন্মানিত অতিথির ভাষনে ডঃ মোখলেসুর রহমান তার সময়ের স্মৃতিচারন করেন। তিনি বলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিচ্ছে আজকের বাংলাদেশকে, তাই সকল দল মতের উর্ধে উঠে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সভাপতির ভাষনে জনাব মোস্তফা আব্দুল্লাহ বলেন এই সংগঠনের মাধ্যমে সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে এবং মাতৃভুমির জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব হবে। তিনি অনুষ্ঠান সফল করে তোলার জন্য যারা শ্রম দিয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানান। এরপর সদস্য এবং অতিথিদেরকে মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রন জানানো হয়।
এরি মাঝে চলতে থাকে স্মৃতিচারণ পর্ব। সেই সব দিনের কথা বলতে যেয়ে সবাই হয়ে উঠেন আবেগপ্রবণ। এত স্মৃতি, এত কথা, এত ঘটনা অল্প সময়ে বলতে যেয়ে কোন কথাই যেন আর ভালো করে বলা হয়ে উঠেনা। কেউ স্মৃতির অতলে খুঁজে বেড়ান সেই সব হারিয়ে যাওয়া মুখ আবার কেউ এখানেই খুঁজে পান তিরিশ চল্লিশ বছর দেখা না হওয়া বন্ধুকে।
পরবর্তী পর্বে ছিল ট্রিভিয়া কম্পিটিশন। এই পর্বটির পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন নাফিজা চৌধুরী মিনি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে সাজানো হয় এর প্রশ্নমালা। এই প্রতিযোগীতায় তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরষ্কারপ্রাপ্তরা তাদের প্রাইজ মানি সংগঠনের ছাত্র বৃত্তি তহবিলে দান করেন। মিনির প্রানবন্ত উপস্থাপনায় এবং সবার সক্রিয় অংশগ্রহনে অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে উপভোগ্য।
এরপর শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পর্বের স্বনামধন্য গায়ক গায়িকা পলাশ, শুভ্রা ও মাসুদ এই বিশ্ববিদ্যালয়রই ছাত্র। তাঁরা তাদের সুরের মায়াজালে মুগ্ধ করে রাখেন সব শ্রোতাদের।পুরানো দিনের সেই সব গান শুনতে শুনতে সবাই যেন ফিরে পান হারিয়ে যাওয়া সেই সময়কে। শ্রোতাদের অনূ রোধের অনেক গান গাওয়ার পরও যেন সবার রয়ে গেল অতৃপ্তি। সব শেষে ছিল র্যাফেল ড্র। এতে তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রাক্তন ছাত্রদের এই মিলন মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারো প্রকাশিত হয় বর্নাঢ্য সংকলন “নানান রঙয়ের দিন গুলি” এবং সবাইকে দেয়া হয় ঢাকা “ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়াশন অস্ট্রেলিয়া”র মনোগ্রাম সম্বলিত ক্রেস্ট ।
এক সময় শেষ হয় নানান রঙে রঙিন সেই দিনগুলোতে উড়ে বেড়ানো। ডানা গুটিয়ে আবার অপেক্ষার পালা আগামী বছরে উড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
——————–(কামরুল মান্নান আকাশ )