বাড়িটার নাম ছিল “Sea & See”. একটা হলিডে হোম, আলবেনীতে।গত লং উইক এন্ডটা আমরা কাটিয়েছিলাম এখানে। মিডলটন বীচ থেকে খুব কাছে, উঁচু টিলার উপর। সমুদ্র আর সৈকতের থিম মাথায় রেখেই সাজানো পুরো বাসার ইন্টেরিয়র।দেয়াল জুড়ে বিশাল সব পেইটিং এও নীলজল, ঢেউ, ঝিনুক আর তারামাছের আধিপত্য। কিন্তু বাসাটার আসল সৌন্দর্য ছিল অন্য জায়গায় – মাস্টার বেডের জানালাটা।সে এক জাদুকরী জানালা!
ঘরের দুদিকের পুরো দেয়াল জুড়েই কাঁচের বিশাল জানালা।বেডরুমের দরজা খুলেই আমি যেন থমকে দাঁড়ালাম! জাদুর মায়ায় আটকে গেলাম প্রথম দেখাতেই!পায়ের কাছে সবুজ ঘাসের পরিপাটি লন থেকে আমার দৃষ্টি ল্যাভেন্ডারের ঝোপ ফেলে দূরে – আরও দূরে – লেকের কোল ঘেঁষে সবুজ পাহাড়ের সারিতে গিয়ে ঠেকল। সেই পাহাড়ের বুকেও বাংলো, বসতির চিহ্ন! শেষ বিকেলের মলিন আকাশের গায়ে যেন হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে পাহাড়গুলো।আটকে রাখা নি:শ্বাসটা সংগোপনে জানান দিল নিজের বিস্ময়! ব্রেথটেকিং ভিউ ১৮০ ডিগ্রী অ্যাংগেল থেকে দেখলে যা হয় আরকি! আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম, নাকি মুগ্ধতা আমায় পেয়ে বসল?
সেরাতে ঘুমিয়েছিলাম খুব ক্লান্ত হয়ে, সারাদিনের পথের ক্লান্তি। নরম বালিশের মাঝে ডুবে যেতে যেতে বারবার মনে হচ্ছিল আমি যেন শুয়ে আছি এক কাঁচের ঘরে! ঐ পাহাড় আর আকাশ দুচোখ ভরে দেখছে আমায়! এই রক্ত-মাংসের শরীর ধূলোয় মিশে আমি যেন শুকনো এক ঝরা পাতা – পাখির নরম পালক! ভেসে বেড়াচ্ছি বাতাসে বাতাসে। শুধুমাত্র অনুভূতি ছাড়া আর কোন অস্তিত্বই নাই আমার! প্রকৃতির সাথে মিশে যাবার যে অপার সুখ তা আমি ছুঁয়ে দেখেছি, বন্ধু! শিরায় উপশিরায় উপলব্ধি করেছি সেই সুরা!
খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গল পাখির কিচিরমিচিরে। লেপের নীচ থেকে মাথাটা তুলে মনে হল, না বাতাসে না, ধরনীর বুকেই আছি! কিন্তু ঐ যে জানালাটা – ওটা যে আমার নি:শ্বাস কেড়ে নেবে! ভোরের আলো তখনও ফোটেনি পাহাড়ের চূড়োয়। নীলাভ আলোর এক মায়াবী ভোর ঝুলছে জানালার বাইরে! রাতের কুয়াশারা কাঁপা কাঁপা হাতে বিমূর্ত সব ছবি এঁকে গেছে কাঁচের গায়ে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখারও সাহস হয়না আমার, যদি মুছে যায়! যদি মিলিয়ে যায় জাদুর মত!
কতদিন হয়ে গেল ঐ হলিডে কাটানোর পর- কিন্তু সেই মায়া তো কাটল না আজও! ঘুমের ঘোরে কত রাতে মনে হয় ঐ জানালাটা যেন কাছে টানে, ডাকে আমায়! মায়া মায়া! এ জগতের সবই মায়া!