অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় অস্ট্রেলিয়ান বাঙালি ছেলেমেয়েদের কৃতিত্ব

অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় অস্ট্রেলিয়ান বাঙালি ছেলেমেয়েদের কৃতিত্ব

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি পর্যায়ে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি একটু বেশী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কিছু কিছু স্কুলের সাফল্যের মাপকাঠি অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম শ্রেণী থেকেই একটু ভিন্ন ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করে প্রাইমারি স্কুল কতৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী,তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা ইংরেজি, গণিত এবং অন্যান্য বিষয়ে একটু উন্নত মেধার পরিচয় দিতে পারে তাদেরকে নিয়ে একটি ভিন্ন ক্লাস তৈরী করা হয় এবং এই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের তদারকি করতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক নিয়োজিত থাকে। এই বিষয়ে ক্লাসরুমকে বলাহয় মেরিট ক্লাস অথবা এনরিচমেন্ট ক্লাশ ।
এদের বেশিরভাগই অংশ নেয় অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় যা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ শ্রেণীতে থাকা অবস্থায়। এই বছর নিউ সাউথ ওয়েলসে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১ অগাস্ট ২০১৮ সালে এবং ফলাফল আসে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এতে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রীরা প্রতিবারের মত এবারও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখে। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ৭৬টি স্কুল আছে এবং প্রায় ১২ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয় ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে মাত্র ১৮০০ তা ছাত্র-ছাত্রী এই পরীক্ষায় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। তার মানে মোট পরীক্ষার্থীর ১৫% এর নীচে এই সুযোগ পায়।
আমাদের পক্ষে সব ভাগ্যবান মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নাম ও ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

যদি কারো নাম এইখানে যুক্ত করতে চান তাহলে নিম্ন ইমেইলে আপনার সন্তানের নাম , পিত মাতার নাম সহ কোন স্কুলে অফার পেয়েছে জানালে অন্তরভুক্ত করা হবে ।ইমেইল: info@sydneybengalis.com

অস্ট্রেলিয়ান বাঙালি কমিউনিটিতে  ২০১৮ সালের কিছু মধ্যে ভাগ্যবান মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী:
আইমান আহ্ছান (পিতা : মোঃ মাসুম আহসান )পেয়েছে লুমিয়া পাবলিক স্কুলে
রাফান ফারহাত উল্লাহ (পিতা: মোঃ হেদায়েত উল্লা,মাতা:রেহনুমা উম্মেহেনা ) পেয়েছে সেন্ট এন্ড্রু পাবলিক স্কুলে
ইসাদ রহমান (পিতা: সৈয়দ হাসিবুর রহমান , মাতা: নাসরিন সুলতানা ) পেয়েছে হলসঅর্থি পাবলিক স্কুলে
সাহিল হোসেন (পিতা :ফরাস উদ্দিন বুল্বুল, মাতা তানিফা সিদ্দিকী ) পেয়েছে সেন্ট এন্ড্রু পাবলিক স্কুলে .
আর রাফে হোসেন (পিতা: মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসেন , মাতা : শামীমা হোসেন ) পেয়েছে সেন্ট এন্ড্রু পাবলিক স্কুলে
সাফিয়া রিনি রওনাক (পিতা : রওনক ইসলাম, মাতা : শম্পা রওনক ) পেয়েছে কাসুলা পাবলিক স্কুলে
প্রিয়ন্তি রায় ( পিতা: কিংশুক রায় , মাতা :আদিত্য পান্না) পেয়েছে লুমিয়া পাবলিক স্কুলে
গাজী আজওয়াদ হাবিব (পিতা: গাজী হাবিব তপু ,মাতা : নিফ্ফার শায়লা সুহিন) পেয়েছে ব্ল্যাক্সসেল স্ট্রিট পাবলিক স্কুলে
মালিহা তাসনিম ( পিতা: মাহমুদুল হাসান, মাতা : শিউলি পারভীন) পেয়েছে সেন্ট এন্ড্রু পাবলিক স্কুলে

দুই একজন ছাড়া বেশিরভাগ পিতামাতাই বলেছেন তাদের সন্তানের সাফল্যের পিছনে মূলত তাদের মায়ের ভূমিকা এবং সন্তানের একাগ্রতাই কাজ করেছে। এছাড়াও বেশিরভাগ পিতামাতাই বলেছেন, অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য নিজেদের পড়াশুনার পাশাপাশি কোচিং সেন্টার অথবা টিউটোরিংয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে। অবশ্য একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়াতে তারা নতুন এসেছে এবং তাদের ছেলেকে কোন কোচিং সেন্টারে না পাঠিয়ে বরং তারাই ছেলের পড়াশুনা দেখিয়েছে এবং সাফল্য পেয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার গতানুগতিক প্রাথিমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আপনার ছেলে মেয়েকে পাঠালে আপনি কখনোই নিশ্চিত হতে পারবেন না আপনার সন্তানটি অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবে কি হবে না । অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,গতানুগতিক প্রাথিমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যা শিক্ষা দেওয়া হয় তার সাথে হয়ত খুব একটা মিল পাওয়া যায় না অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষার প্রশ্ন পত্রে। আপনার সন্তান খুব ভাল গণিতে, ইংরেজিতে কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে (জেনারেল এবিলিটি ) ভাল না, তা হলে খুবই কষ্টকর হবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে।আবার সবকটি বিষয়েই ভাল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে উত্তর দিতে পারলো না কারণ প্রতিটি প্রশ্নের পিছনে গড়ে মাত্র ৪০ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়,যা কিনা বড়রাও হিমশিম খায় মাঝে মাঝে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে ,অপর্চুনিটি স্কুল টেস্টে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। দুইটি ভাগে প্রতিটি প্রশ্নপত্রে ৩৫টা মাল্টিপল প্রশ্ন থাকে গণিত (Mathematics) , জেনারেল এবিলিটি ( General Ability ) এবং ইংরেজি (ইংলিশ) বিষয়ের উপর ।

সুতরাং কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে অভিবাবকদের। ভাগ্যবান কিছু বাবা মায়ের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু সার সংক্ষেপ তুলে ধরা হল।

প্রস্তুতি কখন শুরু করতে হবে ?
আমার সন্তান মেধাবী, এমিনি এমনি অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে এই ধারনাটা বর্জন করাটা জরুরী। তৃতীয় শ্রেণীর মাঝামাঝি সময় থেকে অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষার পেপারগুলো দেখে নিতে পারেন এবং নিউ সাউথ ওয়েলস এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে স্যাম্পল প্রশ্নপত্র দেয়া আছে। মনে রাখতে হবে,স্যাম্পল শুধু ধারণা দেয়ার জন্য। এক্সেল এর বইগুলি সিরিজ আকারে বইয়ের দোকানে পাওয়া যায়। সেগুলো প্রতিদিন অন্তত একপাতা করে ইংরেজী, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান (জেনারেল এবিলিটি) করতে দিন। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে ,তৃতীয় শ্রেণীর শিশুকে পড়াতে হলে চাপ প্রয়োগ করলে উল্টা ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আদর,প্রশংসা এবং পুরস্কার দিয়ে তাদেরকে খুশী রেখেই প্রতিদিন একটু একটু করে মিশন শুরু করাটা ভাল। যখন চতুর্থ শ্রেণীতে উঠবে, এর ফলাফল একটু একটু করে আসতে থাকবে। তারপর একটা একটা টেস্ট পেপার প্রতি ছুটির দিনে করতে থাকুক এবং সাথে সাথে অবিভাবক হিসেবে একটি সহজ পদ্ধতি বের করে নিতে হবে কিভাবে, ভুলগুলো শুদ্ধ করানো যায়। শনিবার/ রবিবার সকালের সময়টা সবচেয়ে কার্যকর, এতে দিনের বাকি সময়টা (সাপ্তাহিক ছুটির দিন) পারিবারিক / বিনোদনের কাজে লাগানো যায়।

কোচিং দরকার ?
অধিকাংশ অভিভাবক মনে করেন প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারের কোর্স এবং টেস্ট পেপারগুলো সঠিক পদ্ধতিতে সাজানো থাকে এবং কোচিং সেন্টারে গিয়ে তাদের সন্তানেরা উপকৃত হয়েছে। আবার অনেক অভিভাবক বাজারের বই কিনে, বাসায় তাদের সন্তানদের পড়াশুনা করিয়ে কোচিং সেন্টারে প্রথমে মাসে একটা করে এবং পরবর্তীতে সপ্তাহে একটা টেস্টে অংশ নিতে দিয়েছেন, এতে তারা সাফল্য পেয়েছেন। অনেক বাবা-মা কাজের ব্যস্ততার কারণে কোচিং কিংবা প্রাইভেট টিউটরের উপর নির্ভরশীল হয়েও ফলাফল পেয়েছেন। একেবারেই কোচিং সেন্টারে যায়নি কিংবা কোচিংয়ের টেস্টগুলোতে অংশগ্রহন ছাড়াও প্রতি বছর অনেক ছেলে মেয়ে অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, সেই ক্ষেত্রে বাবা-মাকে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হয়।

বাংলাদেশে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকে প্রায়ই?
অভিজ্ঞ অভিভাবকরা মনে করেন, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া তৃতীয় শ্রেণীর শেষ ২ মাস (নভেম্বর , ডিসেম্বর ) থেকে চতুর্থ শ্রেণীর অগাস্ট মাস প্রস্তুতির সেরা সময়। লম্বা ছুটিতে গেলে পড়াশুনায় একটু ব্যাঘাত ঘটে। বাংলাদেশে যাওয়াটা এই কয়েকমাস বন্ধ রাখতে পারলে পরে কম বেগ পেতে হয় বলে অনেকেই মনে করেন।

কোন বিষয়ে বেশী মনোযোগী হতে হবে ?
ইংরেজিতে বরাবরই অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশী ছেলেমেয়েরা তুলনামূলক দুর্বল এর কারণ বহুবিদ। সুতরাং ইংরেজিতে একটু খেয়াল রাখা দরকার প্রথম থেকেই। গণিতে ভাল কিন্তু নিয়মিত না করলে ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলি সহজেই ভুলে যায়, কারণ গণিত জিনিসটা তাদের ঐটুকু বয়সে কাজে লাগে কতটুকুই ? সাধারণ জ্ঞান কিংবা জেনারেল অবিলিটিটি আসলে ইংলিশ শব্দের ভিন্ন অর্থ ও কিছু ছবি অথবা ডায়াগ্রাম,কিছুটা গণিতের সমন্বয়ে তৈরী কিছু বুদ্ধির খেলা নিয়ে প্রশ্নমালা। এই ক্ষেত্রে আসলে ইংরেজির শব্দ যার বেশি জানা থেকে, সে বেশি ভাল করে। বাকিটা চর্চার উপর নির্ভরশীল। মোট কথা সব কয়টি বিষয়ের দিকেই নজর রাখা দরকার, কারণ একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের কারণে হয়তো অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করবে।

স্কুলের এসেসমেন্ট ?
অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষার ফলাফলের সাথে স্কুলের এসেসমেন্ট মার্কস ( নম্বর) একটি উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখে। দুইটি মার্কের সমন্বয়ে অপর্চুনিটি স্কুল পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়ে থাকে। স্কুলের এসেসমেন্টটা শুরু হয় চতুর্থ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই। এই এসেসমেন্ট নেয়া হয় স্কুলেই। তাই তৃতীয় শ্রেণীর শেষ দিকটাকে ইংরেজি এবং গনিতের উপর একটু নজর রাখা দরকার এবং চতুর্থ শ্রেণীর শুরু থেকে জুন -জুলাই মাস পর্যন্ত স্কুলের ছোট ছোট টেস্ট গুলো থেকে একটা নম্বরপত্র (গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের উপর) পাঠানো হয়ে থাকে নিউ সাউথ ওয়েলসের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে। এই নম্বরগুলো পাওয়া খুবই সহজ যদি অভিভাবক হিসেবে সন্তানের শ্রেণী শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ তৈরী করতে পারা যায় এবং নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে পারলে যে , আপনার সন্তানটি কোন কোন বিষয়ে দুর্বল এবং স্কুলের সহায়তা কিভাবে পেতে পারে ঐ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য।