ফজলুল বারী: শ্যামগঞ্জ যাবেন? সুযোগ পেলে একবার গিয়ে ঘুরে আসবেন। ভালো লাগবে। আমি সেখানে দু’বার গিয়েছিলাম। একবার একা। হাঁটতে হাঁটতে। আরেকবার গিয়েছিলাম অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ স্যারের সঙ্গে।
তীর্থযাত্রার মতো ঢাকা থেকে একসঙ্গে অনেকগুলো পরিবার আমরা সেখানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সালাম জানাতে গিয়েছিলাম। আপনিওতো দেশ প্রেমিক। তাই সেখানে গেলে আপনি স্মৃতিকাতর হবেন। চোখের পানিও পড়বে।
ওখানকার কাজলা গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার আরও অনেকে আছেন। তবে এই সেক্টর কমান্ডারকে নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক বেশি। তিনি ছিলেন আলাদা একজন।
তাঁর যুদ্ধে স্বাধীন দেশে তাঁকে স্বাভাবিক মৃত্যুর সুযোগ দেয়া হয়নি। তাঁর একটি পা ছিলোনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যিনি যুদ্ধে গিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্যে নিজের একটি অঙ্গও দান করেছিলেন।
এরপরও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার মতো নিরাপদ মনে করেনি তাঁর ঘাতক জিয়াউর রহমান। অথচ একটা তথ্য কী জানেন? এই দু’জনকে সামরিক বাহিনীর লোকজন তখনও বন্ধু হিসাবে জানতেন! মুক্তিযুদ্ধের পরও অটুট ছিল সেই বন্ধুত্ব।
পাকিস্তানি বাহিনীতে তখন বাঙালি সেনা অফিসার কম ছিলেনতো। তাই সবাই সবাইকে চিনতেন জানতেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বও ছিল। তাহের-জিয়ার বন্ধুত্বের গল্প আমি প্রথম রৌমারী গিয়ে শুনেছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজিবপুর নামের দুটি জনপদ স্বাধীন-শত্রুমুক্ত ছিল। কারন উত্তাল ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে কখনো যাবার সাহস করেনি। পানি দেখে ভয় বেশি পেতো পাকিস্তানিরা।
তাদের বেশিরভাগ সাঁতার জানতোনা। পানিতঙ্কের পাশাপাশি বিচ্ছু মুক্তিযোদ্ধাদের জমের মতো ভয় করতো ভীতুর ডিম পাকিস্তানিরা। বিচ্ছুদের হাতে পড়লে তাদের পানিতে চুবিয়ে মরার মৃত্যুভয় ছিল। মরার ডর বড় ডর।
আপনারা একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল ঘুরে ঘুরে বানানো ‘মুক্তির গান’ ছবিতে সেই সময়ের রৌমারী-রাজিবপুর দেখেছেন। আর আমি এলাকা দুটি দেখেছি ১৯৮৬ সালে। তখনও রৌমারী-রাজিবপুর যাবার কোন সড়কপথ ছিলোনা।
রাজিবপুরের টিনের চালের বাঁশের বেড়ার একটি ঘর দেখিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেছিলেন সে ঘরে কিছুদিন তাহের-জিয়া ছিলেন। দু’জনের মধ্যে প্রায় তারা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে দেখতেন। যুদ্ধ কৌশল নিয়ে দু’জনের মধ্যে ভিন্নমত ছিল।
তাহের পছন্দ করতেন ফ্রন্টলাইন ফাইট। জিয়া ছিলেন এর উল্টো। সেটি নিয়ে দ্বন্দ্ব-ঝগড়া হতো দু’জনের মধ্যে। সেই ফ্রন্টলাইন ফাইটার তাহের একাত্তরের সেপ্টেম্বরে ধানুয়া-কামালপুরের যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
জীবন বাঁচাতে ভারতের মিলিটারি হাসপাতালের সার্জনরা তাঁর এক পা কেটে বাদ দিলে তিনি বাকি জীবনের জন্যে হয়ে গেলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর সারাজীবনের সুবিধাবাদী জিয়া হন বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলকারী রাষ্ট্রপতি।
বন্ধুত্বের ছদ্মাবরনের প্রতারক জিয়ার পাপ-তাপ ধারন করে যীশুর মতো প্রান দেন ছিয়াত্তরের ক্ষুদিরাম কর্নেল তাহের। তাঁর শেষ শয্যাটিই এখন তাঁর গ্রামের বাড়ি কাজলার মসজিদের পাশে। সেখানে মানুষ একজন বীরের সমাধি দর্শনে যায়।
আমি অবশ্য প্রথম কাজলা যাই তখন সেই গ্রাম, কর্নেল তাহেরকে নিয়ে বেশি কিছু জানতামনা। নেত্রকোনার পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ বাজারে গিয়ে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা খুঁজছিলাম। যিনি আমাকে এলাকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য দিতে পারবেন।
হাটুরে লোকজন তখন একজন সাঈদ মুক্তিযোদ্ধার ঘর দেখিয়ে বলেন, ওখানে যান। উনি আপনাকে ম্যালা ঘটনা বলতে পারবেন। আমি সাঈদ সাহেবের ঘরে ঢুকলাম। বাজারের মধ্যে অফিসের মতো একটি সাদামাটা কক্ষ।
নিজের পরিচয় দিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম। আমি তখনও জানিনা তিনি কর্নেল তাহেরের ভাই। তিনি একজন সঙ্গী দিয়ে বললেন তুমি আগে আমাদের গ্রাম দেখে আসো। আমাদের মা’র সঙ্গে দেখা করে কথা বলে আসো।
সাধারন এক টিনের চালা ঘর দেখিয়ে চলে গেল হাঁটুরে পথ প্রদর্শক। আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন একজন মা। আমি তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করে বললাম মা আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। মা আমাকে মাথায় হাত রেখে যেন দোয়া করলেন।
এরপর বললেন তুমি একটু কবর জিয়ারত করে আসো। আমি তোমার জন্যে ভাত বসাই। বাংলাদেশ ভ্রমনের পথে পথে আমি এমন অনেক মা পেয়েছি। কিন্তু কাজলার মসজিদের পাশে বাঁধানো কবরের শিলালিপি পড়ে আমি চমকে যাই।
এই মা’তো কর্নেল তাহেরের মা। বিদেশি মিডিয়া যে মুক্তিযোদ্ধার নাম দিয়েছিল ক্র্যাচের কর্নেল। কর্নেল তাহেরের মা’কে আজ আমি মা ডেকেছি। আজ থেকে তিনি আমারও মা হয়ে গেছেন। আমাদের এই মায়ের নাম আশরাফুন্নেসা।
একটা বিশেষ ধরনের ভালোলাগার অনুভূতিতে মনটা বেশ বড়-ভরাট হয়ে যায়। আমার বাড়ি কুলাউড়া শুনেও যেন খুশি হলেন। কুলাউড়ার পাশের লংলা রেলওয়ে স্টেশনে স্টেশন মাষ্টার হিসাবে চাকরি করেছেন কর্নেল তাহেরের বাবা।
সে হিসাবে তাহের, তার ভাইবোনদের শৈশব-কৈশোর লংলা-কুলাউড়া এলাকায়ও কেটেছে। এমসি কলেজে পড়াশুনাও করেছেন তাহের। আমাকে বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখালেন মা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়।
তবে এর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানিদের দাবড়ে বেড়িয়েছেন এই মা। ২৫ মার্চ ঢাকায় গণহত্যা শুরুর পর ময়মনসিংহ থেকে অনেক পরিবার এসে বাড়িটায় আশ্রয় নেয়। শতশত মানুষ বাড়িতে। মা সবার রান্না খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত।
মেয়ে ডালিয়া তখন ক্লাস ফাইভের ছাত্রী। ভারতেশ্বরী হোমসে পড়তেন ডালিয়া। ডালিয়াদেরও নানাকাজে ব্যস্ত রাখতেন মা। বাড়িতে জমা হওয়া মানুষজনের যেন কোথাও কোন সমস্যা না হয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা তাদের তেমন বুঝতে দিতেননা।
একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে ডালিয়ারা জানতে পারেন তাদের ভাই আনোয়ার বাড়িতে নেই। কিছুদিন পর বেলাল ও বাহারও চলে যান যুদ্ধে। অথচ মায়ের চোখে কোন উৎকন্ঠা নেই! বরং তাঁর চোখেমুখে গর্বের চিহ্ন!
বাড়িতে সবাই রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতেন। দেশের খবর শুনতে গোটা গ্রামের মানুষ ভিড় করতো। গেরিলা হামলার ভয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রথম দিকে সে গ্রামে আসতোনা। মাঝে মাঝে গুজব ছড়ানো হতো মিলিটারি আইছে!
অনেকে দৌড়ে পালাত। কিন্তু একজনকে দেখা যেত নিরুদ্বেগ। তিনি মা আশরাফুন্নেসা। ঠান্ডা মাথায় তিনি সবার হাতে হাতে তুলো বিলাতেন। বলতেন, তুলা রাখ সবাই। বোমা ফোটালে গোলাগুলির শব্দে যেন বাচ্চাদের কানের ক্ষতি না হয়।
মুড়ি-চিঁড়া-গুড়ের শুকনো খাবারের শতশত প্যাকেট তৈরি করে রাখতেন মা। যাতে শহর থেকে নতুন আসা কেউ এসেই খাবার পায়। তাহেরকে খুঁজতে পাকিস্তানি সৈন্যরা যেদিন প্রথম গ্রামে আসে সেদিন মজার একটা ঘটনা ঘটে।
বাড়ির দেয়ালে কবি নরুল আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি ছিল ঝুলানো। বা্বরি চুলের নজরুলের ছবি দেখে তারা হিন্দু লোক মনে করে তারা সে ছবি ভেঙ্গে ফেলে। আর রবীন্দ্রনাথের ছবিটা মুসলমান দরবেশ মনে করে তাকে সালাম করে।
তার ছবির কোন ক্ষতি করেনা। সৈন্যরা জানতে চায় মেজর তাহের কোথায়। মা তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, তোমরাই বলো আমার ছেলে কোথায়। ওকেতো আমি তোমাদের আর্মিতে পাঠিয়েছি। তাকে কী তোমরা মেরে ফেলেছো?
আমি তার খবর পাচ্ছিনা কেনো। সৈন্যরা তখন উল্টো ভড়কে যায়। মা কিন্তু তখনই জানতেন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে তাহের যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে। গ্রামের কয়েক মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা।
তাদের পথ আটকে দাঁড়ান মা। চিৎকার করে বলেন খবরদার, আমার একটা মেয়ের গায়ে একটা দাগ দিয়েছোতো আমি কাউকে ছাড়বোনা। আমি তোমাদের মেজর তাহেরের মা। উল্লেখ্য মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন তাহের।
এ ভাবে তাঁর প্রশ্রয়ে ছেলেমেয়েদের সবাই তখন যুদ্ধে চলে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে সেই কিশোরী ডালিয়াও যান যুদ্ধে। মহেন্দ্রগঞ্জে তার প্রশিক্ষন হয়। তার কাজ ছিল রেকি করা। এক বাংকারেরে নির্দেশনা আরেক বাংকারে পৌঁছে দেয়া।
এই পরিবারের আবু ইউসুফ খান(বীরবিক্রম), আবু সাঈদ, ডঃ আনোয়ার হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন বাহার(বীরপ্রতীক), ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল(বীরপ্রতীক) সবাই বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে।
ছেলেমেয়েদের যুদ্ধে যাওয়া নিয়ে মা’র বক্তব্যঃ আমি তাদের বলেছি যাও দেশের জন্যে যুদ্ধে যাও। হায়াত-মউত আল্লাহর কাছে। কথাবার্তায় তাঁর দৃঢ়তা দেখে চমকে যাই। এমন দৃঢ়চেতা কোন মায়ের সঙ্গে এর আগে আমার দেখা-পরিচয় হয়নি।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা মা-বাবা রাজি হবেননা ভেবে না বলে পালিয়ে যুদ্ধে গেছেন। আর এই মা ছেলেমেয়েদের বিদায় দেবার সময় বলেছেন দেশের জন্যে যুদ্ধে যাও। বাড়িটি পুড়িয়ে দেবার পর যুদ্ধের পুরো নয়মাস তাদের কষ্টে কেটেছে।
পরিচয় গোপন করে থাকতে হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। দেশ স্বাধীন হবার পর সব কষ্ট ভুলে যান। বললেন, কত মানুষের কত কষ্ট হয়েছে। সে তুলনায় আমার কষ্টকে কখনও আলাদা করে দেখিনি। দেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই আমাদের কাছে বড়।
মা আমাকে খাবার বেড়ে দিলেন। খাবার খেতে খেতে তাঁর গল্প শুনছিলাম। আমাকে বললেন তাহেরতো কোন অপরাধ করে নাই। আমার কোন ছেলেমেয়ে জীবনে কখনো কোন লোভ করেনি। সবাই তাহেরের কথা শুনতো।
মা বলেন, বাড়িতেও তাহের ছিল পরিবারের কমান্ডার-লিডার। তাকেই তারা ঠান্ডামাথায় মেরে ফেললো! ফাঁসির দিন হেলিকপ্টারে লাশ আনা হয়। তারা গ্রামে এক রকম কার্ফু দিলো। আর্মির লোকেরা গ্রামটা এক রকম ঘিরে ফেললো।
তারাই কবর খুঁড়লো, তারাই জানাজা-দাফন দিলো। তাদের সবকিছুতে অনেক তাড়াহুড়া ছিল। আমার গ্রামের মানুষ না, তাদেরই সেদিন ভীতসন্ত্রস্ত মনে হয়েছে। কারন তারাই দোষী। তারাই অপরাধী।
তারা আমার ছেলেকে নয় বাংলাদেশের তাহেরকে হত্যা করেছে। যেই তাহেরের কাছে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন ভাবনা ছিলোনা। আমার ছেলেতো এভাবে বাড়িতে আসার সময় পেতোনা। সারাক্ষন শুধু দেশ আর দেশ নিয়ে ভাবতো।
ক্র্যাচের কর্নেলের শেষ সময়ঃ ২০ জুলাই ১৯৭৬ সন্ধ্যায় বার্তাবাহক এসে জানিয়ে দিল পরের দিন কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা। তাহের শুনলেন এবং ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিলেন বার্তাবাহককে। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী, একজন মৌলভি আসেন
এবং তাহেরকে কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার অনুরোধ জানান। তাহের যা বিশ্বাস করতেন, তা বলতে দ্বিধা করতেন না। তাহের মৌলভির উদ্দেশে শুধু বলেন, ‘আপনাদের সমাজের কালিমা আমাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। কখনো না।
আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। আপনি এখন যান। আমি এখন ঘুমাব।’ এরপর তাহের সত্যি সত্যি ঘুমাতে যান এবং গভীর নিদ্রায় ডুবে যান। স্বাধীন বাংলাদেশের আলো-বাতাসে বীর তাহেরের সেটাই ছিল শেষ ঘুম।
২১ জুলাই ভোররাত তিনটা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ৮ নম্বর সেল। ঘুম থেকে তাহেরকে ডেকে তোলা হয়। উপস্থিত ব্যক্তিরা তাঁকে সাহায্য করতে চাইলে তাহের মৃদু স্বরে শুধু বলেন, ‘আমার নিষ্পাপ শরীরে তোমাদের স্পর্শ লাগুক, আমি তা চাই না।’
এ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে তিনি দাঁত মেজে, দাড়ি কেটে, গোসল করে, নকল পা, জুতা, প্যান্ট, শার্ট নিজেই পরে নেন। আম কাটেন। নিজে খান, অন্যদের দেন। চা পান করেন। সিগারেট ধরান।
তাহেরের এই শান্ত প্রকৃতি দেখে উপস্থিত কারা কর্তৃপক্ষের লোকেরা প্রথমে হতভম্ব হয়ে পড়ে, পরে বেদনায় মুষড়ে পড়ে। তাহের যেন দেশপ্রেমে মোড়া এক জীবন্ত শরীর। অন্য কোনো কথা নয়, কেবলই দেশের কথা। সবাইকে উদ্দেশ করে তাহের বলেন, ‘সবাই এত বিষণ্ন কেন?
আমি দুদর্শাগ্রস্তদের মুখে হাসি উদ্ভাসিত করতে চেয়েছিলাম। মৃত্যু আমাকে পরাজিত করতে পারবে না।’ নিজের হাতে জমটুপি পরে তাহের আবৃত্তি করলেন মেজর জিয়াউদ্দিনের কবিতাঃ
“জন্মেছি সারাদেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে কাঁপিয়ে দিলাম
জন্মেছি তোদের শোষণের হাত দুটো ভাঙবো বলে ভেঙে দিলাম
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করবো বলে করেই গেলাম
জন্ম আর মৃত্যুর বিশাল পাথর রেখে গেলাম
পাথরের নিচে শোষক আর শাসকের কবর দিলাম
পৃথিবী, অবশেষে বিদায় নিলাম।”
এবং অতঃপর বিদায়।
অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ যখন আমাকে কাজলায় নিয়ে যান তখন তিনি তাহের সংসদের সভাপতি। এই সংগঠনটিই এখন তাহেরের স্মৃতি ধরে রেখেছে। তাঁর অনুসারীদের বেশিরভাগ এখন কেউ আওয়ামী লীগ কেউ বিএনপির কৃপা প্রার্থনার কাজে ব্যস্ত।