ফজলুল বারী: নারায়নগঞ্জের সিটি নির্বাচন নিয়ে এখন সারাদেশের দৃষ্টি। ১৬ জানুয়ারি আলোচিত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহন হবে। ইভিএম এর ভোট। রেজাল্ট জানা যাবে তাড়াতাড়ি। সাম্প্রতিক রক্তাক্ত ইউপি নির্বাচনের পটভূমিতে এই নির্বাচন এখন পর্যন্ত আলাদা চিহ্নিত হয়ে আছে।
কারন এখন পর্যন্ত সেখানে হিংসার তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনটিতে প্রধান দুই প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভি, এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের নেতিবাচক কোন ভাবমূর্তি নেই। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে তৈমুর আলম খন্দকারকে কাকা ডাকেন আইভি।
তাঁর এই কাকা তাঁর প্রয়াত পিতা আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহমদ চুনকার কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সারাদেশের মতো সুবিধার আশায় নারায়নগঞ্জের যারা কখনো বিএনপি, কখনো জাতীয় পার্টি হয়ে গেছেন তৈমুর আলম খন্দকার, নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমানও তাদের তিনজন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের দুই সদস্যের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়াটা আজও অনেকে মেনে নিতে পারেননি। এটাকে তারা নীতিহীন ধান্দাবাজিই মনে করেন। ভোটের সময় এসবও আলোচনায় আসে।
সারাদেশে আওয়ামী লীগের যে সব জনপ্রিয় চরিত্র আছে সেলিনা হায়াত আইভি তাদের অন্যতম। আঠারো বছর ধরে আইভি নারায়নগঞ্জের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। প্রথমে পৌরসভা চেয়ারম্যান। পরে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। তিনিই দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী মেয়র।
তাঁর বিরোধিতা মূলত নারায়নগঞ্জ আওয়ামী লীগের ভিতর থেকে। এবার সিটি নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র প্রার্থী হিসাবে যে তিনজনের নাম ঢাকায় পাঠানো হয় সেখানে আইভি’র নাম ছিলোনা। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চালাকিটা ধরতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নামগুলো কারা পাঠিয়েছেন, সেখানে আইভি’র নাম কেনো কাটা, এসব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন বলেই তিনি দেশ চালান। তাই তিনি ওই তিনজনকে বাদ দিয়ে আইভিকে প্রার্থী করেন। আইভির বিরুদ্ধে যারা ফেসবুকে লিখেন তারা মূলত শামীম ওসমানকে ভালোবাসেন।
আইভি’র বিরুদ্ধে তাদের একটি অভিযোগ তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সক্রিয় নন। তারা তাকে জামায়াতের আইভিও বলেন! আইভি নারায়নগঞ্জ আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সক্রিয় হবার চেষ্টা করলে কী ঘটনা ঘটতো বা তাকে সে সুযোগ দেয়া হতো কিনা তা নির্বাচন এলেই বোঝা যায়।
এখন যিনি নারায়নগঞ্জ আওয়ামী লীগের কাজে সক্রিয় নন, তিনি জামায়াতের আইভি হলে তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেনো ভালোবাসেন, মনোনয়ন দেন এটা তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করতে পারেননা, ফেসবুকে লিখতেও পারেননা, উল্টো হাতপা ছুঁড়ে অক্ষমের আর্তনাদ করেন।
এবার আবার শেখ হাসিনা বিভিন্ন ভাবে জানান দিয়েছেন তিনি প্রার্থী করা স্বত্ত্বেও তাঁর আইভির বিরোধিতা কারা করছে, তাকে হারানোর চেষ্টা কারা করছে সব খবরই তাঁর কাছে আছে। শেখ হাসিনার প্রার্থীকে কলা গাছ, হু কেয়ারস এসব মন্তব্যের কড়া জবাব এসেছে।
কারন শেখ হাসিনা কলা গাছ দেখে নয়, আইভিকে দেখে তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর কবীর নানকদের মাধ্যমে এমন সব খবর পেয়ে সেলিনা হায়াত আইভিও নিজেকে শেখ হাসিনার প্রার্থী, শামীম ওসমানের প্রার্থী নন, এমপি শামীম ওসমান কিভাবে মাঠে নামবেন, এটা বেশি বেশি বলার চেষ্টা করেছেন।
নারায়নগঞ্জে শক্তির রাজনীতিতে শামীম ওসমান শ্রেষ্ঠ, কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে যে দূর্বল তা আইভিও জানেন, সবাই জানেন। উল্টো তৈমুর আলম খন্দকার শামীম ওসমানের প্রার্থী, এই অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ায় তিনি সমস্যায় পড়েছেন!
শুরুতে তৈমুর আলম খন্দকার এটিকে ভালো মনে করে বলার চেষ্টা করেছেন তিনি সবার প্রার্থী। আওয়ামী লীগের লোকজনেরও প্রার্থী! কিন্তু তেলে আর জলে যে মিলেনা, নৌকার ভোটার ধানের শীষের ভোটার হয়না, এটা তিনি এখন মাঠে ময়দানে বুঝছেন।
এই নির্বাচন করতে গিয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির নানা পদ হারিয়েছেন। কারন এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আবার নারায়নগঞ্জ বিএনপির লোকজন তৈমুর আলম খন্দকারের নির্বাচনী প্রচারনার নেতৃত্বে রয়েছে!
এসব নিয়ে বিএনপির না ঘরকা না ঘাটকা নীতি নারায়নগঞ্জ সিটির নির্বাচনে আরও প্রকাশিত। স্থানীয় বিএনপির সাবেক দুই এমপি তৈমুরকে সমর্থন দেননি। তৈমুর শামীম ওসমানের প্রার্থী এই প্রচারনায় পিছিয়ে গেছেন বিএনপির অনেক ভোটার সমর্থক!
ওপর দিকে শামীম ওসমান-সেলিম ওসমানের লোকজন আন্তরিকভাবে আইভি’র পক্ষেও নেই। তবু তিনি জিতবেন এটা নানকরা সহ সবাই বলছেন। শামীম ওসমান সমর্থকদের কাছে বিষয়টি অস্বস্তির। কারন তারা বিষয়টি গিলতে পারছেননা আবার উগড়াতেও পারছেননা।
আইভির নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা নানকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া শুরু করেছেন তৈমুর আলম খন্দকার। নানকরাও হারতে নারায়নগঞ্জ আসেননি। আবার ভোটে শুধু কাকা তৈমুর আলম খন্দকারকে নয়, শামীম ওসমানদের হারিয়েই আইভিকে জিততে হবে। এমন নানামুখী বাস্তবতায় ভোট হচ্ছে নারায়নগঞ্জে।