ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট পাগলামির অতীত ও বর্তমান !

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট পাগলামির অতীত ও বর্তমান !

আবু তারিক, আমি ওকে তারিক বলেই ডাকতাম। কেউ কেউ অবস্য পাগলা তারিক বলেও ডাকত। ওর নামের কোন অভাব ছিল না। বিভিন্ন কারনে ও আমাদের ব্যাচটাতে বেশ ফ্যামাস ছিল। ছাত্র সংখ্যা খুব বেশী ছিল না তার পরেও শহর এবং গ্রামের ছাত্রদের মাঝে একটা ডেমারকেশন লাইন সৃষ্টি হয়েছিল। তবে তারিক ছিল ভিন্ন ধাচের। ও আমাদের মত গ্রাম থেকে আসা ছেলেদের সাথে মিশত আবার শহুরেদের সাথে তো আগে থেকেই খাতির। একদিন মিজান এসে বলল, GT মানে জানিস। আমি বললাম না। ও মনে হয় আকাশ থেকে পরল! কি বলিস Great Tariq কে চিনিস না । লিকুর কাছে অবস্য GT’র অন্য একটা মিনিং জেনেছিলাম। ও এখন পরাদস্তর ২ ছেলের বাবা।

আজ ওর ছেলের ক্রিকেট প্রাকটিসের ছবি দেখে ওর ক্রিকেট পাগলামির কথা মনে পরে গেল। ফাস্ট ইয়ার কি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র তখন। ইন্টার ডিপার্টমেন্ট ক্রিকেট হয় জগন্নাথ হল মাঠে । আমারও ক্রিকেট বিষয়ক অভিজ্ঞতা তখন তিন কি সাড়ে তিন বছর। ক্রিকেটের পোকা বানানোর জন্য কাউকে দায়ী না করলেও Titu র নামটা চলেই আসে। হাতে খরি না বলে বলবো কানে কিছু ঢুকিয়েছিল। আর তাই ক্রিকেট মানেই নাওয়া খাওয়া ভুলে যাওয়া। সেটা পাড়ার ক্রিকেট হোক আর আন্তজাতিক ক্রিকেট হোক। সেই যে ক্যারমাইকেল কলেজের জি এল হোস্টেলের টিভি রুমে ক্রিকেট পাগলামির নাড়িটা পুতা দিয়ে শুর করেছিলাম তার ভোগান্তি ( ? ) এখন ও চলছে। ভাগ্যক্রমে তখন চলছিল ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ। এক সিনিয়র ভাই এন্টেনার খাম্বাটাকে খুব যত্ন করে দুরদর্শনে দিকে সেট করেছিলেন । স্ক্রীনে হাজারো ঝি ঝি পোকা, তাও TV র সামনে থেকে উঠি না। সিনিয়র ভাই ও একজন সঙ্গী পেয়ে কমফোর্ট ফিল করে। সবকিছুই নতুন, তাইতো মিয়াদাদকে মিয়াদাদ ভাই ও কপিলদেবকে কপিল দাদা বলে সম্মোধন করলাম। হাসতে হাসতে সিনিয়র ভাই আমার ভুলটা শুধরে দিয়েছিলেন। ছুটিতে গ্রামে গেলেই ক্রিকেট খেলতাম। নিয়ম কানুন খব ভাল জানতাম তারপরেও খেলতাম। তক্তা দিয়ে হাতে বানানো ব্যাট আর প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের কাছ থেকে ধার করা স্পন্জের বল। বাউন্সি পিচ না হলেও সব বলই ছিল বাউন্সার। আমি অবস্য রবী শাস্রীকে নকল করতাম মানে স্পিন করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারিকের ক্রিকেট পাগলামিতে মুগ্ধ হলাম। আমার মাঝে যে ক্রিকেট ট্যালেন্ট তা দিয়ে ডিপার্টমেন্টের টিমে চান্স হবে না তা জেনেই কখনো ট্রাই করিনি। তারিক অবস্য ডিপার্টমেন্টের ক্রিকেট টি মের সদস্য ছিল তবে রেগুলার ছিল না। মিথুন ও রুবেলের সাথে কমপিটিশনে মাঝে মাঝে ওকে সাইড লাইনে বসে থাকতে হত। কেননা তিন জনেই যে ফাস্ট বলার। টিমে চান্স নাই তাই বলে ক্রিকেট খেলব না তা কি করে হয় । সেটার ব্যবস্থা তারিক করেছিল, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের সাথে একটা প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে। ফিজিক্সে তখন লিগে খেলা প্লেয়ার সোহেল ছিল। খেলা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে । খেলার মাঝে তারিক আমাকে বল করতে বলল, কেননা ও ছিল দলের ক্যাপ্টেন। ক্রিজে তখন সেই সোহেল! আমি শাস্রীকে নকল করে বলটাকে একটু হাতে ঘুড়িয়ে স্পীন বল করলাম, সোহেল ডান্সিং ডাউন করে বলটা আকাশে উড়িয়ে দিল । শীতের আকাশে অতিথি পাখিগুলোর সাথে আমার বল ও উড়তে লাগল। তারিকের চোখের দিকে একবার তাকালাম। দেখলাম ও রেগে লাল হয়েছে। মুখে শুধু বললো ” কি করছ মাহবুব ! ” । ব্যাট এবং বলকে সেদিন থেকেই বাই বাই জানিয়েছিলাম। আজ ওর ছেলের ক্রিকেট প্রীতি দেখে ওর সেই রাগাম্বিত মুখের ছবিখানা চোখের সামনে ভেসে উঠল। খুব মিস করি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটাকে…

Mahbub

 

 

 

 

(মোঃ মাহবুবর রহমান  তোত্তরি, জাপান, ,লেখক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার)