রাজধানী মধ্যাঞ্চলের নান্দনিক সৌন্দর্যের স্থাপনা হাতিরঝিলে নাগরিক বিনোদনের আরও অনেক উপকরণ যোগ হচ্ছে। হাতিরঝিলের বিভিন্ন অংশে সে সব স্থাপনার নির্মাণকাজ এখন পুরোদমে চলছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের অপেরা হাউসের মতোই মনোমুগ্ধকর বিনোদন আর সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে হাতিরঝিলে। এ প্রকল্পের ১০ একর জায়গার ওপর নির্মিত হচ্ছে উন্মুক্ত মঞ্চ। যা হবে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ইতিমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে শিল্পকলা একাডেমি। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে হাতিরঝিলের ওপর ভাসমান উন্মুক্ত মঞ্চও তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহায়তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোর অপেরা হাউসের অবকাঠামো নির্মাণ করছে।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, হাতিরঝিলে হবে বিশ্বমানের বিনোদন কেন্দ্র। ভাসমান এম্ফিথিয়েটারের (ছাদখোলা মুক্তমঞ্চ) নির্মাণ কাজ দ্রুতই শেষ করা হবে। এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে। ছাদখোলা মুক্তমঞ্চের কাছেই ১০ তলা অত্যাধুনিক গাড়ি পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা ছাড়াও একটি সম্মেলন কক্ষ থাকবে। এতে থাকবে হাতিরঝিলের ইতিহাস সংক্রান্ত জাদুঘর, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য সুবিধা। শুধু তাই নয়, হাতিরঝিলে ভাসমান রেস্টুরেন্টও করা হবে এবং ব্যাটারিচালিত ওয়াটার স্কুটার চালু হবে শিগগিরই। আবার পাল তোলা নৌকাও চলবে হাতিরঝিলে।
সূত্র জানায়, ৯ দশমিক ৪৭৭ একর জমির ওপর নির্মিত হবে হাতিরঝিল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট জায়গার ওপর এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রণয়নের জন্য ইতিমধ্যে একাধিক দেশি-বিদেশি স্থপতি কাজ করছেন। এতে ৩ থেকে ৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মূল মিলনায়তন থাকবে। এছাড়াও আরও দুটি মিনি মিলনায়তন থাকবে। যে দুটির ধারণ ক্ষমতা হবে ৩০০ থেকে ৫০০ দর্শকের। ঝড়বৃষ্টি বা রোদ থেকে রক্ষার জন্য উন্মুক্ত মঞ্চের ওপরে অবশ্য ছাউনিও থাকবে। যার ফলে সারা বছর দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই এখানে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করা সম্ভব বলে হবে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প এলাকায় থাকবে একটি বিশেষ (সুভিনিয়র) শপ। যেখানে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য প্রদর্শনীর জন্য তুলে ধরা হবে। এখানে সমকালীন বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রদর্শনেরও ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া নতুন শিল্পীদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমিও গড়ে তোলা হবে হাতিরঝিল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে।
উল্লেখ্য, বিশেষ সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপত্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিডনির অপেরা হাউস। যা অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বন্দরে অবস্থিত। এটি দেখতে নৌকার পাল আকৃতির। সারা বছর অনেক ধরনের অনুষ্ঠান এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই সিডনি অপেরা হাউস। অপেরা হাউসটি মহাসাগরের এক প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে। দেখতে অনেকটা উপত্যকার মতো। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় এটিকে ২০০৭ সালে অন্তর্ভুক্ত করে।
সূত্র জানায়, হাতিরঝিল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনে সিডনি অপেরা হাউস পরিদর্শন করবেন। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য সিডনি অপেরা হাউসের স্থপতি বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করা হবে। এ প্রকল্পটি নির্মিত হলে ঢাকাবাসীসহ সারা দেশের মানুষের নির্মল বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। সেই সঙ্গে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। (বাংলাদেশ প্রতিদিন)