জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতার জন্য পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জীবনকে বাজি রেখে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বাধীনতা পেলাম আমরা। এছাড়া বাঙ্গালি জাতির অধিকার আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিল বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব।
মাত্র ৫৫ বছরের জীবনের ১২ বছরইএই মানুষটি কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তার বলিষ্ট আর তেজোদ্বীপ্ত কণ্ঠস্বরের ভাষণ বিশ্ব নেতার কাতারে নিয়ে এসেছিল তাকে। বিশেষ করে তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বের সেরা ২০ ভাষণের একটি হিসেবেও গণ্য হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ব নেতাদের কাছে কেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু?
বৃটিশ মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা প্রয়াত লর্ড ফেনারব্রক ওয়ের মন্তব্য, ‘এক অর্থে- শেখ মুজিব, জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী ও ডিভ্যালেরার চেয়ে বড় নেতা।’
১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন- ‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতার দিক থেকে এই মানুষটি হিমালয় সম। তাই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা পেলাম।’
ভারতের মনিপুর ও ঝাড়খন্ড রাজ্যের সাবেক গভর্নর বেদ মারওয়া বলেছিলেন, ‘আমি আমার কর্মজীবনে জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীসহ অনেক ক্যারিসমেটিক বিশ্বনেতার সঙ্গে মিশেছি। কিন্তু আমিঅবশ্যইবলবো যে, তারমধ্যে তিনি (শেখমুজিব) ছিলেনসবচেয়ে বেশিক্যারিসমেটিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর শোনার পর সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন এক বাঙালি সাংবাদিককে লিখেছিলেন, ‘এটা তোমাদের জন্য একটি সর্বোচ্চ জাতীয় ট্র্যাজেডি। আমার জন্য এটা গভীর মাত্রায় ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি।’
জেমসলামন্ড,ইংলিশ এম পি “বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে বাঙলাদেশই শুধু এতিম হয় নি বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।”
পশ্চিম জার্মানী পত্রিকা – শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুই য়ের সাথে তুলনা করা যায়। জনগন তার কাছে এত প্রিয় ছিল যে লুই ইয়ের মত তিনি এ দাবী করতে পারেন আমি ই রাষ্ট্র।
সাংবাদিক ক্রিলডান একবার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিব একমাত্র নেতা- যিনি রক্ত, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি ও জন্মগতভাবে একজন পুরোপুরি বাঙালি। তার শারীরিক গঠন ছিল বিশাল। ছিল তার বজ্রকণ্ঠ। তার ক্যারিসমা জনগণের ওপর ম্যাজিকের মতো কাজ করতো। তার সাহস ও ক্যারিসমা তাকে এ সময়ের একজন সুপারম্যানে পরিণত করেছিল।’
প্রখ্যাত বৃটিশ সাংবাদিক স্যারমার্ক টালি বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের বেশ কয়েকটি জনসমাবেশে আমি উপস্থিত ছিলাম। তার চমৎকার কণ্ঠস্বরে জনগণ সম্মোহিত হয়ে উঠতো। সমাবেশে উপস্থিত জনগণের প্রতিক্রিয়া দেখে আমি তা উপলব্ধি করি।’
মিশরের ‘আল-আহরাম’ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক প্রখ্যাত সাংবাদিক হাসনাইন হেইকল বলেছিলেন, ‘নাসের কেবল মিশর ও আরব জগতের নন। তার আরব জাতীয়তাবাদ ও আরব জনগণের জন্য একটি মুক্তির বার্তা। একইভাবে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের একার নন। তিনি সব বাঙালির মুক্তির অগ্রদূত। তার বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতির নতুন অভ্যুদয়। মুজিব বাঙালির অতীত ও ভবিষ্যতের একজন বীর।’
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর লন্ডন থেকে প্রকাশিত‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
ভারতীয় বেতার ‘আকাশবাণী’র ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলে, ‘যিশু মারা গেছেন। এখন লক্ষ লক্ষ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছে। মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো।
সাদ্দাম হোসেন – “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতীষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ।তাই তিনি অমর”
এই ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু বাংলাদেশিদের কাছে তিনি নায়ক ছিলেন না বিশ্ব নেতাদের কাছে হয়ে উঠে ছিলেন এক অনুস্বরণীয় ব্যক্তিত্বে
শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে।
( সূত্রঃ বিডি-প্রতিদিন, বিবিসি , নতুন সময়)