ফজলুল বারী: তিনি আমাদের জননী সাহসিকা। কবি বেগম সুফিয়া কামাল। আমাদের সুফিয়া খালা। ২০ জুন তাঁর ১০৯ তম জন্ম বার্ষিকী। ১১০ তম জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনটি ছিল সোমবার, ১০ আষাঢ় ১৩১৮ বঙ্গাব্দ।
আপনাকে অশেষ শ্রদ্ধা সুফিয়া খালা। আপনি আমাদের সময়ের সাহসের নাম। আমাদের সময়ে তাঁকে আমরা পেয়েছি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের সামনে থেকে দেয়া নেতৃত্বে।
ঢাকায় আমাদের প্রজন্মের সাংবাদিকতা শুরুর সময়ে ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার সড়কের বাড়িতে থাকতেন শেখ হাসিনা। এ সড়ক ধরে হাঁটতে হাঁটতে আন্দোলনের আরও দুই সক্রিয় নেতৃত্ব হায়দার আকবর রনো, হাজেরা সুলতানার বাড়ি।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তাদের আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। মজা করে বলতাম, আমাদের রনো ভাই আমাদের হাজেরা আপা প্রতিদিন মায়ের কাছ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে বিপ্লব করতে বেরোন!
রাজনীতিটা তখনও এভাবে ত্যাগী রাজনীতিকদের হাতে ছিল। সেই সড়কের শেষ বাড়িটা ছিল সুফিয়া খালার। ঢাকায় তখন এতোটা ছায়াঘেরা ঝোঁপঝাড়ওয়ালা বাড়ি খুব কম ছিল।
তখন প্রতিদিন ঢাকার নানা অনুষ্ঠানের যিনি সভাপতি বা প্রধান অতিথি, বাড়িতে তিনি অতি সাধারন সাদা সুতি শাড়িতে খুব সাধারন বেশে থাকতেন আমাদের খালা। কেনো যেন তাঁর ছেলেটা যখন তখন আমাদের সে বাড়িতে ঢুকতে দিতেননা!
এরপরও নানা কিছুতে তাঁর চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমরা যখন টুপ করে বাড়িতে ঢুকে যেতাম তখন অনেকে অবাক পানি পড়া নিতেও সেখানে অনেককে অপেক্ষমান দেখতাম! নানাজনকে অসুখে বিসুখে ভরসার সঙ্গে পানি পড়াও দিতেন সুফিয়া খালা!
বাঙালি মুসলমান নারী আন্দোলনের অগ্রদূত এই মহিয়সী নারী। আমরা বেগম রোকেয়াকে দেখিনি। কিন্তু সুফিয়া কামালকে দেখেছি। এরশাদ বিরোধী জাতীয় কবিতা পরিষদ সহ নানাকিছুর নেতৃত্বেও তিনি ছিলেন সামনে।
যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্দোলন শুরুর পর একপক্ষ বললেন না না শহীদ জননী জাহানারা ইমাম না, নেত্রী হবেন সুফিয়া কামাল। জাহানারা ইমামের নেতৃত্ব থাকলে আন্দোলন যদি আবার আমাদের হাতে না থাকে!
তখন সুফিয়া খালা বললেন, আমার শরীর ভালোনা। জাহানারাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিক। আমি সঙ্গে থাকবো। তাছাড়া এই যুদ্ধে তাঁর ছেলে প্রান দিয়েছে। এরপর শহীদ জননীর নেতৃত্ব নিয়েও আর সমস্যা হয়নি।
সুফিয়া খালাও তখন আমাদের আরও আপন হয়ে গেলেন। জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের তিনিই ছিলেন নেতৃত্বে। গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টগুলোই ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এনসাইক্লোপিডিয়া।
একজন কবি সাধারনত নরম মনের মানুষ হন। তিনিতো আবার সাঁঝের মায়া’র কবি। ‘আমার গাঁয়ের মাঠের মাটিতে কিষাণ দুপুর বেলা, ক্লান্তি নাশিতে কন্ঠে যে তাঁর সুর লয়ে করে খেলা’।
সেই কবি যে প্রয়োজন কত দৃঢ়চেতা বজ্রমুষ্টির হতে পারেন আমাদের সময়ের সে দৃষ্টান্তের নাম সুফিয়া কামাল। তিনি শুধু একজন কবিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি। সংগ্রামেও অগ্রসর সমুজ্জ্বল।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের পর বাঙালি মুসলমান নারীর ঘুম ভাঙানিয়া সমাজ সংস্কারক একজন সুফিয়া কামাল। ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদের এক অভিজাত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়।
বাবা’র নাম সৈয়দ আব্দুল বারী। মা সৈয়দা সাবেরা খাতুন। শৈশবে বাবা থাকতেও তাঁর ছিলেননা। বাড়টির নাম ছিল রাহাত মঞ্জিল। তাঁর আইনজীবী বাবা তাঁর সাত বছর বয়সে নিরুদ্দিষ্ট হন।
তাঁর জন্মভিটাটি অবশ্য এখন আর নেই। নদীর করালগ্রাসে হারিয়ে গেছে সেই বাড়ি আর জন্মভিটা। সেটি এখন বালুচর। সেখানে দাঁড়ানো একটি সেতুতে দাঁড়িয়ে শুধু বলা যাবে ওইখানটায় সুফিয়া কামালের জন্ম হয়েছিল।
শৈশবে বাবার অনুপস্থিতিতে মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। মেয়েদের পড়াশুনায় তখন সামাজিক অনুমোদন ছিলোনা। এর ওপর আবার সুফিয়ার বাবা বাড়িতে ছিলেননা।
সে কারনে নানা বাড়িতে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি ছিল তাঁর স্বশিক্ষার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ছিলোনা। তখনকার প্রভাবশালী মুসলমান পরিবারে তখন উর্দু শিক্ষা আভিজাত্যের অংশ ছিল।
কিন্তু সুফিয়া কামাল নিজে নিজে বাংলা শেখেন। তবে পারিবারিক প্রভাবে উর্দুও তিনি চমৎকার লিখতে পড়তে এবং বলতে পারতেন। একবার বায়না ধরে পায়জামা আচকান টুপি পড়ে ছেলের সাজে স্কুলে গিয়েছিলেন।
এছাড়া বাস্তবে স্কুলে যাওয়া আর কোনদিন সম্ভব হয় নি। কিন্তু বাড়িতে অন্যান্য মেয়েদের সাথে স্কুল-স্কুল খেলা খেলতেন। এই খেলায় তিনি ইংরেজিতেই কৃতিত্বের পরিচয় দিতেন বেশি।
সুফিয়ার বড় ভাই সৈয়দ আবদুল ওয়ালী বরিশালে বেল ইসলামিয়া হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন। বাংলার প্রতি আগ্রহের কথা শুনে, ঐ হোস্টেলের পণ্ডিত বাদশা মিয়া শিশু সুফিয়ার জন্য বাংলা বইও সংগ্রহ করে দিতেন।
মায়ের সঙ্গে ১৯১৮ সালে কলকাতায় যান সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। বরিশাল থেকে তখন স্টিমারে কলকাতা যাওয়া যেত। কলকাতায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। এটি তাঁর বড় স্বপ্নের বিষয় ছিল।
তাঁর শিশু মনকে আলোড়িত আন্দোলিত করে সেই সাক্ষাৎ। বরিশালে শায়েস্তাবাদে ফিরলেও তাঁর মনে আসন স্থাপন হয়ে গেছে বেগম রোকেয়ার। যিনি বাংলার নারী জাগরনের অগ্রদূত।
রংপুরের পায়রাবান্ধায় জন্ম হলেও তিনি তখন কলকাতায়। কী ব্যক্তিত্ব বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের! মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে ১৯২৩ সালে বিয়ে হয় সুফিয়ার।
তখন এমন মামাতো খালাতো চাচাতো ফুফাতো ভাইবোনের মধ্যেই বেশিরভাগ বিয়ে হতো। সৈয়দা সুফিয়া খাতুনের নতুন নাম হয়ে যায় সুফিয়া এন হোসেন। বিয়ের পর স্বামীর নামে নতুন নামকরনের সেই ধারা আজও বাতিল হয়ে যায়নি।
এই সৈয়দ নেহাল হোসেন অবশ্য সুফিয়ার প্রথম সাহস আর প্রেরনার নাম। সাহিত্য চর্চা সমাজ সেবায় তিনি তাঁকে উৎসাহ দেন। বিয়ের পর তারা বরিশাল শহরে চলে আসেন।
এ সময় বরিশাল থেকে সরল কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘তরুণ’ পত্রিকার সাথে তাঁর স্বামী নেহাল হোসেন জড়িত হন। পত্রিকার প্রথম বর্ষ ৩য় সংখ্যায়, মিসেস এস.এন. হোসেন নামে তাঁর প্রথম লেখা ‘সৈনিক বধূ’ প্রকাশিত হয়।
‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার জন্যে বিখ্যাত বাংলার অন্যতম গীতিকবি কামিনী রায় তখন বরিশালে আসেন। একজন মুসলমান মেয়ে গল্প ও কবিতা লিখছেন এ কথা শুনে তিনি নিজে সুফিয়ার বাসায় গিয়ে তাঁকে উৎসাহিত করেন।
মহাত্মা গান্ধী বরিশাল আসেন ১৯২৫ সালে। সুফিয়া এন হোসেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের পর মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে দেখা হওয়াটা তাঁর মানসপটে রেখাপাত করে।
গান্ধীর অনুপ্রেরনায় বেশ কিছুদিন তিনি চরকায় সুতাও কেটেছেন। ১৯২৬ সালে স্বামীর সঙ্গে কলকাতা যান সুফিয়া এন হোসেন। এই বছরে তাদের প্রথম সন্তান আমেনা খাতুনের (দুলু) জন্ম হয়।
কলকাতায় সওগাত পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে তিনি বেশ কিছু কবিতা নিয়ে যান। সুফিয়া এন হোসেন তখন বোরকা পরতেন। সওগাত অফিসেও তিনি বোরকা পরে গিয়েছিলেন।
সওগাত সম্পাদক নাসিরউদ্দিন তাঁর কবিতাগুলো পড়ে বললেন কবিতা লিখো ভালো। কিন্তু ভালো কবি হতে চাইলে তোমাকে বোরকা খুলতে হবে। শরীরে আলো বাতাস না লাগলে কবি হওয়া যায়না। সুফিয়া এন হোসেন আর কখনও বোরকা পরেননি।
১৯২৬ সালে সওগাতে ছাপা হয় তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’। কবির নাম ছাপা হয় সুফিয়া এন হোসেন। ওই সময়ে স্বামীর সঙ্গে তিনি কাজী নজরুল ইসলাম সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন।
১৯৩২ সালে ক্ষয় রোগে মারা যান তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন। কলকাতায় টিকে থাকতে তিনি তখন কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারী স্কুলে চাকরি নেন। শুরু হয় আরেক সংগ্রাম।
১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত সেই স্কুলে চাকরির সময়ই কবি আব্দুল কাদির ও কবি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থ। কাজী নজরুল ইসলাম বইটির ভূমিকা লিখেন।
বইটি পড়ে এই কবি ও তাঁর কবিতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে যান। রবীন্দ্রনাথে তাঁকে তাঁর রচিত ‘গোরা’ উপন্যাস উপহার হিসাবে দেন।
১৯৩৯ সালের ৮ এপ্রিলে চট্টগ্রামের চুনতীর কামালউদ্দিন খানের সাথে তাঁর আবার বিবাহ হয়। এই বিয়ের সুবাদে তাঁর আবার নাম বদল হয়ে সুফিয়া কামাল হয়। সেই থেকে তিনি সুফিয়া কামাল হিসাবেই তিনি পরিচিত।
হারিয়ে যায় যায় সৈয়দা সুফিয়া খাতুন অথবা সুফিয়া এন হোসেন নাম দুটি। ১৯৪০ সালে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন সুফিয়া কামাল। এ বছর তাঁর ছেলে শাহেদ কামালের জন্ম হয়।
১৯৪১ সালে মারা যান তাঁর মা সৈয়দা সাবেরা খাতুন। ১৯৪৩ সালে জন্ম হয় তাঁর দ্বিতীয় ছেলে আহমেদ কামালের। ১৯৪৪ সালে সাজেদ কামালের জন্ম হয়। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে দাঙ্গাপীড়িতদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন সুফিয়া কামাল।
কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে তিনি কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে বেগম পত্রিকা প্রকাশ করেন নাসির উদ্দিন আহমদ। সুফিয়া কামালকে করেন বেগম সম্পাদক।
দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তাঁকে সভাপতি করে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান মহিলা সমিতি। এই সংগঠনটিই এখন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি হিসাবে পরিচিত।
বেগম রোকেয়ার প্রভাবে সুলতানা নামটি নানাভাবে তাঁর জীবনে কাজে জায়গা পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের নামকরনটিও তাঁর করা। তাঁর মেয়ের নাম সুলতানা কামাল। তাঁর সম্পাদনায় প্রথম পত্রিকার নাম সুলতানা।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেন সুফিয়া কামাল। পাকিস্তানে রবীন্দ্র চর্চা নিষিদ্ধ করা হলে তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। মোনায়েম খান তখন তাঁর উদ্দেশে বলেন, এত কবিতা লিখেন, আপনি রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখতে পারেননা?
রবীন্দ্র জন্মশত বার্ষিকীতে ১৯৬১ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠন করা হয় ‘সাংস্কৃতিক স্বাধীকার আন্দোলন’। ১৯৬৯ সালে তাঁকে সভাপতি করে গঠিত মহিলা সংগ্রাম পরিষদই এখন মহিলা পরিষদ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরিবারটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সুফিয়া কামাল, তাঁর স্বামী ও ছেলে দেশে থেকে এবং দুই মেয়ে ভারতে গিয়ে কাজ করেন। তাঁর ‘একাত্তরের ডায়েরি’ গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনগুলোর কার্যক্রম উল্লেখ করা আছে।
পুরো যুদ্ধের সময় তিনি এক রকম নজরবন্দী ছিলেন। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো সেনাবাহিনীর ট্রাক। ওই সময়ে তাঁর লেখা কবিতাগুলোর গ্রন্থনা গ্রন্থ ‘মোর যাদুদের সমাধিপরে’।
মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গঠন করেন ‘বাংলাদেশ মহিলা পুনর্বাসন বোর্ড’ সহ আরও কয়েকটি সংগঠন। ছায়ানট গঠনেরও তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। কঁচিকাচার মেলা, খেলাঘর, চাঁদের হাট সহ বাংলাদেশের সব সৃষ্টির সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
‘একালে আমাদের কাল’ সুফিয়া কামালের আত্মজীবনী গ্রন্থ। এতে তাঁর শৈশব, বেগম রোকেয়া সহ নানা প্রসঙ্গ বিস্তারিত আছে। ‘কেয়ার কাঁটা’, ‘মায়া কাজল’, ‘মন ও জীবন’, ‘উদাত্ত পৃথিবী’, ‘অভযাত্রিক’, ‘সাঁঝের মায়া’ তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা।
কবির সুমন তাঁকে নিয়ে গেয়েছেন হৃদয়ছোঁয়া এক গান। ‘ঐ তো লক্ষ ছেলেমেয়ে / নাতিনাতনি দামাল /সবুজ দ্বীপের মত মাঝখানে / সুফিয়া কামাল /
এক একটা দেশ থাকে মানচিত্রেই শুধু রাখা / কারুর নয়নে থাকে স্বদেশের ছবিখানি আঁকা / আমি সেই স্বদেশের ছবি দেখি আপনার মুখে / সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে। /
মাটিতে পায়ের কাছে বসেছি ধুলোর মত আমি / পৃথিবীকে চুমু খায় গানে গানে আমার বোকামি / বোকারাই গান লেখে, গান বাঁধে, গান গেয়ে মরে / এবার মরলে আমি জন্মাব আপনার ঘরে। /
আপনার ঘর মানে ঘর আর বাইরের মিল / ভাষার থালায় ভাত খেতে বসে অপার নিখিল / কারা ভাত কেড়ে নেয় সাবধান সামাল সামাল / ভাত মানে ভাষা আর খালাম্মা সুফিয়া কামাল।’
বার্ধক্যজনিত রোগে ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে। খুব সাদামাটা থাকতে তিনি পছন্দ করতেন। তাঁর ইচ্ছায় সাদামাটা শেষ শয্যাটিও হয়েছে আজিমপুর গোরস্তানে।
ব্যক্তিগত একটি কৃতজ্ঞতাঃ সাংবাদিকতায় আমি নূরজাহান স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছিলাম। সিলেটের ছাতকছড়ার মেয়ে নূরজাহান গ্রাম্য সালিশের বিচারে প্রান হারান। এরপর থেকে নারী নির্যাতন বিরোধী রিপোর্টের জন্যে পুরস্কারটি প্রবর্তন করা হয়।
যেহেতু সেই রিপোর্ট আমার করা ছিল তাই প্রথম পুরস্কারটিও আমাকে দেয়া হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন সুফিয়া খালা। সেই ছবিটা আমার সংগ্রহে নেই।
কিন্তু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে খালার ভালোবাসার স্পর্শ এখনও অটুট আছে। এমন দ্বিতীয় মহিয়সী কেউ আর আসবেননা বাংলাদেশে। ভালো থাকবেন সুফিয়া খালা। আপনি অদ্বিতীয়া।