বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ডক্টর গাউছ আজম অস্ট্রেলিয়াতে একজন সম্মানিত মৃত্তিকা বিজ্ঞানী !

বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ডক্টর গাউছ আজম অস্ট্রেলিয়াতে একজন সম্মানিত মৃত্তিকা বিজ্ঞানী !

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে গ্রেইন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (GRDC) গত ২৮ ফেব্রুয়ারী দুইজন গ্রেইন বিশেষজ্ঞকে সম্মানিত করেছেন তার মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রিস এন্ড রেজিওনাল ডেভেলপমেন্ট (DPIRD) তে কর্মরত মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ডক্টর গাউছ আজমকে GRDC রিকগনাইজিং এন্ড রিওয়ার্ডিং এক্সসেলেনেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন এবং অন্যজন আরেকজন বিজ্ঞানী জেরেমি কারিকে ইমার্জিঙ্গ লিডার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ ডক্টর গাউছ আজম ২২ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রজেক্টের প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন যেখানে গবেষণার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল ১২ মিলিয়ন হেক্টর জমি। তার প্রধান কাজটি ছিল মাটিতে এসিডিটি, ক্ষারতা ও সোডিয়ামের মাত্রা এবং পানির স্বল্পতার বিপরীতে উন্নত ফসল উৎপাদন। এই কাজটি শুধু গবেষণায় ছিলনা, যেটা সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার কৃষকদেরকে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক সাহায্যও করেছে এবং করবে।

GRDC ওয়েস্টার্ন প্যানেলের প্রধান ডারিন লি বলেন, “গাউছ একজন আবিষ্কারক যা সে কখনোই একটা বাক্সে মধ্যে চিন্তা আটকে রাখে না। তার দেয়া প্রযুক্তির প্রয়োগের অস্ট্রেলিয়ার গ্রেইন ( ধান, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য ফসল ) কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছে যা প্রমাণিত। আমি তার মৃত্তিকার রিইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির প্রয়োগে বিস্মিত।”

গাউছ আজমকে ফোনে তার এই সাফল্য অর্জনের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। মধুমতি নদীর পারে নড়াইলের টোনা গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেন গাউছ আজম। বাবা মায়ের ইচ্ছায় তিনি মাদ্রাসায় পড়ালেখা শেষে দাখিল পরীক্ষায় প্রথম হন বিধায় তার বড় ভাই গাউছকে তার সাথে সায়েন্স এ এইচ এস সি পড়ার জন্য বড়দিয়া কলেজে ভর্তি করান। সেখানেও ১৯৯৬ সালে উচ্চ্ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উজ্জলতার স্বাক্ষর রাখার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযে ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেক্ট্রনিক এ চান্স পান সাথে অন্যান্য জাহাগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পান। কিন্তু মা চাননি গাউছ তাদের ছেড়ে এতদূরে পড়ালেখা করুক। বিধায় তাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ালেখা করতে হয়েছিল কৃষি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে। সেখানেও তিনি এতোই ভালো ফলাফল করছিলেন যে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ফুল স্কলারশিপ দিয়েছিল। মজার ব্যাপারটি হলো, প্রতি সপ্তাহ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে মা বাবার সাথে সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে আবার কলেজের হোস্টেলে চলে যেতেন সাইকেল চালিয়ে ক্লাশ করতে। গাউছ আজম ২০০২ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী নেন।

ড্যানিশ সরকারের (DANIDA ) স্কলারশিপে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পড়তে যান মাস্টার্স ডিগ্রি এব সেখান থেকে ২০০৪ সালে কৃষি প্রযুক্তিতে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সেখানেই তার পরিচয় হয় শ্রীলংকান আরেক স্কলার মাটি বিশেষজ্ঞ কাঞ্চনা বিক্রামারাজির সাথে এবং বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হয়ে যান দুজনে।

এর পরে ২০১৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ এডেলেড থেকে এপলাইড সয়েল সাইন্স এর উপর পিএইচ ডি ডিগ্ৰী নেন। তাদের সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে।

জীবনের গতি পড়ালেখা থেকে ইন্ডাস্ট্রি গবেষণায় নিয়ে আনার জন্য প্রেরণা দিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রজেক্ট ম্যানেজার মিঃ ক্রিস। বলতে গেলে তিনিই তাকে অলিখিত ভাবে প্রজেক্টের ইন চার্জ বানানোর জন্য সবচয়ে বেশি উদ্দীপনা দিয়েছিলেন। এছাড়াও তার স্ত্রী কাঞ্চনা সব সময় তার পাশে থেকে সাহায্য করেছেন।

ডক্টর গাউছ আজম ২০১৮ সালে তার বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন তার প্রজেক্ট দেখাতে। তিনি তার বাবাকে নিয়ে গর্বের সাথে বলেন , “আমার বাবা একজন সফল কৃষক হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করেছেন আর কৃষক বাবা থেকে উদ্দীপনা পেয়ে আমি আমার বাবার পথ ধরে চলে কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি শুধু অস্ট্রেলিয়াতে না ,বাংলাদেশেও আমার প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করবো। এছাড়াও আমার প্রজেক্টে ১৭ জন কৃষি বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন , তাদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশী রয়েছেন।”