আনন্দ উৎসবের আমেজের মধ্যে শেষ হল অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটির ঈদ এক্সিবিশন !

আনন্দ উৎসবের আমেজের মধ্যে শেষ হল অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটির ঈদ এক্সিবিশন !

গত ১৬ এপ্রিল উৎসবপূর্ন পরিবেশের মধ্যে শেষ হলো সিডনির বাঙ্গালীদের নিয়ে গঠিত সবচয়ে বড় ঈদ এক্সিবিশনটি। এর আগে ৯ এপ্রিল ছিল প্রথম এক্সিবিশন এবং ১৫ এপ্রিল দ্বিতীয় এক্সিবিশন। বাঙ্গালীদের সবচেয়ে আকর্ষণী এবং বৃহত্তম ঈদ এক্সিবিশনটি সিডনিবাসীদের মধ্যে এতোটাই জনপ্রিয় যে, এর পরিধি সিডনি থেকে ছাড়িয়ে নিউ ক্যাসেল,ক্যানবেরা এবং মেলবোর্ন পর্যন্ত গড়িয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল উদ্বোধনীতে ছিলেন অষ্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের হুইপ হুইপ এনি স্ট্যানলি এম পি ,১৫ ও ১৬ এপ্রিল পর্যায়ক্রমে ঈদ এক্সিবিশনে এসেছিলেন ফেডারেল সরকারের প্রাক্তন এম পি লরি ফার্গাসন , নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মন্ত্রী অনুলাক চানটিভং এমপি, কারিশমা কালিয়ান্ডা এম পি এবং গ্রেগ ওয়ারেন এমপি এবং স্থানীয় কাঊন্সিলের কাউন্সিলর ডারসি লাউন্স , কাউন্সিলর ক্যারেন হান্ট ,কাউন্সিলর মাছুদ চৌধুরী , কাউন্সিলর ইব্রাহিম খলিল মাছুদ, কাউন্সিলর সাবরিন ফারুকী এবং কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে গামা আব্দুল কাদির , মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ড. আনিসুল আফছার এবং সেক্রেটারি সাদিকুর রহমান খান , স্থানীয় লেবার পার্টির নেতা সফিকুল আলম, কামাল পাশা , আশিকুর রহমান , মাছুদ পারভেজ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্ এর সাধারন সম্পাদক সেলিমা বেগম বলেন ,” আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশী আমেজ এবং আনন্দে ঈদের কেনাকানা ও উৎযাপনের সহায়ক হওয়া। সেই সাথে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নারী উদ্দ্যোক্তা যারা দেশীয় বুটিক ও ফ্যাশান ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে কমিউনিটিতে পরিচিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরী করে দেওয়া। প্রজন্ম যেন অস্ট্রেলিয়াতে থেকেও বাংলাদেশের ফ্যাশান, জিজাইন ও ঐতিহ্যে আকৃষ্ট হয় সেইদিকটাও আমাদের বিবেচ্য বিষয়। অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশী ফ্যাশান, ডিজাইনের প্রসারের বিশেষ বিবেচনায় ২০১৯ সালে সিডনী বাঙ্গালী বুটিক ক্লাবের সূচনা এবং সেই থেকে সিডনী বাঙ্গালী বুটিক ক্লাবের সদস্যদের সাথে নিয়ে ঈদ এক্সিবিশনের আয়োজন করছি আমরা। এই বছর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাঙ্গালীদের বৃহত্তম ঈদ এক্সিবিশনটি করার পিছনে বুটিক ক্লাবের সকল সদস্যের ঐক্যবদ্ধতা এবং স্থানীয় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সহযোগীতা ও উৎসাহ বিশেষভাবে উল্লেখ্য”
তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনি স্ট্যানলি বলেন ,”আমার নির্বাচনী এলাকার জনপ্রিয় সংগঠন সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি অস্ট্রেলিয়ার মাল্টি কালচারাল সমাজে নিজেদের ঐতিহ্য, সংষ্কৃতি ও মাতৃভাষা ধরে রাখার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছে। আমি সত্যিই অবাক হয়েছি এক সাথে সিডনী বাঙ্গালী বুটিক ক্লাবের ৬০ জন নারী উদ্যোক্তাদের নানান ধরণের ফ্যাশন ও বাহারি রঙের ঈদ সামগ্রীর এতো বড় প্রদর্শনীতে এসে। আমি অবশ্যই সম্মানিত বোধ করছি অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটির বৃহত্তম ঈদ এক্সিবিশনটি আমার নির্বাচনী এলাকাতেই হচ্ছে। সেই সাথে ঈদ এক্সবিশনের আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম সেলিমা বেগমকে ধন্যবাদ জানাই কমিউনিটির সাথে এই সুন্দর সম্পৃক্ততার জন্য। “
রাজ্য মন্ত্রী অনুলাক বলেন,” আমি সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটির প্রতিটি অনুষ্ঠানেই শুরু থেকেই উপস্থিত থেকেছি বিগত বছরগুলোতে। আর ২০১৯ সালে ঈদ এক্সিবিশন দিয়ে সংগঠনটি নতুন যাত্রা শুরু করে আমাদের এলাকা সহ সিডনির অন্যান্য প্রান্তের মুসলিম কমিউনিটির ঈদকে আনন্দমুখর করার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে। এতে ক্রেতা , বিক্রেতা দুই পক্ষই উপকৃত হচ্ছে ,আর অস্ট্রেলিয়া উপকৃত হচ্ছে ব্যবসার পাশাপাশি মাল্টি কালচারাল অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার সুন্দর আবহাওয়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। “
ভারতীয় জন্মানো সদ্য নির্বাচিত এম পি কারিশমা বলেন,”আমি এসেছি দেখতে ঈদ এক্সিবিশন কিন্তু এতো কালেক্শন দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি ,আমি নিজেই একজন ক্রেতা হয়ে গেলাম। মোট চারটি প্যাকেট আমার হাতে , বুঝতে হবে এইগুলো আমার ঐতিহ্যের অংশ , তাই আমিও কিনে নিলাম আমার জন্য। আমি চাই মেয়েরা অবশ্যই ঘরে বসেও স্বনির্ভরশীল হউক। ধন্যবাদ আয়োজক সেলিমাকে , নারী উদ্দ্যোক্তাদের একসাথে একত্রিত করার জন্য। “
এবারের ঈদ এক্সিবিশনে বিশেষ আকর্ষন ছিল জামদানি শাড়ির প্রদর্শনী, দিল্লী বুটিকের কালেকশন সহ উপমহাদেশের নামকরা ডিজাইনার ঈদ কালেকশন। মেয়েদের ফ্যাশান ডিজাইনের নতুন কালেকশনের পাশাপাশি ছেলেদের জন্য ছিল পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কটি , চাদর, নাগড়া, জুতি,টুপি।ঈদ এক্সিবিশনের বিভিন্ন স্টলে ছিল দেশীয় ও উপমহাদেশীয় নানান রকমের ফ্যাশান সামগ্রী, নামকরা ডিজাইনার কালেকশন,নাম করা বুটিকগুলোর ঈদ স্পেশাল কালেকশন।
বাংলাদেশের রাজশাহী, টাঙ্গাইল, মিরপুর, রাঙ্গামাটি, সোনারগাঁ, কুমিল্লা, সিলেট, নরসিংদী, পাবনা এবং ঢাকার তাঁতিদের বুনানো বিভিন্ন সামগ্রীর সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মতন। আবহাওয়া চমৎকার থাকাতে এক্সিবিশনে সারাদিন ব্যাপী ছিল সিডনির বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিদের আগমন। দেশীয় আমেজে ঈদের কেনাকাটার সুযোগ পেয়ে সিডনীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বপরিবারে ক্রেতারা উপস্থিত হয়ে ঈদ এক্সিবিশনগুলো উৎসব মুখর করে তোলেন।