গতকাল ২৬ আগস্ট সিডনির ক্যাসুলা পাওয়ার হাউজ অডিটোরিয়াম সম্পূর্ণ ধারার একক একটি সংগীতানুষ্ঠানে দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখেছিলেন সিডনির তারকা সংগীত শিল্পী এহসান আহমেদ। সিডনিতে এর আগে স্থানীয় কোন শিল্পীর একক পরিবেশনায় এতো মনমুগ্ধকর অনুষ্ঠান সিডনিবাসী এর আগে উপভোগ করেননি। কানায় কানায় পূর্ন অডিটোরিয়ামে এই সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজনের ঘোষণা দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাবার পর গানপোকার আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের দুই মাস আগেই দুঃখ প্রকাশ করে ঘোষণা দিতে হয়েছিল ‘সোল্ড আউট’ এবং যারা অনুষ্ঠান দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু টিকিট কিনতে পারেননি তাদের জন্য।
অডিটোরিয়ামের শব্দ নিয়ন্ত্রণ ঠিকঠাক করতে কিছুটা বাড়তি সময় লাগাতে অনুষ্ঠান কিছুটা বিলম্বিত হয়ে সন্ধ্যে সাতটায় শুরু হয় ইমতিয়াজ রিশার উপস্থাপনায়। রিশা শুরুতেই বাংলায় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সন্মান জানান। অস্ট্রেলিয়ার এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এরপর কিছু স্মৃতি এবং তথ্য তুলে ধরেন তার স্কুল-কলেজ জীবনের বন্ধু এহ্সানকে নিয়ে। পরবর্তীতে এহ্সানকে মঞ্চে এসে গানের পর্ব শুরু করেন। কিছু কথা ,সুরের মূর্ছনা এবং কিছুটা বাজনা ঝংকার এই দিয়ে কয়েকটি পর্বে গানের পরিবেশনা করেন এহসান। গানের মিশ্রণ ( ব্লেন্ডিং) এতোটা চমৎকার ছিল যে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত উপভোগ করেন। গানের সুর ,তাল ,লয় মিলিয়ে পল্লীগীতি ,মুর্শিদী ,ভাওয়াইয়া , ব্যান্ডের সংগীত , চলচিত্রের গানের মিশ্রণ এবং দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনা ছিল অসাধারণ।
পুরাতন দিনের রুনা লায়লার সেই বিখ্যাত গান ‘ধামাধাম মাসকালেন্ডার ‘ গান শুরুর সাথে সাথেই দর্শকরা রীতিমতো উচ্ছসিত হয়ে উঠে এবং এহসানের তালে তালে অনেকেই গান গাইতে থাকেন।
জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে ছিল , ‘দিন যায় কথা থাকে.. ‘, ‘বেদের মেয়ে জোস্না আমায় কথা দিয়েছে ….’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ‘,’আমি বাংলায় গান গাই.. .’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর ‘, ‘তুমি কেন বুঝো না তোমাকে ছাড়া ..’,’এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না…. .’,শুনো মোমিন মুসলমান ….’
সিডনির সবচেয়ে পুরাতন এবং জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘bangla-sydney.com’ এর সম্পাদক আনিসুর রহমান তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অনুস্থান নিয়ে লিখেন, “গতরাতে অসাধারণ একটা অনুষ্ঠান উপহার দিলেন গানপোকা এহসান! আমার বিদেশিনী স্ত্রী বাংলা ভালোই বলে কিন্তু বাংলা গানের রসাস্বাদন করতে পারে না, তাই বাংলা গানের অনুষ্ঠানে যেতে চায় না। ব্যান্ডের গান হবে, ভালো লাগবে, এসব বলে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম এক শর্তে, ভালো না লাগলে বিরতির সময় চলে আসব। অসাধারণ কিছু গান শোনালেন এহসান। বিরতির সময় ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “আরো দেখবা না চলে যাবা?” ও মুচকি হেসে বলল দেখি…”
অনুষ্ঠানের বিরতির পরের পর্বে ধাঁধার আসরে অঙ্গ নেয় সিডনির সেরা নৃত্য শিল্পী অর্পিতা সোম চোধুরী। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত তিনটি গানের কথা দেখে অর্পিতা নাচবে এক মিনিট , আর সেটা দেখে দর্শক গ্যালারি থেকে বলতে হবে গানের কলি। অর্পিতার নাচ এতোই নিখুঁত যে এই পর্বে একধিক দর্শক সবঠিক উত্তর দিয়েছিলেন। এর পরই এহসানের কণ্ঠে গাওয়া মিশ্র গানের তালে তালে অর্পিতা অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন করেন।
একটি বিষয়যে দিকে চোখ সবারই পড়েছিল সেটি হলো প্রতিটি গানের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনে ভিডিওর পরিবেশনা ছিল বেশ আকর্ষণীয়। যখন এহসান গাইছিলো ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগরপারি দিবো রে ‘ এই গানের পিছনে ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ , ২৫ মার্চ কালরাত্রি ,মুক্তিযুদ্ধ , পাক হানাদার বাহিনী অত্যাচার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ‘ পুরো প্রেক্ষাপটটা গানের সাথে ভাসছিলো স্ক্রিনে।
সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এহসানের গান শুনতে এসেছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব , বিভিন্ন সংগঠক , পেশাজীবী , শিল্পী এবং ব্যবসায়ীরা।
গানের পর্ব শেষ হয় রাত ১১ টায়। উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানা হয়। অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করতে যারা সর্বাত্মক সাহায্য করেছিল তাদের যন্ত্রশিল্পকর্ম দিয়ে তাদের মধ্যে ছিলেন তবলায় অভিজিৎ , সেতারে অজিত ,লিড গিটারে তপন , বাস গিটারে খালিদ , মন্দিরে লোকমান , কিবোর্ডে রুশনান , ড্রামে শাওন , গিটারে সুমায়েল এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন আত্ত্বাবুর রহমান।