গত ৯ ডিসেম্বর (শনিবার) সিডনির ব্যঙ্কসটাউনের ব্রায়ন ব্রাউন থিয়েটারে হাসন রাজা পরিষদ আয়োজিত হাসন রাজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। হাসন রাজার বংশধর সিডনির শুদ্ধধারার প্রানপুরুষ ও শুদ্ধ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক সোলায়মান আশরাফী দেওয়ান ও তার স্ত্রী সিডনির বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রাবন্তী কাজী ছিলেন এর প্রধান উদ্যোক্তা।
তানিয়ার সাবলীল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও হাসন রাজার উত্তরাধিকারী সোলায়মান আশরাফী দেওয়ান ও শ্রাবন্তী কাজী হাসন রাজা ও তার সৃষ্টি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন। স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহনে গান করেন সিডনির চারু শিল্পীগোষ্ঠীর আয়েশা কলি, রোখসানা ও আনিসুর রহমান দম্পতি এবং হাসন রাজার আরেক বংশধর, হাসন রাজা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এহসান রেজা। আয়েশা কলি ও শ্রাবন্তী কাজী একটি গীতি নকশা উপস্থাপন করেন।
হাসন রাজার গান ও অন্যান্য লোকসংগীত নিয়ে আসেন একুশে পদকপ্রাপ্ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর সহধর্মিনী দীপ্তি রাজবংশী। স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহনে পথ প্রোডাকশনের প্রযোজনায় হাসন রাজা বিষয়ক কাল্পনিক নাটক পিন্জিরা পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ থেকে আগত প্রথিতযশা সংগীত শিল্পী সেলিম চৌধুরী একে একে হাসন রাজার বিখ্যাত গান এবং অন্যান্য লোকসংগীত পরিবেশন করেন। তিনি হাসন রাজার স্মৃতি চারণ মূলক ছোট ছোট গল্প কথায় তার জনপ্রিয় গান গুলো দর্শকদের শোনান। এর মধ্যে আজ পাশা খেলবো রে শ্যাম, বৃষ্টি পরে টাপুর-টুপুর পায়ে যে সোনার নুপুর, হুমায়ন আহমেদের স্মরণে তার লেখা চাঁদনী পসর রাইতে কে আইসা দাড়ায় শুধু আমার দুয়ারে গানটি গেয়ে দর্শকদের বিমোহিত করেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পী সেলিম চৌধুরীকে সম্মানসূচক ক্রেস্ট প্রদান করেন বাংলাদেশ সরকারের কনসাল জেনারেল মো: সাখাওয়াত হোসেন ও চ্যান্সেরী প্রধান কনসাল আশফাক হোসেন। কনসুলেট জেনারেল মো: শাখাওয়াত হোসেন এইরকম একটি সুন্দর আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ কনসুলেট অফিসের পক্ষ থেকে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। হাসন রাজা পরিষদের পক্ষ থেকে শিল্পী দীপ্তি রাজবংশীর হাতে সম্মাননা তুলে দেন কাউন্সিলর সাজেদা আক্তার সানজিদা।
অনুষ্ঠানে ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মোঃ ইব্রাহীম খলিল মাসুদ ও ক্যানটারবুরি ব্যাঙ্কস টাউনের কাউন্সিলর সাজেদা আখতার সানজিদা ও কাউন্সিলর সাবরিন ফারুকি উপস্থিত ছিলেন।
দেশ ছেড়ে আসা ও অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি প্রজন্মকে দেশের শেকড়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের পূর্ব-পুরুষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সোলায়মান আশরাফী দেওয়ান ও শ্রাবন্তী কাজী হাসন রাজা উৎসব এর পরিকল্পনা করেন।
লীড গিটার, বেস গিটার, কীবোর্ড, অক্ট্যাপ্যাড, বায়া-তবলা, জিপসী, মন্দিরা ও অন্যান্য যন্ত্রসংগীতে সংগত দিয়েছেন তমাল, রাসেল, শাহরিয়ার, হাসান, নীলাদ্রি, রাসনা, নামিদ ফারহান প্রমুখ। অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল সোলায়মান আশরাফী দেওয়ান ও তার স্ত্রী শ্রাবন্তী কাজী দম্পতির প্রতিষ্ঠান প্রভাত ফেরী, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমি ও স্ট্যামফোর্ড এডুকেশন, পথ প্রোডাকশন এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর শাহে জামান টিটু।
মঞ্চ ও ফটোবুথ ডেকরেশনে ছিলেন সিডনির প্রথিতযশা ডেকরেটর কানিতাস্ এর কর্ণধার কানিতা ও তাঁর টীম। প্রাচীন জমিদার বাড়ির আবহে সাদা ঘোড়ার থীমে এক ধ্রুপদী চিত্রকল্প অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। মঞ্চ সজ্জায় আলোক প্রক্ষেপণ, হাসন রাজার মুল বাড়ির ও সিলেটের হাওর অঞ্চলের দৃশ্য প্রক্ষেপণ একটি ধ্রুপদী আবহ তৈরী করে দর্শক শ্রোতাদের নস্টালজিক করে তোলে। সবশেষে সোলায়মান দেওয়ান ও শ্রাবন্তী কাজী আগত অতিথিদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।