পূরবী পারমিতা বোস:শেষ মুহূর্তে হলের ভেতরে যখন মঞ্চ ও সাউন্ড ঠিকঠাকের কাজ চলছে বাইরে তখন একটু একটু করে দর্শক শ্রোতার ভীড় বাড়ছিলো । হলের বাইরে বিশাল খাবারদাবারের স্টলে দাড়িয়ে মজাদার খাবার আর চা কফি খেতে খেতে তখন আলোচনা চলছে কে কোন গান শুনতে চায়।শিল্পীর কোন কোন গান সবচেয়ে জনপ্রিয় এইসব।এর মাঝে মাইক হাতে দেখা গেল সিডনীর বাঙ্গালি কমিউনিটির সবার প্রিয়,সুপরিচিত মুখ বিশিস্ট তবলা শিল্পী সাকিনা আক্তারকে।তিনি ঘুরে ঘুরে দর্শক শ্রোতার মিতালীকে নিয়ে অনভুতি ও কি গান তারা শুনতে চাইছেন তা ক্যামেরা বন্দী করছিলে।তার সাথে শ্রোতাদের কথা শুনেই বোঝা গেল বাংলা গানের পাশাপাশি হিন্দী ও গজল শোনার শ্রোতারাও আছেন অনেক।বাংলাদেশীয় অনুষ্ঠানে হিন্দী গান!অবাক হচ্ছেন!না অবাক হবার কিছু নেই ,কারন যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে এবং যার গান শোনার জন্য অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছে তিনি হলেন বাংলাদেশ ভারতের স্বনামধন্য সংগীত শিল্পী, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ,বিখ্যাত সব বাংলা ,হিন্দী ও গজলের সুকন্ঠী গায়িকা মিতালি মুখার্জী।
গত ২৮ জুলাই শনিবার সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের সায়েন্স হলে বাংলাদেশ আইডল অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা,সফল আয়োজক,স্বপ্রতিষ্ঠিত গুনী সংগীত শিল্পী দম্পতি আতিক হেলাল ও আরফীনা মিতার এবারের আয়োজন ছিল মিতালী মুখার্জীর একক সংগীত সন্ধ্যা “গানে গানে মিতালী” অনুষ্ঠান উপস্হাপনায় সিডনির একজন সফল ব্যক্তিত্ব ,আলোকিত গুনীজন জনাব আকিদুল ইসলামের উপস্হিতি ছিলো একটা চমকের মত।তিনি একজন সফল আয়োজক ও উপস্হাপক।
অনু্ঠানের শুরুতেই চিত্রা সিং এর বিখ্যাত গান” আমার দূয়ার থেকে তোমার আঙ্গিনা বুঝি সরে গেছে আজ বহুদুর” গানটি পরিবেশন করেন আরফীনা মিতা।অপুর্ব ছিল তার পরিবেশনা।এরপর এই সময়ের ভীষন জনপ্রিয় একটি আধুনিক গান,”কি করে বলবো তোকে “পরিবেশন করেন বিশিষ্ট তবলা শিল্পী জিয়া। দর্শকের চোখ যখন প্রিয় শিল্পীকে খুঁজছে তখনই মঞ্চে প্রবেশ করেন বিখ্যাত সব বাংলা গান ,হিন্দি গানের সম্রাজ্ঞী বাংলাদেশের ময়মনসিংহে জন্ম নেয়া প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী মিতালী মুখা্র্জী। লাল-সোনালী কাঞ্চীভরম শাড়ীর সাথে কন্ট্রাস্ট কালো-সোনালী জারদৌসী ব্লাউজ আর হালকা কার্ল করা চুলের সাজে তাকে সত্যি সম্রাজ্ঞী মনে হচ্ছিল। তিনি শুরুতেই ধন্যবাদ জানান আয়োজক ,দর্শক ও স্পনসরদের সবাইকে।তিনি বলেন বাংলা গান মানেই বাংলাভাষার চর্চা আর বাংলা ভাষা মানেই কবিতার মত কিছু পংতি।এই সময় তিনি কবি শামসুর রহমানের বিখ্যাত কবিতা বাংলা ভাষা উৎচারিত হলে আবৃত্তি করেন।
বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে নিকানো উঠোনে ঝরে
রোদ , বারান্দায় লাগে জ্যোৎস্নার চন্দন । বাংলা ভাষা
উচ্চারিত হলে অন্ধ বাউলের একতারা বাজে
উদার গৈরিক মাঠে , খোলা পথে , উত্তাল নদীর
বাঁকে বাঁকে , নদীও নর্তকী হয় ।যখন সকালে
নতুন শিক্ষার্থী লেখে তার বাল্যশিক্ষার অক্ষর ,
কাননে কুসুম কলি ফোটে , গো রাখালের বাঁশি
হাওয়াকে বানায় মেঠো সুর , পুকুরে কলস ভাসে ।
আবৃত্তি শেষে সবাইকে তার সাথে গান গাইবার অনুরোধ করে তিনি শুরু করেন তার প্রথম গান,”পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়।”হল ভর্তি সকল দর্শক তার সুরে সুর মিলিয়ে একসাথে গেয়ে ওঠেন এই গান। এরপর একে একে তিনি তার জনপ্রিয় ৪টি গান গেয়ে শোনান। হারানো দিনের মত হারিয়ে জীবন নামের রেল গাড়িটা সুখ পাখীরে এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই। গানের মাঝে মাঝে চলছিল গানের পেছনের কথা ,তার সংগীতের কথা।
বিরতি শেষে তিনি আবারো শুরু করেন তার গানের আসর। এই সময় তিনি তার জনপ্রিয় আরো ৪টি বাংলা গান পরিবেশন করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আকাশের সব তারা ঝরে গেলে “কেন আশা বেঁধে রাখি “ বহুল জনপ্রিয় এই গানটি গাইবার সময় তিনি বলেন এই গানটি তার ছোট ভাই প্রদীপ মুখার্জীর কথা ও শিল্পীর নিজের সুরে তার অকাল প্রয়াত বড় ভাই দীপক মুখার্জীর স্মরনে করা। “যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে” গানটি গাইবার সময় তিনি আতিক হেলালকে তার সাথে গাইবার জন্য অনুরোধ করেন।দুজনের পরিবেশনাই ছিল অসাধারন। এর মাঝেই তিনি যন্ত্রশিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দেন ।এই পর্বটি ছিল দারুন আকর্ষনীয় ।যন্ত্রে যারা ছিলেন তাদের প্রত্যেকের পরিচয়ের সাথে সাথে তারা তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ যন্ত্রের মোহনীয় বাদন যেন সারা হলে এক অপুর্ব মূর্চ্ছনা তুলেছিল। লিড গীটারে হাসান তবলায় জিয়া কিবোর্ডে রূপতনু বেস এ রানা অক্টোপ্যাডে ছিলেন উজ্জ্বল।
আতিক হেলাল ও আরফীনা মিতা এসে একে একে স্পনসরদের সবাইকে সস্ত্রীক মঞ্চে ডেকে নেন।এই অনুষ্ঠানের স্পনসর ছিলেন বাংলাদেশ থেকে কে কে ট্রাভেলস এবং সিডনি থেকে লিংকার্স রিয়েল এস্টেট এবং বাংলাদেশ প্যালেস। লিংকার্স রিয়েল এস্টেটের কর্নধার জনাব মাহমুদ হোসাইন শিল্পীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।এছাড়াও ক্যান্টাবেরি – ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর শাহে জামান টিটু, বাংলাদেশী আইডল এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে মিতালি মুখার্জীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। বাকি সবাই শিল্পীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আরফীনা মিতা যন্ত্রশিল্পীদের ফুলের তোড়া উপহার দেন। সবশেষে সবার অনুরোধে উনি একটি বিশেষ গজল পরিবেশন করেন।এক পর্যায়ে কয়েকজন শ্রোতাদর্শক কে তার সাথে মঞ্চে ডেকে নেন গান গাইবার জন্য।তার টুকরো টুকরো গানের সাথে গলা মিলিয়ে গান ও সবার আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে শেষ হয় মিতালীর একক সংগীত সন্ধ্যা।