বিগত ১০ই নভেম্বর ’১৮ মাদার ল্যাংগুয়েজেস কঞ্জারভেশন(এমএলসি) মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশন্যাল ইনক এর বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিডনীর লাকেম্বা পাবলিক লাইব্রেরী সংলগ্ন ইসিআরসি কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত এই বার্ষিক সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের লাকেম্বা টিম লিডার জনাব আজাদ আবুল কালাম। এমএলসি মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারপারশন জনাব নির্মল পাল একুশের চেতনায় পৃথিবীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষা সংরক্ষণে পবিত্র অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে সময়মত উপস্থিত হওয়ার জন্য উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সাধারণ সভার আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেন। শুরুতে সংগঠনের পরিচালক(প্রশাসন)জনাব হোসাইন মহসিন এর পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং সংগঠনের সম্মানিত সদস্য সাবেক কাউন্সিলর জনাব রাজ দত্ত। বক্তব্যে তিনি সিডনীর এসফিল্ড পার্কে মহান ‘একুশ’ উদযাপন, এবং নির্মল পালের সাথে তাঁর প্রায় দেড় যুগের নিবিড় সাংগঠনিক সম্পর্ক, নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে অখণ্ড প্রাচীন ভারতীয় সম্প্রীতিমূলক সংস্কৃতির সাথে অস্ট্রেলিয়ার বহুজাতিক সমাজ ব্যবস্থার সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে ‘দীপাবলি উদযাপন’কে একক ধর্মীয় বিশ্বাসের উর্ধ্বে তুলে সকল মানুষ, সমাজ এবং সভ্যতার কল্যাণমূলক অনুষ্ঠানে উত্তীর্ণ করায় তাঁর উদ্যোগ, নেতৃত্ব এবং বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সকল ভাষাভাষীর কাছে এমএলসি মুভমেন্টের কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতার যথার্থতা এবং অনিবার্যতার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেন। তাঁর বক্তব্যের পর জনাব হোসাইন মহসিন সংগঠনের বার্ষিক রিপোর্টের কপি সকলের মাঝে বিতরণ করে তা উপস্থাপনের মাধ্যমে সংগঠনের ব্যতিক্রমী প্রশংসনীয় অর্জনের বিস্তারিত তথ্যাদি তুলে ধরেন। উপস্থাপিত বার্ষিক রিপোর্ট অনুমোদনের পর সংগঠনের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের খতিয়ান এবং গঠনতন্ত্রে আনীত কতিপয় সংযোজনীসহ সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করেন যথাক্রমে পরিচালক(হিসাব)মিস সপ্তর্ষি তিথন পাল, এবং লাকেম্বা টিম লিডার জনাব আজাদ আবুল কালাম। সুন্দর, পরিমিত এবং পরিচ্ছন্ন লিখিত উপস্থাপনার প্রশংসা নিয়ে সব কয়টি রিপোর্ট সভায় সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। সাধারণ সভার প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রতিষ্ঠাতা জনাব নির্মল পাল বিগত দিনে মাতৃভাষা, মানবসভ্যতা এবং সর্বোপরি সামাজিক কল্যানে সকলের ঐকান্তিক পরিশ্রম এবং বার্ষিক সাধারণ সভায় সুন্দর উপস্থাপনার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। সবশেষে তিনি বর্তমান কার্যকরী কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করেন এবং নতুন কমিটিতে নতুন প্রেরনা-উদ্দীপনায় কাজ করার বিনীত অনুরোধ জানিয়ে প্রথম অধিবেশনের ইতি টানেন।
বার্ষিক সাধারণ সভার দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরুতে নতুন কমিটি গঠন কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য চেয়ারপারশন কর্তৃক পোলিং অফিসার হিসেবে মিসেস আসমা আলমের নামের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। পোলিং অফিসারের সহায়তায় বিগত ৭ই নভেম্বর’১৮ পর্যন্ত জমাকৃত মনোনয়নপত্র সমূহ যাচাই বাছাই পূর্বক ২০সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যকরী কমিটির নাম চূড়ান্ত করা হয়। আগামী ২০১৮-‘২০ বছরের জন্য চূড়ান্তকৃত দ্বিবার্ষিক নতুন কার্যকরী কমিটিতে নির্বাহী পরিচালকঃ জনাব আজাদ আবুল কালাম; পরিচালক প্রশাসনঃ জনাব হোসাইন মহসিন; পরিচালক হিসাবঃ মিস সপ্তর্ষি তিথন পাল; পরিচালক গবেষণাঃ জনাব আজাদুল আলম; পরিচালক প্রচারনা এবং সমন্বয়ঃ ডঃ অজয় কর; পরিচালক প্রকাশনাঃ জনাব আউয়াল খান; নির্বাহী সদস্যগণঃ জনাব রাজ কুমার দত্ত, জনাব দিমিত্রি লুচনিকভ, জনাব পরমেশ ভট্টাচার্য, জনাব অভিজিৎ দাস, জনাব আনিসুর রহমান, জনাব মামুন রশিদ, জনাব শাহ্জাহান, ডঃ শাহাদাৎ হোসাইন, মিস শাপলা মিষ্টি পাল, ডঃ যীশু দাস গুপ্ত, ডঃ অমল চক্রবর্তী, জনাব মোসারফ হোসাইন এবং মিসেস আসমা আলম রয়েছেন। উল্লেখ্য, কমিটির সদস্য ডঃ অজয় কর, ডঃ যীশু দাস গুপ্ত, ডঃ অমল চক্রবর্তী, জনাব মোসারফ হোসাইন একই সাথে দলনেতা হিসেবে যথাক্রমে
এসিটি, কুইন্সল্যান্ড, সাউথ অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া স্টেটে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
উল্লিখিত নতুন কার্যকরী কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে স্বাগত বক্তব্যে সকলকে অভিনন্দন জানান সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারপারশন জনাব নির্মল পাল। দ্বিতীয় অধিবেশনের শেষে সকলকে নিয়ে এমএলসি মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশন্যাল ইনক এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী “কন্সারভ ইউর মাদার ল্যাংগুয়েজ” বার্তায় সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণে একুশে চেতনার বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনে সাধ্যমত সবকিছু করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত নির্বাহী পরিচালক জনাব আজাদ আবুল কালাম। তাঁকে এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রদান করে সংগঠনের উদ্ভাবিত এবং গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রদানের বিশেষ অনুরোধ জানান। সভার শেষ পর্যায়ে চেয়ারপারশন জনাব নির্মল পাল বার্ষিক সাধারণ সভা সুসম্পন্ন করার জন্য সকলকে উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এখানে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন যে, এমএলসি মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশন্যাল বিশ্বব্যাপী সকল ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষা সুরক্ষার কৌশল হিসেবে ইতিমধ্যে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপনার দৃষ্টান্ত স্থাপনে সমর্থ হয়েছে। যারমধ্যে এসিটি, ফেডারেল এবং এনএসডব্লিউ পার্লামেন্টের সব কয়টিতেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে সর্বসম্মত মোশন পাশ, এনএসডব্লিউস্থ কাম্বারল্যান্ড কাউন্সের প্রতিটি লাইব্রেরিতে, এসিটি’র প্রতিটি লাইব্রেরীতে এবং বাংলাদেশ লাইব্রেরী এসোশিয়েশন এর সাথে নিবন্ধনকৃত ৩৫০০ লাইব্রেরীর প্রত্যেকটিতে “একুশে কর্নার” স্থাপনার সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং সকল ভাষাভাষীর কাছে প্রশংসিত। অধিকিন্তু সংগঠনের উদ্ভাবিত কৌশলগুলির বিষয়ে ইউনেস্কোর প্রশংসাপত্র এবং বিশ্বব্যাপী বাস্তবায়নে ইউনেস্কোর নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ এমএলসি মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশন্যাল কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় স্থান করে দিয়েছে।