অনলাইন ডেস্কঃ ০৮ আগস্ট ২০১৫
“এমন মানব সমাজ, কবে গো সৃজন হবে? যে দিন হিন্দু-মুসলমান–বৌদ্ধ–খ্রিষ্টান, জাতি গোত্র নাহি রবে!”
যুগে যুগে এমন ‘লালন’ আমরা খুঁজে ফিরি। যেখানে মুক্তচিন্তা আমাদের মুক্তির পথ দেখায় সেখানে ধর্মের নামে ইসলাম ধর্ম কী বলে, আর আমরা কি করি? বিষয়গুলো মনে হয় পরিষ্কার হওয়া উচিত! “সে” মনে করে, আমি তো এক জন ধর্মান্ধ, এক জন ধর্মভীরু, জান্নাত–জাহান্নামকে নিয়ে তার ব্যাপক পড়াশুনা! জান্নাতে একটি ফ্ল্যাট বুকিং সহ হুর-পরীদের নিয়ে বসবাস করতে চাইলে; কি করতে হবে? কাজটা কঠিন কিছু নয়, ধর্ম ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত সম্ভাব্য কিছু জাহান্নামবাসীকে জাহান্নামে পাঠানোর পথ করে দিলেই চলবে। তবেই “সে” হবে প্রকৃত মুসলামন, সাথে থাকছে জান্নাতের সকল সুযোগ সুবিধা!
এ বার আসি ব্লগ এবং ব্লগার কী?
ব্লগ হলো তা দিয়ে ইন্টারনেট চালানো একটি হারাম বস্তু, যা ইসলাম ধর্মের ভিক্তি কোরআন- হাদিসের খুঁটিকে গলা ধাক্কা দিয়ে ডোবা-নালায় ফেলে দেয়! আর যারা এই ব্লগ বস্তুটি চালায় তারাই হচ্ছে ব্লগার, মানে শয়তানের প্রজন্ম বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের কতিপয় ধর্মব্যবসায়ী–মৌলবাদী গোষ্ঠী-জঙ্গিরা।
নামগুলো আমরা ভুলে যাই নাই, গণজাগরণের রাজীব হায়দার, বুয়েটের দীপ, মুক্তমনার অভিজিৎ, অনন্তবিজয় দাস, অয়াশিকুর বাবু আর সর্বশেষ আজ নিলয় নীল!
প্রতিটি হত্যাকান্ড যেন কলমের বিরুদ্ধে চাপাতির যুদ্ধ!
আমরা যারা কলম দিয়ে লিখছি তারা আসলে একটি যুদ্ধ করছি। কেউ কেউ এ যুদ্ধে জিতেছি, কেউ বা চাপাতির আঘাতে পরাজিত! আমরা জানি না এর শেষ কোথায়? শুধু জানি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কলম চালিয়ে যেতে হবে শেষ পর্যন্ত। সবার মুখে এক প্রশ্ন— আমাদের প্রশাসনের কাছে কেন এই সব জঙ্গি-মৌলবাদীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে? কেনই বা ধরা পড়া জঙ্গিদের বিচার প্রক্রিয়া স্লথ এ দেশে? ধর্মকে লালন পালন করে যারা রাজনীতি করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করবার সময় এসেছে। কারণ তাঁরা এখনও ধর্ম ব্যবসায়ীদের বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন। শক্ত হাতে এঁদের দমন করা না গেলে দেখবেন এঁরাই এক দিন আপনাকে ফতোয়া দিয়ে বেত্রাঘাত করবে! ‘বাংলাদেশ’ এমন ছিল না ১৯৭৫ পূর্ববর্তী সময়েও, একই সালের এই অগষ্ট মাসেই বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, নেমে আসে এক অন্ধকারের যুগ। আর এই সুযোগে ক্ষমতার মধু আহরণের জন্য যারা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বীজ বপন করেছিলেন, তাঁরাই আজ মুক্তমনা কলমদের হত্যার জন্য দায়ী।
একটি সমীকরণ মেলাতে ইচ্ছে করছে। ব্লগারতো আগওে ছিল, সোশাল মিডিয়ায় আমরা অনেক আগে থেকেই লেখা-লেখি করতাম। কিন্তু আগে তো চাপাতির আঘাত খেতে হতো না কাউকে, তবে এথন কেন? কেন আল-কায়দা বাংলাদেশে এই সব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করছে? যেখানে ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার হিসাব করলে সিংহ ভাগ জনগণ মুসলমান। কই, তখন তো আল-কায়দা বা ইসলামিক জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। তবে এখন কেন?
ভাবতে হবে, এটা কোনও অভ্যন্তরীণ অপশক্তির আর্ন্তজাতিক চক্রান্ত নয় তো? আর যদি চক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে এ চক্রান্ত আমাদের এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে তা-ও আমাদের চিন্তা করতে হবে।
সময় এসেছে বাংলাদেশের সকল ইসলামিক প্রতিষ্ঠানকে একটি সরকারি তালিকার আওতায় আনার। সঙ্গে এই সব অপরাধের জন্য বিশেষ বিচার ব্যবস্থা তৈরি করে জঙ্গিবাদীদের কঠোর বিচার করতে হবে। তবেই হয়তো আমরা জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাব।
(লেখক:খালেদুর রহমান শাকিল, সভাপতি, যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ, সুত্রঃ আনন্দবাজার )