ধর্মের নামে অপরাধ: সরকার কঠোর হতে পারে না কেন

ধর্মের নামে অপরাধ: সরকার কঠোর হতে পারে না কেন

অনলাইন ডেস্ক: ০২ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে বইয়ের প্রকাশকদের ওপর দুটো হামলার ঘটনার পেছনেই ইসলামপন্থী জঙ্গী গোষ্ঠী রয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।

এর আগে একের পর এক ব্লগার খুন হয়েছেন, কিন্তু কোন ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারো শাস্তি হয়নি।

অনেকেই মনে করেন, ধর্মকে ব্যবহার করে যারা অপরাধ করছে, তাদের ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে না – ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান’ – এই বিবেচনায়।

কিন্তু জঙ্গী কর্মকাণ্ড দমনে একটি রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে বাধা কোথায়?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু ইসলাম-পন্থী জঙ্গীদের উত্থান, একের পর হামলার ঘটনায় তাদের সন্দেহ করা এবং এদের দমনের ব্যাপারে দৃশ্যমান বড় সাফল্য না থাকার কারণে এখন প্রশ্ন উঠেছে যে শুধু শক্তি দিয়ে এদের থামানো সম্ভব কিনা।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, বিষয়টি রাজনৈতিক ও আদর্শিক, আর এর জন্যে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে এক হয়ে লড়াই শুরু করতে হবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন এ ব্যাপারে একমত যে জঙ্গী দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার একমাত্র পথ নয়।

তিনি বলেণ, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করে একটি প্রকৃত অসাম্প্রাদয়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার কাজ এখন অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে এখন বেশি কঠিন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গী দমনের দাবী করলেও বাস্তবে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। সমালোচকরা মনে করেন, বাস্তবে সরকার জঙ্গী দমনে বড় কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি রাজনীতিতে ধর্মের গুরুত্বের কথা চিন্তা করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায় ঢাকায় বই মেলা প্রাঙ্গণে খুন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকার শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারছে না, কারণ বিরোধীরা তাদের বিরুদ্ধে ধর্মের কার্ড ব্যবহার করে। তাঁর ইঙ্গিত ছিল বিএনপি’র দিকে।

কিন্তু বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান পাল্টা প্রশ্ন করেন যে ধর্মের কার্ড রাজনীতিতে কে ব্যবহার করে না?

“এত বড় সংবিধান সংশোধন করা হলো তার পরও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হলো – এটা কি ধর্মের কার্ড ব্যবহার নয়? নির্বাচনের সময় মোনাজাতে ছবি দিয়ে পোস্টার করাটা কি ধর্মের কার্ড ব্যবহার নয়?” – বলেন তিনি।

মি. খান বলেণ, “কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই ধর্মই কি এটা অনুমোদন করে যে আপনি মানুষ খুন করবেন? তাই এখানে ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে আসার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।”

ব্লগারদের ওপর হামলার ব্যাপারে সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর সাক্ষাৎকারে আরো বলেছিলেন যে সরকার একটি সূক্ষ্ম রেখার ওপর হাটছে এবং তাঁরা চান না কেউ তাদের নাস্তিক হিসেবে দেখুক।

মি. লেনিন বলছেন, ইসলামের বিষয়টি বাংলাদেশে একটি স্পর্শকাতর ব্যাপার, আর তাই সজীব ওয়াজেদ জয় বাস্তব অবস্থার কথাই তুলে ধরেছেন।

“আমাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামাত আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মের বিরুদ্ধে ইসলামের বিরুদ্ধে বলে চিহ্নিত করতে চায়। এতে যে কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছে না তাও নয়। তাই মানুষ যেন আমাদের ভুল না বোঝে সেজন্যেই এ কথা বলা।”

তবে বামপন্থীরা রাজনীতিতে ধর্মের কার্ড ব্যবহারের বিষয়ে বড় দুটো দলকেই দায়ী করছে এবং এই বিষয়টি জঙ্গীবাদ উত্থানে সহায়তা করছে বলে এঁরা মনে করেন।

কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ বা সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, ভোটের রাজনীতির জন্যে এটা করা হচ্ছে।

মি. সেলিম বলেন, তারা এই ইসলাম কার্ড ব্যবহারের জন্য পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। সব পক্ষই নিজেদের অন্যের চেয়ে বেশি ইসলাম-পসন্দ বলে প্রমাণের চেষ্টা করছে। ব্যাপারটা এখন আর উগ্র জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতায় সীমিত নেই। এখন সাম্প্রদায়িকতাকে সামাজিকীকরণের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধে বড় দুটো দলের সদিচ্ছা দেখতে পাচ্ছেন না মি. সেলিম।

তবে নজরুল ইসলাম খান মনে করেন, এক্ষেত্রে একটি রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে।

মি. খানের কথায়, “যদি সদিচ্ছা-আন্তরিকতা নিয়ে সব পক্ষ আলোচনা করে তাহলে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যে কি করলে এটা বন্ধ হবে। কিন্তু আলোচনাটা তো হতে হবে। এক পক্ষ অপরকে অভিযুক্ত করলে তো সে সুযোগ থাকে না। জনগণ এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ, তাহলে জনগেণের নামে যারা রাজনীীত করে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু উদ্যোগটা সরকারেরই নিতে হবে।”

জঙ্গী দমনের ইস্যুতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য হতে পারে বলে মনে করেন মি. লেনিনও। তবে তিনি বলেন যে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে। (সুত্রঃ বিবিসি বাংলা )