অনলাইন ডেস্ক: ০২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬
দুপুর থেকেই হাজারো মানুষের অপেক্ষা। তখনও উদ্বোধন শেষ হয়নি। বিকেল ৫টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছেন। টিএসসিতে দাঁড়ানো মাত্র চোখে পড়লো হাজারো মানুষ। উশখুশ করছেন বইমেলা প্রাঙ্গণে ঢুকবেন বলে। কিন্তু নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ঢুকতে দিচ্ছেন না কাউকেই। তাদের সঙ্গে তর্ক করছেন আগতরা।
সন্ধ্যের একটু আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যান। এর সাথে সাথেই সাধারণ মানুষের জন্য খুলে যায় মেলার দ্বার। লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের এই মিলনমেলার শুরুর দিনেই সবার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় উচ্ছ্বাস আর আনন্দ।
তবে প্রথমদিনে মেলায় ঘুরে নানা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এখনও চালু হয়নি প্রায় অর্ধশত প্রকাশনা সংস্থার স্টল। পাশাপাশি প্রাঙ্গণ জুড়ে দেখা গেছে আবর্জনা। তা আজকের মধ্যে ঠিক হবে বলে জানিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ। আর ৪ লাখ ৭৮ হাজার বর্গটফুটের বিশাল পরিসরের এবারের মেলা ভালো হবে বলেই আশা করছেন প্রকাশকরা।
মেলার প্রথম দিনেই প্রকাশ হয়েছে জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের নতুন দুইটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই। কাকলী প্রকাশনী থেকে এসেছে ‘তিতুনি এবং তিতুনি’ এবং তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘ক্রেনিয়াল’। বই দুইটির খবর পেয়ে জাফর ইকবাল ভক্তদের ভিড় জমেছিল প্রকাশনী দু’টির স্টলের সামনে। হালকা ভিড়ের মধ্যে বিক্রি দেখে সামনের দিনগুলো ভালো যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন কাকলীর সত্বাধিকারী এ কে নাসির আহমেদ সেলিম।
তবে মেলায় প্রায় অর্ধশত স্টল এখনো চালু হয়নি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মডার্ন পাবলিকেশনস, শাহীন পাবলিকেশনস, শিল্পতরু, ঘাষফুল, যুক্ত, উৎস প্রকাশন, পলাশ প্রকাশনী, অঙ্কুর প্রকাশনী, বর্ণপ্রকাশ, ত্রয়ী প্রকাশন, বইপত্র, পাঠশালা, সুলেখা প্রকাশনী প্রভৃতি। মেলার বাংলা একাডেমি অংশে এখনো লিটল ম্যাগ কর্নারের ৯২টি স্টলের একটিও চালু হয়নি। এর পাশাপাশি মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক জায়গাতেই ছড়িয়ে ছিল কাঠ, বাঁশ, দড়ি-দড়া, শোলা, হার্ডবোর্ড।
এ ব্যাপরে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আজকের মধ্যে এসব সমস্যা আর থাকবে না। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আর অনেকেই দেখলাম নিজেদের স্টলের সামনের অংশ নোংরা করে রেখেছে। এগুলো নিজেদেরই সচেতন হওয়া উচিত। আশা করি, এসব সমস্যা সামনের দিনগুলোতে থাকবে না।’
নতুন বই
মেলার তথ্যকেন্দ্র চালু না হওয়ায় গতকাল নতুন বইয়ের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রথম দিনেই শতাধিক বই এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে অবসর প্রকাশনী থেকে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দুইটি বই ‘রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরি’ ও ‘উত্তরাধিকারের অনিবার্য প্রশ্ন’, অন্যপ্রকাশ থেকে হরিশংকর জলদাসের ‘একলব্য’ ও মোস্তাক আহমেদের ‘নিলির ভালোবাসা’, জাগৃতি থেকে এসেছে আবুল হোসেনের খোকনের ‘সূর্যসৈনিক’, ঐতিহ্য থেকে এসেছে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘মাশরাফি’, তাম্রলিপি থেকে এসেছে আহসান হাবীবের ‘কেঁচো খুড়তে সাপ’ ও শাহরিয়ার হোসেনের ‘স্বর্ণপ্রাতে’, সূচীপত্র এনেছে দীপু মাহমুদের ‘নিতুর ডায়েরি ১৯৭১’, অ্যার্ডন পাবলিকেশন এনেছে আমিনুর রহমানের সম্পাদনায় ‘পৃথিবী সেরা সমকালীন চার কবির কবিতা’ ও ‘নিকারগুয়ার কবিতা’, ফরিদ কবিরের ‘আমার গদ্য’, ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ এনেছে তপন দেবনাথ ‘দূর নক্ষত্রের গল্প’, স্টুডেন্ট ওয়েজ এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘মিশ্রগদ্য’, আগামী প্রকাশনী এনেছে আহমদ শরীফের ‘মানস মুকুরে বিম্বিত স্বদেশ’।
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠান
মঙ্গলবার মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী : বাংলা একাডেমিকে ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রবন্ধ পাঠ করবেন শফিউল আলম। মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের সভাপতিত্বে আলোচনা করবেন ফজলে রাব্বি, আজিজুর রহমান আজিজ, বেগম আকতার কামাল ও মোহিত কামাল। সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
(সুত্রঃবাংলামেইল২৪ডটকম)