অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ রবিবার বিকাল ৩টা ৪৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। কীর্তিমান এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করে বাণী দিয়েছেন।
মমতাজউদদীন আহমদ এ বছর ৮৫ বছরে পদার্পণ করেছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা এবং ভাষা সৈনিক অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদের জানাজা আজ সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে । পরে তার মরদেহ চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলার হাটে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে প্রয়াতের পিতার কবরের পাশে দাফন করা হবে।
মমতাজউদদীন আহমদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত্। এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে নাট্যকার হিসেবে একুশে পদকে ভূষিত হন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি কলেজে ৩২ বছর বাংলা ভাষা সাহিত্য এবং বাংলা ও ইউরোপীয় নাট্য বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।
মমতাজউদদীন আহমদ ভারতের দিল্লি, জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক ‘কি চাহ শঙ্খচিল’ এবং ‘রাজা অনুস্বরের পালা’ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ছাত্রাবস্থায় তিনি তত্কালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সঙ্গে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন। তাঁর লেখা সর্বশেষ গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘রক্ত যখন দিয়েছি’ এবং ‘আত্মজীবনীর’ দ্বিতীয় খণ্ড এ বছর প্রকাশিত হয়েছে। মমতাজউদদীন আহমদের লেখা অন্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত , প্রসঙ্গ বাংলাদেশ:প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু। নাটকের মধ্যে রয়েছে: নাট্যত্রয়ী, হূদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (১৯৭১), প্রেম বিবাহ সুটকেশ, জমিদার দর্পণ, বকুল পুরের স্বাধীনতা, সাত ঘাটের কানাকড়ি ইত্যাদি।