গত ২৫ শে আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় সিডনির বারডিয়াতে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে ধারন করে নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ গড়ার কারীগর বঙ্গবন্ধু ও তার সংগ্রামী কর্মজীবন সম্পর্কে আলোকপাত করার জন্য “বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা” অনুষ্ঠিত হয়। শিশু কিশোরদের এই কর্মশালার আয়োজন করে সিডনি বাঙালী কমিউনিটি ইন্ক্। প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ডেপুটি প্রেস ও পাবিলকেশন সেক্রেটারি মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। বিশেষ অতিথী ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সংসদ সদস্য অনুলাক চান্টিভং।
কিশোর সংঘের অন্যতম সদস্য ঈশানের পরিবেশনা “যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই ..”এই মর্মস্পর্শী গান দিয়ে কর্মশালা শুরু করা হয়। এরপর কিশোর সংঘের সদস্য মেধাবী এবং গুনী আনুভা , মাহিমা, পৃথিবী ও সারিকা বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে তাদের আগ্রহ এবং ভালোলাগার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে। কিশোর সংঘের প্রতিটি সদস্য অস্ট্রেলিয়ান ধারাবাহিক শিক্ষার পাশাপাশি সরকারী ব্যবস্থাপনায় হাইস্কুল লেবেলে প্রতি শনিবার লিভারপুরের স্যাটারজে স্কুল অব কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ স্কুলে বাংলা শিখছে। এছাড়াও সদস্যরা প্রত্যেকেই মেধাবী এবং সিলেকটিভ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি এরা বাংলা গান, নাচ এবং কবিতা নিয়ে নিয়মিত চর্চা করে। ওদের সংগীতে তালিম দেন সীমা আহম্মেদ এবং বিভিন্ন সময় নাচ শিখতে সাহায্য করেন পূরবী পরমিতা বোস, অর্পিতা সোম, নুসরাত হুদা কান্তা ও স্মীতা বড়ুয়া। কিশোর সংঘের বাদ্যযন্ত্রের সহায়তা করেন সাকিনা আক্তার আর গীটারে সাহায্য করেন সোহেল খান।
সাকিনা আক্তার,শিশু কিশোরদের বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা গান কবিতা এবং নাচে কিশোর সংঘের সদস্যদের মেধার প্রসংশা করেন। সংগীত শিল্পী মিতা অনেক দিন ধরেই সিডনী বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনকের সাথে আছেন। সিডনী বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্ এর বাংলা এবং বাংলাদেশ নিয়ে সিডনীতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনকে সাধুবাদ জানান। ভবিষ্যতে মিতা কিশোর সংঘের সদস্যদের নিয়ে সংগীত বিষয়ক কর্মশালা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
প্রবাস জীবনে এইসব শিশু কিশোরদের বাংলা চর্চা ও বাংলাভাষা শেখাতে কি কি প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয় তাই নিয়ে অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা আলোচনায় তুলে ধরেন নৃত্যশিল্পী পরমিতা বোস। তিনি কিশোর সংঘের সদস্যদের বাংলা ভাষা শিক্ষার অনবদ্য আগ্রহের জন্য তারা এখন বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে পারছে।
সিডনি বাঙালী কমিউনিটির পক্ষ থেকে সেলিমা বেগম বলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা এই প্রজন্ম যেন বাংলাদেশকে অনুভব করতে শিখে এবং বাংলাদেশের বিপদে মনে প্রাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত থাকে, এই উদ্দেশ্য নিয়েই কিশোর সংঘের তৈরী।”
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ চুন্নু কিশোর সংঘের সদস্যদের এই বাংলা শিক্ষার প্রয়াসের প্রশংসা করেন। তিনি অন্যান্য অভিভাবকদেরকেও আহবান করেন তাদের সন্তানদেরকেও ইংরেজী শিক্ষার পাশপাশি বাংলা শেখানোর জন্য।বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি সিরাজুল হক কিশোর সংঘের পরিবেশনা এবং বাংলা শিক্ষার আগ্রহের প্রশংসা করে বলেন মাতৃভাষা, মাতৃভূমির প্রতি প্রজন্মের এই ভালোবাসায় উনি মুগ্ধ। এই শিশু কিশোর- কিশোরীরা বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাসকে আরও উন্নীত করতে সহায়ক হবে।
বিশেষ অতিথি অনুলাক চান্টিভং বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের টানা সংগ্রামের ফসল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ। এমন একজন মহান ব্যক্তিকে কি করে বাঙ্গালী গুলি করতে পারে তা আমার কাছে এখনো বোধগম্য নয়।” এছাড়াও তিনি বলেন, “আমি ভাগ্যবান আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক বাংলাদেশী থাকাতে আমি বাংলাদেশ ও বাংলা সংস্কৃতির সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিতে পারছি।”
প্রধান অতিথী আমিনুল ইসলাম নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু যে কত বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের মানচিত্র ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। ” তিনি আরও বলেন ,”ধর্মের জন্য ভাষা তৈরী হয়নি, ভাষার সৃষ্টি ধর্মের অনেক আগে। আর বাংলাদেশ এক মাত্র দেশ যে দেশের জন্ম হয়েছে ভাষার জন্য এবং সারা পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশে বিজয় দিবস আছে।”
“বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ” নিয়ে মো: আমিনুল ইসলামের প্রানবন্ত বক্তব্য কিশোর সংঘের সদস্যদের কাছে একটা শিক্ষনীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।
কর্মশালার সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন অজয় দত্ত এবং সেলিমা বেগম। সজ্জায় সহায়তা করে কিশোর সংঘের সদস্য ঈশান তারিক। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন হায়দার আলী । সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং শাহ জামাল বাদল।