গত ৩রা নভেম্বর ২০১৯ বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল মেলবোর্ন (অস্ট্রেলিয়া) ভ্রমণকালে মেলবোর্নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল বাংলাদেশি গবেষক ও শিক্ষাবিদদের সাথে এক মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন।
মেলবোর্নে বসবাসরত শিক্ষাবিদদের মধ্যে মেলবোর্ন পলিটেকনিক ও গর্ডন ইনস্টিটিউট অফ টেইফ এর শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, ভৌগোলিক তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও বনবিদ ড. মাহবুবুল আলম, মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক ও মোনাশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও বিশিষ্ট প্রাণ-পরিসংখ্যানবিদ মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক এবং মেলবোর্ন পলিটেকনিকের শিক্ষক, পরিবেশ ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. সাদিক আওয়াল এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব মুন্সি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, অস্ট্রেলীয় শিক্ষার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রবল আগ্রহ। অস্ট্রেলিয়া শিক্ষা কিভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রদান করা যায় এ ব্যাপারে তিনি মেলবোর্নে বসবাসরত শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের মতামত চান। তিনি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে অস্ট্রেলীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রদান করার লক্ষ্যে বাংলাদেশী শিক্ষাবিদদের এগিয়ে আসতে আহবান জানান। এছাড়া তিনি প্রবাসী গবেষক ও শিক্ষাবিদগনদের বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নত শিক্ষা প্রদান করার আহবান জানান।
মুন্সি শাহাবুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাস করে শিক্ষার্থীরা বিশেষ কোনো দক্ষতা অর্জন করতে না পারায় কর্ম ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে আছে। এজন্য বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্ততপক্ষে ৬ মাসের একটি কারিগরি কোর্স খোলার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি, কারিগরী প্রশিক্ষন, ও চাকুরী সংস্থানের ব্যাপারে মেলবোর্নে বসবাসরত শিক্ষাবিদদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
ড. মাহবুবুল আলম অস্ট্রেলিয় কারিগরি শিক্ষার মান, শিক্ষা পদ্ধতি এবং কর্ম ক্ষেত্রে এখানকার শিক্ষার্থীদের অবদানের উপর একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, অস্ট্রেলীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে অথবা অস্ট্রেলিয়া এসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষা গ্রহন কালে তারা ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে চাকুরী ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে এসে কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারে। পরবর্তীতে তারা তাদের দক্ষতা কাজে লাগে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে কাজ ও বসবাসের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এমনকি তারা তাদের এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। ডক্টর মাহবুবুল আলম অস্ট্রেলিয়াতে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ এর শাখা খুলে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অস্ট্রেলীয় শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক তার বক্তব্যে বলেন যে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে প্রায় ৪৬টি পাবলিক ও ৯৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলিই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছাত্র ছাত্রীরা চাকুরীর মার্কেটে ঢুকতে না পারে প্রায়শই বেকার থাকছেন। অথচ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশীরভাগ উন্নত দেশেই কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের প্রচুর ডিমান্ড। বাংলাদেশ যদি ইংরেজী জানা ভালো কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোস্টী তৈরী করতে পারে তবে তা শুধু দেশেই না, বিদেশেও দেশের জন্যে বিশাল শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত বেকার হওয়ার চেয়ে কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত চাকুরীজীবী হওয়া এক সময় মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য অপশন হবে বলে তিনি মনে করেন। যদিও বাংলাদেশে অনেক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তথাপি তিনি বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় মানের বা উন্নত দেশের সঙ্গে মানানসই ও আধুনিক কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীর উপর গুরুত্ত আরোপ করেন। তিনি প্রিয় বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান এবং ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে চান। এজন্য তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কামনা করেন।
ড. সাদিক আওয়াল তার গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এ ব্যাপারে তিনি যেকোনো ধরনের প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মেলবোর্ন প্রবাসী গবেষক ও শিক্ষাবিদ্গনের মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রবল আগ্রহের কথা জানতে পেরে সচিব জনাব মুন্সি শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাদেরকে ধন্যবাদ দেন। প্রবাসী শিক্ষাবিদগণ বাংলাদেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করতে চাইলে তিনি সকল ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। তিনি ভবিষ্যতে মেলবোর্নে বসবাসকারী শিক্ষাবিদদের সাথে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কিভাবে বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করা যায় সে ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন কারিগরি ও শিক্ষা মাদ্রাসা বিভাগের সচিব জনাব মুন্সি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রীর পিএস জনাব মোঃ শাহগীর আলম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ আবু সাঈদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (এক্সাম এন্ড এভালুয়েশন) জনাব রবিউল কবির চৌধুরী।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি )