২০২১ সালের ২৬শে মার্চ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। অনেক আকাঙ্খা আর প্রত্যাশার এক প্রহর। যাঁরা দেশটিকে স্বাধীন করেছেন তাঁদের বেশিরভাগই আজ জীবিত নেই। আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের দিনে স্বশরীরে উপস্থিত। দেশের মানুষ ঠিক কিভাবে বরণ করেছে তা আমরা দূর থেকে অনুভব করতে পারি। তবে বাংলাদেশ থেকে ৭০০০ কিলোমিটার দূরে আমাদের মতন প্রবাসীদের হৃদয়েও একই উন্মাদনা স্পন্দিত হয়েছে। দিনটিকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন ‘রেমিয়ানস অস্ট্রেলিয়া’ দিনব্যাপী মনোমুগ্ধকর এক সম্মিলনের আয়োজন করে। রেমিয়ানস পরিবারের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৭শে মার্চ দিনটি পরিনত হয়ে উঠে প্রাণের এক উৎসবে। সিডনির অদূরে চিপিং নর্টন লেক সাইডে আয়োজিত এই মিলনমেলায় উপস্থিত কেউই হয়তো স্বচক্ষে স্বাধীনতার প্রথম প্রহরের স্বাদ পায়নি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরের পূর্তিতে তাঁদের আবেগ ছিল বাঁধ ভাঙা।
দিনের শুরুতেই সকলে একত্রে জাতীয় সংগীত গেয়ে দিনটির তাৎপর্যকে সমুন্নত রাখেন। জাতীয় সংগীতের সুমধুর সুরে এই সময় অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এরপরই বিরামহীন আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন রেমিয়ান পরিবারের সকল সদস্য।
দুপুরের এক পশলা খাওয়ার পর সোলায়মান দেওয়ান দানি, আজগর আজিজ ও পলাশ বসাকের পরিচালনায় শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে ঘিরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কুইজ পর্ব। আকর্ষণীয় সেই পর্বে সর্বাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ডাঃ রুমানা আফরোজ। শিশুদের জন্য বিস্কুট রেস, ভলিবল, ফুটবল, ক্রিকেট, দড়ি টানাটানি খেলার ব্যবস্থা ছিল। একেবারে সূর্যাস্ত অব্দি শিশুদের প্রাণশক্তি ছিল অটুট। আনন্দমুখর দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে রেমিয়ানদের মধ্যে লাল-সবুজ দুই দলে ভাগ হয়ে ভলিবল ও ফুটবল খেলায় অংশ নেওয়ায়। ভলিবল খেলায় জয়লাভ করে রেমিয়ান প্রেসিডেন্ট একরাম চৌধুরীর সবুজ দল। আর শ্বাসরুদ্ধকর ফুটবল খেলার পরিসমাপ্তি ঘটে টাইব্রেকারে। ফুটবলে জয়লাভ করে রেমিয়ান কোষাধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকের লাল দল।
একদল প্রাণোচ্ছল রেমিয়ানদের অক্লান্ত পরিশ্রমে লাল সবুজে রঙিন দিনটি এক ভিন্ন আমেজ এনেছে রেমিয়ান পরিবারগুলির মাঝে। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীকে ঘিরে এই আনন্দ উন্মাদনা প্রবাসী শিশু কিশোরদের মনের মাঝে ছাপ ফেলেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে ঘিরে। চিপিং নর্টন এলাকার লেক সাইডে ধ্বনিত হয়েছে বাংলাদেশ নামটি বারবার। এতো অল্প পরিসরে এমন পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল আয়োজন সচরাচর দেখা যায় না। দিনের শেষ বেলায় যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে তখন অনেকেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আবারো রেমিয়ান পরিবারের মিলনমেলায় মিলিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করে গিয়েছেন। ফিরে গেছেন নিজের ডেরায় দেশের গান গাইতে গাইতে।
সফল এই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা দলটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন রেমিয়ানস অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট ডাঃ একরাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পলাশ বসাক।