ফজলুল বারী: নিউজিল্যান্ডের দক্ষিন দ্বীপের পূর্ব উপকূলবর্তী শহর ক্রাইস্টচার্চ। অকল্যান্ডের পর জনসংখ্যার দিক থেকে এই শহরকে বলা হয় দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই ক্রাইস্টচার্চের ক্রিকেট মাঠটির নাম হ্যাগলে ওভাল। ১৮৬৭ সালে এই মাঠে প্রথম খেলার আয়োজন করা হয়।
এই মাঠটি বাংলাদেশ সহ ক্রিকেট পাগল মানুষ এবং জাতীয় দলগুলোর কাছে বিশেষ পরিচিত। রবিবার এই ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। দেশেবিদেশে যেখানে যত বাংলাদেশি আছেন অনলাইনে-টিভিতে চোখ পড়ে থাকবে এই মাঠের দিকে!
কারন এখানেই যে রবিবার শুরু হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। এই মাঠে এর আগে বেশ কয়েকবার স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো খেলেছে। নিউজিল্যান্ডে ম্যাচ খেলতে এসে ক্রাইস্টচার্চে খেলেননি বা খেলা হয়নি এমন পাওয়া যাবেনা।
এবং উপমহাদেশের দলগুলোর এই মাঠে কিউইদের বিরুদ্ধে জয়ের ঘটনা কম। বাংলাদেশেরতো নেই। কিন্তু রবিবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালে অন্য এক বাংলাদেশ দলের মুখোমুখি হচ্ছে নিউজিল্যান্ড দল। মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের স্মরণীয় ঐতিহাসিক টেস্ট জয় পেয়েছে।
সেই জয়ের পর ক্রিকেট বিশ্ব জুড়ে বাংলাদেশ বন্দনা যখন চলছে, তখন দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্ট হচ্ছে এই হ্যাগলে ওভালে। সবুজ উইকেটের মাঠে বাংলাদেশের কোন জয় নেই। কিন্তু বাংলাদেশ যে জয়ের-সিরিজ জয়ের আশা করতে শিখে গেছে। নিউজিল্যান্ড দলও এখন বাংলাদেশকে গোনায় ধরছে।
মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের কাছে হেরে গিয়ে দেশেবিদেশে নানান বিরূপ সমালোচনা শুনে শুনে কিউই দলটি এক ধরনের মানসিক চাপের মুখে পড়বে। বাংলাদেশ কি কিউই দলের এই চাপকে কাজে লাগাতে পারবে? এটা দেখতে জানতে রবিবার এবং পরবর্তী দু’দিনের অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে।
মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের পর ক্যাপ্টেন মমিনুল হক সৌরভ বলেছিলেন সেই জয় ভুলে গিয়ে তিনি ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দিকে মনোনিবেশ করতে আগ্রহী। সাকিব আল হাসান শুক্রবার ঢাকায় বলেছেন, ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে টস জয়টি গুরুত্বপূর্ণ হবে। বাংলাদেশ টসে জিতলে ফিল্ডিং নিতে হবে।
কারন হ্যাগলে ওভালের উইকেট খেলার দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনে খুব ভালো থাকে। বাংলাদেশ টসে জিতুক বা না জিতুক, বাংলাদেশকে জয়ের জন্যে পরিশ্রম করতেই হবে। মাউন্ট মঙ্গনুই টেস্টে জয় স্বত্ত্বেও ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশ ফেভারিট নয়। বাংলাদেশ দল এখন আবার হেলাফেলারও নয়।
নিউজিল্যান্ডের জনসংখ্যা ষাট লাখের কম। বাংলাদেশি জনসংখ্যাও দেশটায় খুব কম। এক সময় যত বাংলাদেশি স্কিল মাইগ্রেশনে যারা গিয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগ অভিবাসন-নাগরিকত্ব পাবার পর অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন। কারন অস্ট্রেলিয়ায় কাজের সুযোগ বেশি।
স্কিল মাইগ্রেশনে যাওয়া লোকজন যারা এখনও নিউজিল্যান্ডে আছেন তাদের উল্লেখযোগ্যরা অকল্যান্ডে এবং বাকিরা বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। নিউজিল্যান্ডে পড়াশুনার উদ্দেশে গিয়ে কাজ পাওয়া বেশ কঠিন। ক্রাইস্টচার্চের বাংলাদেশিদের অনেকে সেখানকার সর্বশেষ ভূমিকম্পের পর।
২০১১ সালের সেই ভূমিকম্পে শহরটির বড় অংশ বিধবস্ত হয়। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৮৫ জন। সেই ভূমিকম্পের পর সিঙ্গাপুরের একাধিক নির্মান কোম্পানি শহর পূনঃনির্মানের কাজ পায়। কোম্পানিগুলো তাদের দক্ষ জনশক্তি সঙ্গে নিয়ে আসে। ওই সুযোগে অনেক বাংলাদেশি ক্রাইস্টচার্চে আসেন।
শহর পূনঃনির্মানের পর যারা অভিবাসন নীতিমালা অনুসারে আবেদন করতে পেরেছেন, তাদের বেশিরভাগ অভিবাসন পেয়ে যান। ভূমিকম্পের পর অনেক স্থায়ী বাসিন্দা ক্রাইস্টচার্চ ছেড়ে ভিন্ন শহরে চলে যান। তাদের শূন্যস্থান পূরনে অভিবাসন প্রত্যাশীদের দেয়া হয় বিশেষ কিছু সুবিধা।
সেই সুযোগেও বাংলাদেশি অনেকে হিতু হন ক্রাইস্টচার্চে। সর্বশেষ ক্রাইস্টচার্চের একাধিক মসজিদে মর্মন্তুদ হামলার ঘটনায় অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশিরাও হতাহত হন। তাদের নিকটজনদের দেশটি অভিবাসন দেয়া হয়েছে। তাদের বাংলাদেশিরা রবিবার থেকে দেশের দলের খেলা দেখতে মাঠে যাবেন।