ফজলুল বারী: রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ ধংস করে থানা ভবন বানাবে পুলিশ! এই জবরদস্তিমূলক ঘটনার প্রতিবাদ করায় এক মা সৈয়দা রত্মা, তাঁর–ছেলে প্রিয়াংশুকে আটকের ঘটনা রবিবার সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপিয়েছে। জনমতের চাপে রাতে মা–ছেলেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়েছে পুলিশ!
কিন্তু কিসের মুচলেকা? পুলিশ একটা খেলার মাঠ ধংস করবে, এর বিরোধিতা করা যাবেনা, এর মুচলেকা? এভাবেতো একটা দেশ চলেনা পাঞ্জেরী। বাংলাদেশতো কোন পুলিশি রাষ্ট্র না। এর আগে মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করায় পুলিশ কিছু বাচ্চা ছেলেকে কান ধরে উঠবস করায়। কী স্পর্ধা!
আটক প্রিয়াংশুর ছবি দেখে চোখ ভিজে আসে। কি হচ্ছে দেশটায়? সরকারের এত কাজ এত উন্নয়ন সবকিছু ম্লান হচ্ছে কিভাবে? মানুষ শুধুই বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। এমনিতে আন্তর্জাতিক মানের নানান সূচকে পরিসংখ্যানে ঢাকা এখন একটি মৃতনগরী! বাস অযোগ্য শহর।
প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে শুরু করলে ঢাকায় একদিন ভূমিকম্প ঘটবে। মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর যেতে সাতদিন লাগবে। পুলিশের এই দাপট থাকবেনা। কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্রের লাশ সেদিন পাওয়া যাবে কি? ঢাকা শহরটাকে এখনই বিস্ফোরন্মুখ করতে মরিয়া ভূমিকা নিয়েছে পুলিশ!
অথচ যাদের ভিন্ন ভূমিকা রাখার কথা ছিল। যারা খেলার মাঠ প্রকৃতি ধংস করবে তাদের শায়েস্তা করার কথা ছিল পুলিশের। রক্ষক এখানে ভক্ষকের ভূমিকায়। দেশের নানাকিছুতে আজকাল প্রায় এই বিমার দেখা যাচ্ছে! বুড়িগঙ্গা সহ দখলকৃত নদী উদ্ধার কার্যক্রম কী নিখোঁজ হয়ে গেলো!
নদী উদ্ধারের সময় জানা গেলো অমুক অমুক বাহিনী নদীর অত অত অংশ দখল করে স্থাপনা বানিয়েছে! হাজী সেলিমের দখলকৃত জায়গা কি আর উদ্ধার করা গেছে? পান্থপথের কোনার একটুখানি স্বস্তির তেঁতুলতলা মাঠটায় এলাকার বাচ্চারা খেলাধুলা করে। এখানে ঈদের নামাজ–জানাজার নাম হয়।
এলাকার সব বয়সী মানুষ সেই মাঠটিতে হাঁটাহাঁটি করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনা আছে খেলার মাঠ ধংস করে কোন স্থাপনা করা যাবেনা। পুলিশ কি এখানে প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করলো! তারা সেখানে কাউকে খেলতে দেবেনা। নো মোর ঈদের নামাজ অর জানাজার নামাজ!
সেখানে মাঠ ধংস করে থানা ভবন নির্মানের বিরোধিতা করায় পুলিশ সতের বছর বয়সী ছেলেটাকে থানার লকাপে পুরলো! এই ছেলেটাই প্রিয়াংশু। অথবা পিয়াংশু। মাঠ ধংসের প্রতিবাদ করায় গারদে আটক প্রিয়াংশুর ছবি চলে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বন্দী হিমুর মতো হলুদ টি–শার্ট পরা প্রিয়াংশুর ছবি ভীষন আবেদন সৃষ্টি করে নাগরিক মানসে। এখানে পুলিশের বুদ্ধিটাকে বলদ টাইপ বলবেননা। পুলিশ মাইন্ড করবে। কারন পুলিশেরওতো মান সম্মান আছে। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ কোন দিন এ রকম কাজ করবেনা।
কারন এদেশের পুলিশ জানে সে কি করতে পারে, অথবা করতে পারেনা। কথায় কথায় এখানে পুলিশ সদস্যের শাস্তি হয়। শাস্তি এড়াতে সর্বক্ষণ তারা সতর্ক থাকে। আর অস্ট্রেলিয়ার কোন পুলিশ স্টেশনের ভিতরে কেউ ছবি তুলতে পারবেনা। ছবি তোলাতুলি সব থানার বাইরে হয়।
কলাবাগান থানা পুলিশ পুরো বিষয়টিকে এক রকম তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। অপরাধ করলে যা হয়। এর বিশ্রী প্রকাশ ঘটবেই। রবিবার আমি সারাদিন সরকার সমর্থক অনেককে এই মা–ছেলের ছবি শেয়ার করতে দেখেছি। তাদেরও বক্তব্য, ক্ষমতা আছে বলে পুলিশের যা খুশি করতে হবে?
এই মা–ছেলের ছবি কিন্তু আগামী নির্বাচনের সময় পোষ্টার হতে পারে। হাজার হাজার গৃহহীনদের বাড়ি দেবার ছবির চাইতে এসব ছবি মানুষকে স্পর্শ করে বেশি। বাড়ি আপনি দিচ্ছেন এটি আপনার সাংবিধানিক দায়িত্ব। শপথ নেবার সময় বলেছেন নাগরিকদের সব মৌলিক অধিকার পূরন করবেন।
কিন্তু পুলিশ যে পন্ড করে দিচ্ছে সবকিছু। কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্রের ফোনের ওপাশে কেউ একজন একটার পর একটা নির্দেশ দিচ্ছিলেন আর নির্দেশ পাল্টাচ্ছিলেন। পরিতোষ চন্দ্র একবার বললেন এই মা সৈয়দা রত্মার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হবে! কেনো?
বাংলাদেশের পুলিশ যে জুলুমবাজ তা আবার সবাইকে দেখাতে? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে রবিবারই আবার আল জাজিরা টিভির রিপোর্টে সরকারকে তুলোধুনো করা হয়েছে। কারন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাই এর সুযোগ তৈরি করে দেয়। প্রশংসা সৃষ্টি হয় পুলিশের কাজে।
প্রশংসা তাদের কাজে ধংসও হয়। কলাবাগান থানার পুলিশ এরপর বললো, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নয়, সরকারি কাজে বাধা দেবার অভিযোগে মামলা হবে! নাগরিকদের শ্বাস নেবার মাঠ তুমি কেড়ে নেবে আর নাগরিক এর বিরোধিতা করলে তুমি মামলা করবে সরকারি কাজে বাধা দেবার?
সরকারতো মানুষের। পুলিশের কাজ হচ্ছে মানুষকে সরকারের পক্ষে রাখার। কিন্তু এই পুলিশ যে প্রতিদিন মানুষকে সরকারের বিপক্ষে ঠেলে দিচ্ছে! কলাবাগান থানার ওসির ফোনের অপর প্রান্তের লোকটির শেষ নির্দেশ, মুচলেকা রেখে মা–ছেলেকে ছেড়ে দাও। প্রিয়াংশু গারদ থেকে বেরিয়ে আসে।
মা সৈয়দা রত্মা চুমু খান প্রিয়াংশুকে। থানার মধ্যে আবার ক্লিক ক্লিক। ছবির ফ্রেমের ভিতর হতভম্ব পুলিশের এক সদস্যকেও দেখা যায়। ক্ষমতা আপনাদের হাতে। মুচলেকা নিয়েছেন ঠিক। হয়তো এই মাঠটাও ধংস করে আপনাদের থানা বানাবেনই। কিন্তু মানুষ যে বিপক্ষে চলে যাচ্ছে প্রতিদিন।
সময় গেলে সাধন হবেনা। সেখানে মাঠ ধংস করে থানা ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ততো কলাবাগান থানা পুলিশের নয়। পিছনের শক্তিশালী চরিত্রটি দেখতে পাওয়া যায়। এই চরিত্রটি এখন বেপরোয়া। কোন কিছুকেই সমস্যা মনে করেননা!
ইদানীং মির্জা ফখরুল সহ বিএনপি নেতারা কথা বলার সময় ক্রোধ দেখা যায়। এরা যেনো যে কোনভাবে ক্ষমতায় যাবেনই। এদের ক্ষমতা মানেই হত্যাকান্ড। জয় বাংলা নিষিদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিষিদ্ধ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, মুজিবনগর দিবস সব নিষিদ্ধ!
আপনারা কি তেমন আশংকা দেখেন? আমাদের আশংকা অসত্য হোক। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনা।