ফজলুল বারী: ঢাকার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে বেপরোয়া ভূমিকা নিয়েছে পুলিশ। এই মাঠ নিয়ে এক মা–ছেলেকে আটক করার ঘটনায় দেশজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করলেও পুলিশ জায়গা না ছাড়তে নারাজ। উল্টো তারা সেখানে নির্মান কার্যক্রম জোরদার করিয়েছে। এতে করে বদনাম হচ্ছে সরকারের।
তাদের সাফ কথা এটা পুলিশের জায়গা। ২৮ কোটি টাকায় তারা এই মাঠ কিনেছে! গায়ের জোরে জনগনের সম্পত্তি যে এভাবে কেনা যায়না এটা তাদের কে বোঝাবে? বেপরোয়া পুলিশ সদস্যরা নিজেদের গায়ে ক্যামেরা বেঁধে পাহারা বসিয়ে জবরদস্তিমূলক নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে!
পুলিশের সাবেক আইজি শহিদুল হককে মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টিভির একাত্তর জার্নালে সংযুক্ত করা হয়েছিল। টিভি অনুষ্ঠানেও তিনি সেখানে মাঠটি দখলে রাখতে পুলিশের পক্ষে মরিয়া ভূমিকা দেখান। শহিদুল হক আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়েছেন ওই এলাকার সাবেক এমপি ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপসকে।
তাঁর ভাষ্যমতে জনবিরোধী কর্মটির হোতা ঢাকা দক্ষিনের বর্তমান মেয়র তাপস! ব্যারিষ্টার তাপসই নাকি ওই এলাকার এমপি থাকতে মাঠটি পুলিশকে লিখে দিয়েছেন! শহিদুল হক বলেন ব্যারিষ্টার তাপস মাঠটি পুলিশকে দিতে ডিও লেটার লিখে দেন। এরপর তারা পরিবেশ অধিদফতর সহ সবার ছাড়পত্র নিয়েছেন।
গণপূর্ত বিভাগকে ২২ শতাংশ জমির মূল্যবাবদ পরিশোধ করা হচ্ছে ২৮ কোটি টাকা! তেতুঁলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের নেত্রী সৈয়দা রত্মাকে অনেক কৃতজ্ঞতা। কারন তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে বিনা ওয়ান্টে ১৩ ঘন্টা আটকে রাখার ফল সরূপ এখন এমন কত তথ্য বেরুচ্ছে!
২০০৮ সালে ওই এলাকা থেকে বিপুল ভোটে এমপি হন ব্যারিষ্টার তাপস। এরপর আর তার বা কারোরই ভোটের দরকার হয়নি। তাই একজন এমপি হয়েও এলাকার ছোট ছোট শিশু–কিশোরদের খেলার মাঠ কাউকে লিখে দিতে তার হাত কাঁপেনি। আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষ এটাকে ইস্যু করতে পারে।
এমপি ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপস–মেয়র তাপস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নিজের ছেলেদের উত্তরসূরী না করে ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনিকে উত্তরসূরী হিসাবে তৈরি করছিলেন। তাপসের পিতা শেখ ফজলুল হক মনি এদেশের একজন প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
পচাত্তরের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার রাতে শেখ মনি ও তাঁর স্ত্রী আরজু মনিকেও হত্যা করা হয়। কারন খুনিদের ভয় ছিল শেখ ফজলুল হক মনি বা এই পরিবারের কাউকে জীবিত রাখেনি। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এমপি–মেয়র হয়েছেন ব্যারিষ্টার তাপস।
আর তিনি লিখে দিয়েছেন রাজধানীর একটি এলাকার শিশুদের খেলার মাঠ হত্যার ফরমান! এটা একজন জনপ্রতিনিধির কাজ হয়েছে? অথচ তারই ফুপু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন পাশ করিয়েছেন, খেলার মাঠ, জলাধার ধংস করে কোন রকম নির্মান কাজ করা যাবেনা।
ব্যারিষ্টার তাপস–পুলিশ এরা কী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ–আইনের উর্ধে! আলিমুদ্দিন ছলিমুদ্দিনকে ধরে আনার জন্যে শুধু বাংলাদেশের আইন! সৈয়দা রত্মা, তার কিশোর পুত্রকে ধরে এনে গারদে আটকে রাখার জন্যে বাংলাদেশের আইন! আহারে, ২০০৮ সালে কি বিশাল জনসমর্থন নিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছিল।
গত ১৩ বছরে ভোটের বিষয়গুলো এলোমেলো হয়ে গেলেও সেই সরকার দেশের নানান সামর্থ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কিন্তু জনসমর্থনের কী পরিস্থিতি, তা সরকার যাচাই করার চিন্তা করছেনা। কাউকে যাচাই করতেও দিচ্ছেনা। যানজটে ঢাকা এখন আর স্বাভাবিক নড়তেও পারছেনা।
মঙ্গলবার রাতের একাত্তর জার্নালে বিশিষ্ট দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বির হাসান, আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার আরবান ডেভলপমেন্ট প্ল্যানের সদস্য হিসাবে স্থপতি মোবাশ্বির হাসান তেতুঁলতলা মাঠের আদ্যপান্ত জানেন।
আরবান ডেভলপমেন্ট প্ল্যানে গত ডিসেম্বরে তেতুঁলতলা মাঠকে শিশুদের খেলার মাঠ হিসাবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। পুলিশ এটা জানেওনা, জানতেও চায়না! এলাকায় এমন কমপক্ষে ৬ টি খেলার মাঠ দরকার। সবেধনমনি তেঁতুলতলা মাঠটিকেও গিলে খেতে চাইছে পুলিশ!
তারা বলছে খেলতে চাও কলাবাগান মাঠে যাও। বাচ্চারা মিরপুর স্টেডিয়াম বা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলতে চাইলে কী তা এলাও করা হবে? এই বেপরোয়া পুলিশকে এসব কে বোঝাবে? সাধারনত কোথাও কোন স্থাপনা বানাতে পুলিশের কাছ থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়।
সেই স্থাপনা সেখানে বানালে জনগনের কোন সমস্যা হবে কিনা, তা জেনেবুঝে ছাড়পত্র দেয় পুলিশ। কোথাও একটি থানা ভবন নির্মান মানেতো বিশাল ব্যাপার। দিনেরাতে সেখানে অনেক মানুষের গমগম অবস্থা থাকবে। অনেক গাড়ি যাতায়াতের, পার্কিং এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কিন্তু তেঁতুলতলা মাঠের এলাকাটি একটি আবাসিক এলাকা। রাস্তাটি অপ্রশস্ত। পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলার অবস্থা নেই। পার্কিং এর জায়গাতো নেইও। মানে এখানে থানা ভবন নির্মানকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকার জনগনের ভোগান্তি বাড়বে। যানজটে এলাকায় স্বাভাবিক হাঁটাচলার পথও থাকবেনা।
অতিষ্ঠ হবে আবাসিক এলাকার মানুষের জীবন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশ যেন বিষয়টিকে আদালতে নিয়ে যাবার উস্কানি দিচ্ছে! চল্লিশ বছর ধরে ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট জেড আই খান পান্না।
একাত্তর জার্নালকে তিনি বলেন, এই মাঠে তাঁর মায়ের জানাজার নামাজ হয়েছে। এমন ঈদের নামাজ, জানাজার নামাজ, বাচ্চাদের খেলাধুলা, বয়স্কদের হাঁটাচলার জন্যে মাঠটি তাদের বড় আপন ছিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মাঠটির দখল নিতে চেয়েছিল।
কিন্তু এলাকার যুব সমাজ, জনগনের প্রতিরোধের মুখে কেউ এখানে দাঁড়াতে পারেনি। জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশ এখানে নিজেদের উর্দির ভয় দেখিয়ে জনগনের মাঠ দখলে নিতে চাইছে। উর্দি পরা না থাকলে তাদের হঠাতে এলাকার মানুষের দশ মিনিট সময়ও লাগতোনা।
জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশের থানা ভবন নির্মান দরকার। কিন্তু সেটা তেঁতুলতলা মাঠ দখলের মাধ্যমে নয়। এই মাঠ এলাকার শিশু–কিশোরদের খেলার মাঠ ধংস করে নয়। জনাব বীর মুক্তিযোদ্ধা জেড আই খান পান্না, এই বেপরোয়া পুলিশকে ঠেকাতে দাওয়াই আপনার কাছে আছে।
অতিদ্রুত বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনুন। এই নির্মানযজ্ঞের ওপর অতিদ্রুত নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা করুন। পুলিশের কাজ জনগনের প্রতিপক্ষ হওয়া নয়। এই বেপরোয়া আত্মঘাতী পুলিশকে থামাতে হবে। তোমাকে এখানেও মনে পড়ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিব।
স্বাধীন বাংলাদেশে জনমতবিরোধী এমন জবরদস্তিমূলক পুলিশ বাহিনী কী তুমি কল্পনায় ভেবেছো? এই বেপরোয়া পুলিশকে থামাতে হবে। দ্রুত আদালতে দাঁড়ান প্রিয় পান্না ভাই। সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ সচল রাখুন। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কোন মহীয়ান।