ফজলুল বারী: সীতাকুন্ডের ডিপোয় চাঞ্চল্যের সৃষ্টিকারী আগুনের ধংসস্তুপ দেখতে আসা ত্রান প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমানের সার্কিট হাউসের খাওয়া–দাওয়ার ছবি নিয়ে ফেসবুকে একজন একটি পোষ্ট দিয়েছেন। এর লিংক আমাকে একজন পাঠান। এমন লিংক আমাকে অনেকেই সারাদিনই পাঠান ইনবক্সে।
এমন কিছু যারা পাঠান তাদের অনেকেরই আগ্রহ থাকে আমি যাতে এ নিয়ে একটা পোষ্ট দেই। সার্কিট হাউসে মন্ত্রীদের খাওয়াদাওয়ার নানান অভিজ্ঞতা রিপোর্টার হিসাবে আমার আছে। এ নিয়ে এখন কী অবস্থা জানিনা, আমি এক সময় জানতাম মন্ত্রীদের এমন খাওয়া–দাওয়া নিয়ে জেলা প্রশাসনের কোন বাজেট নেই।
এই সুযোগে সার্কিট হাউসে শুধু মন্ত্রী নন, অনেক লোকজন তার সঙ্গে খাওয়া–দাওয়া করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে এমন খাদকের সংখ্যা শতাধিকও হন। জেলা প্রশাসকরা তখন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এর খরচ নিতেন। এটাও জেলা প্রশাসনের এক ধরনের চাঁদাবাজি। কারন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খরচের টাকা নেয়ায় এর উসুল তাদেরকে অন্য কোনভাবে দিতে হতো।
এই সার্কিট হাউস খাওয়া–দাওয়ার অন্য একটি দৃষ্টান্তও আছে। মতিয়া চৌধুরী যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনিও এই চাঁদাবাজির কথা জানতেন। তাই তিনি যে কয়বেলা সার্কিট হাউসে খেতেন, এর বাজার–সদাইর টাকা তিনি দিতেন। এতে করে জেলা প্রশাসনকেও চাঁদাবাজি করতে হতোনা। বাংলাদেশে আরেকজন মতিয়া চৌধুরীর সৃষ্টি হয়নি।
এখন ত্রান প্রতিমন্ত্রীর খাওয়াদাওয়ার ছবি নিয়ে পোষ্টের ক্রিনশট সহ পোষ্ট দেয়ায় অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এরা সবাই সরকারি দলের সমর্থক। তাদের উষ্মার ভাষা হচ্ছে এখানে বাহারি খাবার বা বেশি খাবারের কি হলো! এমন খাবারতো আমরাও ঘরে খাই!
তাদের এই উষ্মার মূল কারন এমন ছবিতে সরকারি দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের এই ধারনার প্রতিও আমার সহানুভূতি রয়েছে। কথাটা তাদের পক্ষ নিয়ে আমি আরও ভালো করে বলছিঃ তাহলো মন্ত্রী যে সেখানে খাচ্ছেন সেখানে তিনি সেখানকার মেহমান। সাধারনত আমরা মেহমানদের খাবারের সময় সব সময় একটু বেশি আয়োজন করি।
আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মেহমানতো অন্য রকম বিষয়। সেখানে খাবার টেবিলে মেহমানদের জন্যে অনেক আইটেম থাকে। কাজেই সে তুলনায় মন্ত্রীর তুলনায় টেবিলের আয়োজন এমন বেশি কিছু নয়। বরঞ্চ সে তুলনায় এখানে কমই হয়আেছে। এটা হাফ মন্ত্রী হবার কারনেও হতে পারে।
এই সুযোগে আমার নিজের কিছু বিষয়ও এই সুযোগে বলে নেই। এমনিতে আমি স্বল্পাহারি। এক বৈঠকে কোনমতে এক আইটেম দিয়েই খেতে পছন্দ করি। আমাদের ঘরে অবশ্য সাধারনত কখনোই দুটির বিষয় আইটেম থাকেনা। এদেশে যেহেতু সব কাজ আমাদের নিজেদের করতে হয় তাই সামর্থ্য থাকলেও খাওয়া–দাওয়ার বিষয়টি আমাদের এমন সীমিত।
এক সময় আমাদের সিডনির ভাড়া বাসায় প্রায় পার্টি হতো। বাংলাদেশ থেকে নতুন ছাত্র আসা থেকে শুরু করে নতুন কোন মেহমান আসাকে কেন্দ্র করে সাগরের মাছ, হরিন–ক্যাঙ্গারুর মাংস থেকে শুরু করে অনেক আইটেম থাকতো। এর পিছনে আমাদের অন্য একটি লক্ষ্যও কাজ করতো।
তাহলো বাড়তি খাবার আমরা ফ্রিজে রেখে বেশ কয়েকদিন ধরে খেতে পারতাম। প্রাণের চেয়ে প্রিয় সন্তান অমর্ত্যর হঠাৎ মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের জীবন পাল্টে গেছে। আমাদের ঘরে আর পার্টি হয়না। মরা বাড়িতে যেমন অনেকদিন অনেকে খাবার দেন, আমাদের ঘরেও তেমন স্বজনদের খাবার এসেছিল।
এরপর থেকে আমরা প্রতিদিন এক–দুই আইটেম দিয়েই খাই। এতে আমাদের কোন সমস্যা হয়না। বয়স বাড়ায় ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শও আছে। তাহলো একসঙ্গে বেশি খাবেননা। অল্প অল্প খাবেন, বারবার খাবেন। খাবারের পর একটা ছোট আপেলও যদি খান সেটি খাবেন দুই ঘন্টা পর।
মন্ত্রীর খাওয়া দাওয়া নিয়ে মন্তব্যে দেশের চলতি পরিস্থিতি নিয়েও হাহাকার অথবা তৈল মর্দন আছে। বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে মানুষ বিক্ষুদ্ধ। মন্তব্যগুলোতে এর প্রকাশও আছে। দেশে মানুষ ভোট দেবার সুযোগ পায়না। খোঁজ নিয়ে দেখুন দেশে কত শতাংশ মানুষের খাবার টেবিলে এখন একাধিক আইটেম থাকে।
আবার বলছি, আমরা অতিথি পরায়ন জাতি। পকেটে টান থাকলেও কর্জ করে হলেও মেহমান খাওয়াই। আবার অনেকের সামনে অনেক আইটেম নিয়ে মানুষের কষ্টের বহিঃপ্রকাশও হয়! কোন একজন ইউটিউবার হুজুরের সামনে অনেক খাবারের একটি ভাইরাল ছবি দেখেননা অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
আমার পোষ্টে একজন রাজনৈতিক কর্মীর মন্তব্য ছিল এই ছবি বাইরে এলো কী করে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে সচেতন মন্তব্য মনে হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছবি তোলার ব্যাপারে সাবধান হবার দরকার আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাবার টেবিলের ছবি কি কেউ কোনদিন দেখেছেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি ত্রান প্রতিমন্ত্রীর চাইতে অনুল্লেখ্য কেউ?