৩ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় সিডনির লাকেম্বার সিনিয়র সিটিজেন হলে অন্যরকম এক আয়োজনে মাজনুন মিজানের গল্প ও পরিচালনায় ‘মায়া জীবন ‘ নাটকের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হলো। আগামী ১০ মে শুক্রবার রাত ৯ টায় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে নাটকটি সম্প্রচারিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
‘মায়া জীবন ‘ নাটকটির প্রায় ৯৫ শতাংশ চিত্রায়িত হয় সিডনিতে। নাটকটির সংলাপে ছিলেন হাসান মোর্শেদ , চিত্রনাট্য করেন তসদিক শাহরিয়ার, ক্যামেরায় ছিলেন শিমুল শিকদার , প্রযোজনা করেন কোয়ালা বাংলা। অভিনয়ে ছিলেন মাজনুন মিজান , রুপন্তি আকিদ , এবলিয়া , হাবিব স্মৃতি , মোর্শেদ নাসের , হেমা জোয়ার্দার ও রহমতুল্লাহ। বিশেষ অতিথি অভিনেত্রী হিসেবে বাংলাদেশে চিত্রায়িত দুই মায়ের ভূমিকায় ছিলেন শক্তিমান অভিনেত্রী ডলি জহুর ও শিল্পী সরকার অপু।
নাটকটির প্রেক্ষাপট ছিল অস্ট্রেলিয়াতে একটি ছোট মেয়ে সুপ্তিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জীবনের সংমিশ্রনে একটি গল্পকে দিয়ে । সিডনিতে সদ্য মা হারা শিশু সুপ্তি প্রাইমারি স্কুলে পড়ে আর বাবা সজীব একটি চাকুরী করে। তার স্ত্রী লামিয়াকে সে প্রচন্ড ভালোবাসতো এবং স্ত্রী হারানোর কথা ভুলতে পারছিলো না সজীব।
অস্ট্রেলিয়ার জীবনে রীতিমতো সংগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছিলো সজীব ও সুপ্তিদের সংসারে। মা হারানো সুপ্তিকে দেখাশুনা করতে এগিয়ে আসে সুপ্তির খালা লুবনা। লুবনা সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। লুবনার পড়াশুনার এবং সুপ্তির প্রতি মায়ার টানে ধীরে ধীরে একটা মা মেয়ের মতো বন্ধুত্ব তৈরী হয়ে যায়। এদিকে সজীব তার স্ত্রী লামিয়াকে প্রতিদিনই মিস করছিলো এবং সময় পেলেই স্ত্রীর কবরে ফুল দিয়ে আসতো এবং স্মৃতিচারণ করতো। প্রায়শঃই বাসায় এসে সজীব দেখতে পায় লুবনা ছোট মেয়ে সুপ্তিতে ঘুম পারাতে গিয়ে নিজেও সুপ্তির সাথে ঘুমিয়ে আছে।
লুবনা পরিবারের অনেক কাজ একটু একটু করে গুছিয়ে নিয়ে আসছিলো। রান্না বান্না , ইউনিভার্সিটি যাওয়া আসার সময় সুপ্তিকে স্কুলে ড্রপ ও পিকআপ করা , লেখাপড়ায় সাহায্য করা ইত্যাদি সব কিছুতেই মায়ের বিকল্প জায়গাটা লুবনা দখলে নিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশ থেকে লুবনার মা , প্রায়ই লুবনাকে বিয়ের তাগাদা দিতো , পাশাপাশি সজীবের মাও একই কাজ করতো সজীব যেন বিয়ে করে আবার। লুবনা ও সজীব দুজনের মধ্যেই এইসব কারণে তাদের মায়েদের উপর বিরক্তি তৈরী হয়।
লুবনা সজীবকে ভাইয়ের মতো দেখে , এবং সজীব লুবনাকে বোনের মতোই দেখে। যদিও সম্পর্কে লুবনা লামিয়ার ছোট বোন। এক পর্যায়ে , সজীবের বোন লুবনাকে নিয়ে সজীব সংসার সুর করার প্রস্তাব নিয়ে আসে , তাতেই ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। লুবনা সুপ্তিকে প্রচন্ড ভালোবাসে , তাই এই প্রস্তাবে শুধুমাত্র মায়ার টানের কথা বিবেচনা করে সে এক পর্যায়ে সজীবকে বলেই ফেলে , যে আমি আপনাকে ভাইয়ের মতোই দেখি এবং আমার একটা অস্ট্রেলিয়ান ছেলের সাথে বহুদিন ধরেই প্রেম আছে। কিন্তু সুপ্তির জন্য আমি আমার প্রেমিকাকে ছেড়ে দিবো এবং পরিবারের ইচ্ছেমতো আপনাকে বিয়ে করতে আপত্তি নেই। সজীব এদিকে তার স্ত্রী লামিয়ার স্মৃতি নিয়েই বাঁচতে চায় এবং লুবনাকে সেই জায়গায় বসাতে পারছিলো না। ঘটনার শেষ দৃশ্যে সজীব একটা চিঠি রেখে যায় লুবনার জন্য , যেখানে লিখে যায় সে অন্য শহরে চলে যাচ্ছে তার মেয়ে সুপ্তিকে নিয়ে। মায়ার জীবন নাটকের এইভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে।
জনাকীর্ণ এই প্রিমিয়া শো অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে গান পরিবেশন করেন সাবরিনা রহমান বাঁধন ও শামা রেইন , এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাটকটির বেশিরভাগ অভিনেতা ও অভিনেত্রী এবং তাদের স্বজনেরা , প্রযোজনা সংস্থা কোয়ালা বাংলার পক্ষে ছিলেন আনোয়ার ইসলাম ,রইস রাসেল ও হেমা জোয়ারদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার শো র মূল স্পনসর গ্রেপাস্ গ্রুপ এর পক্ষে ওয়াহিদ খান।
সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেস এন্ড মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি রহমতউল্লাহ , জন্মভূমি টিভির চেয়ারম্যান আবু রেজা আরেফিন , সিডনি বেংগলীজ ডট কম এর সম্পাদক আবু তারিক, প্রশান্তিকার সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ, ফটো সাংবাদিক আকাশ দে , ভিডিওগ্রাফার শিমুল শিকদার। আরো উপস্থিত ছিলেন নাট্য ব্যাক্তিত্ব শাহীন শাহনেওয়াজ ,নাট্য অভিনেত্রী ঈশানা খান ও শেরিফ চৌধুরী , আবিদা রুচি , তানিম আল মিনারুল মান্নান, রেমন্ড সলোমান সহ সিডনির অনেক সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ।