অনলাইন ডেস্ক : প্রায় ৬ বছর আগে, হাইতির ভয়াবহ ভূমিকমেপর ধ্বংসযজ্ঞ সামলানোর কাজে জাতিসংঘের মিশনকে সহযোগিতা করতে ১৬০ জন নারী মুসলিম পুলিশ সদস্য পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। এদের অনেকেই এর আগে কখনও বিদেশে যাননি। তারা বড় হয়ে উঠেছেন এমন এক সমাজে যেখানে নারীরা শান্তিরক্ষী হবে, এটা আশা করা হয় না। বরং বাড়ির ভেতরেই থাকবে তাদের অবস্থান এমনটাই প্রত্যাশিত। হাইতিতে তাদের এ সফর বাধ্যতামূলক ছিল না। অথচ, সব নারীই মানবতার ডাকে সাড়া দিতে রাজি হয়েছিলেন। এদের নিয়ে ‘অ্যা জার্নি অব অ্যা থাউজেন্ডস মাইলস: পিসকিপার্স’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন অস্কারজয়ী পরিচালক শারমিন ওবায়েদ চিনয়।
রেডিও অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইতিতে পাঠানো একদল বাংলাদেশি নারী কর্মকর্তাকে নিয়ে এ তথ্যচিত্র শুরু। বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে, ওই নারীদের জন্য নিজ পরিবার ছেড়ে এক বছরের জন্য বিদেশে গিয়ে কাজ করাটা ছিল বিশাল ব্যাপার। হাইতিতে নেমে তাদের কাজ হয়ে পড়ে আরো চ্যালেঞ্জিং।
তরুণী এ পুলিশ সদস্যদের দেশের কথা মনে পড়া, বাধাবদ্ধ পরিচয়ের বেড়াজাল পেরিয়ে একটু বাইরে যাওয়া এবং এমন একটি দেশে কাজ করা, যেখানে ক’দিন আগে লাখখানেক মানুষ মারা গিয়েছিল- এই হলো তথ্যচিত্রের গল্প।
সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পরিচালক শারমিন ওবায়েদ এ ছবিটি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কারও সমপর্কে, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের সমপর্কে না জেনেই উপসংহারে চলে আসার মধ্যে কদর্য শক্তি আছে। সেটাই ফুটে উঠেছে এই তথ্যচিত্রে। তিনি বলেন, ‘একটিমাত্র প্রিজমের ভেতর দিয়ে মুসলিম নারীদের দিকে তাকানোর প্রবণতা আছে আমাদের। বিশেষ করে গণমাধ্যমে। তাদের দিকে এভাবে তাকানোটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে তারা হলেন বিশেষ একটি ধর্মবিশ্বাসের প্রতি অনুগত নারী। বরং তাদের এমন নারী ভাবা উচিত, যারা হলেন মা, বোন এবং কর্মজীবী।’
শারমিনের ভাষায়, ‘এই তো তারা। ১৬০ জন নারী হাইতিতে গেল। ট্রাক চালানো থেকে শুরু করে, তাঁবু টানানো, রাতে পাহারা দেয়া, মেশিনগান বহন করা ও হাইতিয়ানদের গ্রেপ্তার করা- সবই তারা করেছে। সহিংসতা ও প্রতিবাদ যখন হয়, তখন তারা ঠিকই সেখানে থাকে। তাদের পরনে থাকে ইউনিফর্ম। দুনিয়ার অর্ধেকটা পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাংলাদেশের নারীদের কাছে প্রমাণ করছে যে, তারা কী করতে সক্ষম ও ভবিষ্যৎ তাদের জন্য কী রেখেছে।’
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি এ পরিচালক দেশটির একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি দুইবার অস্কার জিতেছেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘অ্যা গার্ল ইন দ্য রিভার: দ্য প্রাইস অব ফরগিভনেস’।
তবে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নিয়ে বানানো তার তথ্যচিত্রটি শুধুই স্টেরিওটাইপ বা ভুল ধারণা ভেঙে দেয়ার হৃদয়গ্রাহী কোনো প্রচেষ্টা নয়। বরং, লাখো মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে যে দেশে, সেখানে শান্তি বজায় রাখতে শান্তিরক্ষীদের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টাও ফুটে উঠেছে এই তথ্যচিত্রে।(সুত্র: মানবজমিন)