আমার হ্যালুসিনাশন

আমার হ্যালুসিনাশন

আমার হ্যালুসিনাশন

হাসপাতালের বিছানায় আমি, এখন রাত এগারটা বাজে । ইচ্ছে হল নিজের অনুভুতি গুলো কালির ছোঁওয়ায়ে কাগজে লেপটে দেই । নার্সকে বললাম যদি একটু কাগজ আর কলম পেতাম । এই কয়েকদিনে বেশ গুছিয়ে নিয়েছি অনেকটা নিজের একান্ত ঘরের মতই । যদিও তীব্র ব্যথা আর অনিদ্রায় রাত কেটেছে ।

আজ সকালে আমার সার্জন যখন আমার সংগে দেখা করতে এলেন তখন অনেক কথা হল তার সংগে । উনি সার্জারি সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন আমাকে । আমি উনাকে জানালাম যে উনার কাজে আমি খুবই খুশি  এবং উনি মন থেকেই কাজটা করেছেন । আমি সত্যি তা বিশ্বাস করি । এমনকি সার্জারির পর যখন আমি প্রথম চোখ মেললাম তখন উনি আমার কাছে এসে সার্জারি সম্পর্কে বলছিলেন । আমার স্পষ্ট মনে আছে  আমি উনার হাত ধরেছিলাম অর্ধ- ঘুমন্ত  অবস্থায় । লোকটাকে দেখলে কেবলি মনে হয় উনিইতো আমাকে এত বড় একটা বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন । আবার আজ কয়েকবারই মনে হয়েছে এই লোকটাইতো ঐসব ধারালো ছুরি-কাঁচি আমার দেহে চালিয়েছে , হোক-না তা আমার মঙ্গলের জন্য । এমন অনুভূতি কিংবা অন্তরদ্বন্দ্ব আমার আর কখনও হয়নি । হবেইবা কিভাবে, এটাতো আমার জীবনের প্রথম সার্জারি ।

অপারেশনের জন্য ডে প্রসিডিওর রুমে ঢোকার সময় বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছিলো  আমার দুটো মেয়ে আর স্বামীকে পেছনে ফেলে আসতে । আমি জানতাম না আমি আর ফিরব কিনা । আমাকে যে নার্স নিয়ে গেলেন উনি আমার সঙ্গে অনেক কথা বলে  আমার কষ্ট কমাতে চেষ্টা করলেন এবং অনেকটাই তৈরি করে ফেললেন সার্জারির জন্য মানসিকভাবে । যখন গাউন পরিয়ে আর একটি ঘরে নিয়ে এলেন তখন দেখতে পেলাম আমার মত আর অনেক সতীর্থ বসে টেলি ভিশন দেখছে । এ এক অদ্ভুত জগত, অদ্ভুত সব মানুষ  এবং তাদের অনুভুতি। আমার চেনা পৃথিবীর সাথে এর কোন মিল নেই । কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম অজ্ঞান করার অনেক আগেই ।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর যখন আমার রোগটা ধরা পরল তখন সবাই ব্যাতিব্যস্ত হয়ে গেল জানতে এতে ক্যানসার ধরেছে কিনা । তারা আমার রক্ত পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে দিল । বিভিন্ন কনসালটেনট আসতে থাকলেন আমার কাছে । একদিন আমার সার্জন এলেন । আমাকে জানালেন আমার পেটের মধ্যে কি বাসা বেধেছে এবং জানালেন তাকে এখন বের করে আনতে হবে সার্জারির মাধ্যমে ।  এই সার্জনের উপর আমার আস্থা ছিল কাজটা উনি হয়তো ঠিকমতই করতে পারবেন । যদিও কিছু দিধা দন্দ চলে আসে বিভিন্ন কারনে । ঊনি চলে যাওয়ার পর থেকে বহুবার মনে হয়েছে ইনিইতো আমার পেটে ছুরি চালাবেন । পরক্ষণেই ভেবেছি এতো আমার মঙ্গলের জন্যই । আবার মনে হয়েছে এরা এমনটা করে কিভাবে ?

সার্জারির পরে আজ যখন কথা হল সার্জন এর সঙ্গে ঐসব অন্তরদন্দ হচ্ছিল বারবার । আমি জানিনা আমার মত এমন অনুভুতি অন্য সবার হয় কিনা । এখনো অপেক্ষা করছি বায়োপ্সি  রিপোর্ট এর জন্য । জানিনা আরো কষ্ট আছে কিনা ভাগ্যে । ব্যাথায় নিরঘুম রাত কাটে ।

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে এই মানুষগুলো, যারা মানুষের কল্ল্যানের জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয় তাদের অনুভুতি গুলো কেমন । প্রতিদিন এই কাজ করে কি মন আর দেহ নিয়ে তারা তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে ফিরে যায় । তাদের  সাথে সন্ত্রাসীদের পার্থক্য  ঠিক কোন জায়গায় ছুরি চালানোর সময় ইত্যাদি ইত্যাদি । আমার এই লেখা হইতো আমার এক অর্ধ চেতন আর অচেতনের মাঝামাঝি কিছু একটা । তবুও লিখলাম ।

মলি সিদ্দিকা (পার্থ,অস্ট্রলিয়া)