মৌলবাদ ও সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ ও গনতন্ত্র – আমি যেভাবে দেখি ।

মৌলবাদ ও সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ ও গনতন্ত্র – আমি যেভাবে দেখি ।

কোনো একটি তন্ত্র সমাজে যখন abandoned হয় বা অধিকাংশের জন্য আর কোনো কল্যাণ বহন করেনা তখনও ক্ষুদ্র একটি অংশ respective তত্বের মুল concept থেকে সরে আসতে চায়না । সেই তত্বটি still যারা আঁকরে ধরে থাকেন তাদেরকে আমরা তত্বের মূল ধারক বলে মৌলবাদী , conservative , fundamentalist ইত্যাদি ইত্যাদি বলে থাকি ।

এই মৌলবাদীচক্র ধর্মের ক্ষেত্রে এবং সমাজতান্ত্রিক মতবাদের ক্ষেত্রে একই চরিত্র বহন করে । উভয় ক্ষেত্রে পশ্চাদপদতা এবং উগ্রবাদ নিয়ামক ভূমিকা পালন করে । মানবিকতাও তখন তাদের কাছে মূল্যহীন হয়ে যায়।

সমাজের এই ক্ষুদ্রাংশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের বৃহদাংশের ওপর তাদের মতামত চাপিয়ে দেয়ার জন্য বল প্রয়োগের পক্ষে জোড়ালো যুক্তি উপস্থাপন করে থাকে।

ধর্মীয় মৌলবাদীদের আমরা দেখেছি বা দেখছি একই ধর্মের যারা কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন না বা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাস পরিবর্তনে বল প্রয়োগের পক্ষে । ধর্ম থেকে তারা মানবতাকে বাদ দেয়ার পক্ষে । মানবতাকে বাদ দিয়ে সেই মানুষের জন্য ধর্ম কতটা গ্রহনযোগ্য হতে পারে?

সমাজতান্ত্রিক মৌলবাদের সাথে ধর্মীয় মৌলবাদের basic কোনো পার্থক্য নাই । স্বশস্ত্র বিপ্লব সমাজতান্ত্রিক ধারনায় উগ্রবাদের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ । সমাজ পরিবর্তনে ব্যক্তির কোনো মতামত গ্রহনযোগ্য নয় । রাষ্ট্রের মতামতই জনগনের মতামত।

জনগন সে মতের সাথে ঐক্যমত পোষন করে কি-না রাষ্ট্রের তা’ জানার দরকার নাই। মানবাধিকার এখানে মূল্যহীন ।
সম্পত্তিতে ব্যক্তির মালিকানা থাকবেনা । সব মানুষ রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবে । সব মানুষ সমান এবং সমান হারে payment পাবে । সাম্যের সমাজ তৈরী হবে । সমাজে কোনো ধনী-গরীব থাকবেনা । শ্রেনীহীন সমাজ তৈরী হবে।

সমাজতান্ত্রিক সমাজে কিছুটা শ্রেনীভেদ থাকলেও সাম্যবাদ পর্যায়ে হবে শ্রেনীহীন সমাজ ঠিক যেনো যথাযথভাবে ধর্ম পালনকারীদের বেহেস্তবাসী হওয়ার মতো।

যাদের মধ্যে সামান্যতম চিন্তা কাজ করে তারা কি উপরোক্ত মতের সাথে একমত হবেন ? পৃথিবীতে একটি মানুষের সাথে
আরেকটি মানুষের কোনো মিল নেই (Everyone is unique )। প্রত্যেকের একটি আলাদা স্বত্বা রয়েছে ( Everyone has got a separate entity) । প্রত্যেকের বোঝার ( Level of understanding ) ক্ষমতা ভিন্ন। প্রত্যেকের সক্ষমতা ( Ability ) ভিন্ন ।

একজন দক্ষ ( Efficient ) মানুষ আট ঘন্টা কর্ম দিবসে যদি ২০টি গারমেন্টস উৎপাদন করেন ; একজন অদক্ষ কর্মী সেই সময়ে হয়তো ১৫টি উৎপাদন করবেন । এখন সমাজতান্ত্রিক মতবাদ অনুযায়ী যদি তাদের প্রত্যেককে একই পেমেন্ট দেয়া হয় তাহলে কি পরবর্তীতে দক্ষ ব্যক্তিটি আর ২০টি গার্মেন্টস উৎপাদন করবে ? করবে না এটাই স্বাভাবিক । মোট অভ্যন্তরীন উৎপাদনের (GDP -Gross Domestic Production) হার কমতে থাকবে । চাহিদানুযায়ী বাজারে পন্যের যোগান থাকবেনা । ব্যক্তি তার সক্ষমতা (ability) বৃদ্ধিতে , সৃস্টিশীল ( creative) হতে , কিংবা innovative হতে কোনো প্রনোদনা (motivation ) পাবেনা ।

সমাজতান্ত্রিক মতবাদ তাই মুখ থুবরে পড়লো। গনতন্ত্র এবং transparency’র অবর্তমানে Communist Party কর্তা ব্যক্তিগন corrupt হলেন । মানবাধিকার এই সমাজ ব্যবস্থায় পুরোপুরি লংঘিত হলো। যেমনটি হয়ে থাকে ধর্মাশ্রিত সমাজ ব্যবস্থায়।

বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ এবং বামমৌলবাদের চরিত্র এক । উগ্র ধর্মান্ধতা যেমন উন্নয়নে বাঁধার সৃস্টি করে; বাম মৌলবাদ একই ভাবে প্রগতির নামে বরং প্রগতির পথে বাঁধ্ সাধে। সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিস্ঠা নিয়ে বামপন্থীদের আন্দলন একটি জ্বলন্ত উদাহরণ ।

এবার গনতন্ত্র ও পুঁজিবাদ নিয়ে একটু আলোকপাত করা যাক। এই মতবাদটি সর্বশেষ চলমান জনকল্যাণমুখী একটি মতবাদ। সরকার হবে জনগনের , জনগনের কর্তৃক নির্বাচিত এবং জনগনের জন্য। সরকারের কোনো মতামত নাই। জনগনের মতামতই চুড়ান্ত। প্রত্যেক মানুষ যেহেতু একক এবং ভিন্ন ভিন্ন স্বত্বার অধিকারী ; সুতরাং অধিকাংশের মতামত যেই বিন্দুতে মিলিত হবে সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে । সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবাইকে একসংগে কাজ করতে হবে ।

সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহনকারী সবাই তখন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিজেদের প্রত্যেককে দায়িত্ববান মনে করবে ।

পুঁজিবাদ এই তন্ত্রের মূলমন্ত্র । অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজি সৃস্টি করা অর্থনীতির উপাদানসমূহের মধ্যে অন্যতম । এখানে ব্যক্তির মেধা , সৃস্টিশীলতা ,দক্ষতা , সক্ষমতা ইত্যাদিকে এবং সম্পদের ওপর ব্যক্তির মালিকানাকে সর্বোচ্চো গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । ব্যক্তি সম্পত্তির মালিকানা পেলেইতো তা রক্ষণের এবং সম্প্রসারনের জন্য সচেষ্ট হবে।

ব্যক্তির অতিরিক্ত সম্পদ পূনর্বিনিয়োগ হয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিকে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর করবে । প্রবৃদ্ধির (GDP -Gross Domestic Production বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ) হার বাড়তে থাকবে যার একটি শতকরা হার প্রতিবছর বর্ধিত হারে বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে যুক্ত হতে থাকবে ।

গনতন্ত্র ও আইনের শাসন , ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে fair competition নিশ্চিত করবে । আইনের শাসন মানবাধিকার নিশ্চিত করবে । বাজার-প্রতিযোগিতা চাহিদানুযায়ী পন্যের উৎপাদন এবং মান নিশ্চিত করবে । চাহিদা এবং যোগানের cross point এ পন্যের price নির্নীত হবে ।

সরকার শুধু অবকাঠামো তৈরী করবে এবং ব্যক্তির বিকাশে প্রনোদনা ( motivation ) প্রদান করবে ।

ব্যবসায়ের সাথে যেহেতু মুনাফা জড়িত
সেহেতু সরকার জনগনের সাথে ব্যবসায় করতে পারেনা । সরকারের ব্যবসায় প্রতিস্ঠান থাকা উচিত নয় ।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পুরোটা সরকার নিয়ন্ত্রিত বিধায় দুর্দশা এবং জড়াগ্রস্ত।

গনতান্ত্রিক সমাজে জনগন যেহেতু ক্ষমতা পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি সেহেতু জনগনের সহায়ক কর্মসূচী গ্রহনে সরকার বাধ্য থাকে । গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সরকার , আইনসভা (parliament ) , এবং আদালত যেহেতু তিনটি সার্বভৌম সংস্থা সুতরাং এই ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে checked and balanced.

মোঃ শফিকুল আলম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক