সিডনিতে মাকসুদ: ফিডব্যাককে তো আর বলতে পারি না আমাকে নেন…

সিডনিতে মাকসুদ: ফিডব্যাককে তো আর বলতে পারি না আমাকে নেন…

সিডনি এয়ারপোর্টে মাকসুদ

কাউসার খান:বাংলাদেশে ব্যান্ড দলের ইতিহাসটা প্রায় চার দশক পুরনো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নতুন দেশ গড়ার পাশাপাশি যাত্রা শুরু হয় কিংবদন্তি ব্যান্ড দলগুলোর। সেই ব্যান্ডদলগুলোর একটি ফিডব্যাক। এখনও উৎসব মানেই  ‘মেলায় যাইরে’ গানে মেতে উঠে সবাই, সেই বহুল জনপ্রিয় গানটিও লিখেছেন এবং গেয়েছন মাকসুদ। এমনকি ফিডব্যাকই বাংলাদেশের প্রথম ব্যান্ডদল যারা মাত্র একটি গানের অ্যালবাম দেহঘড়ি বের করে। আর সে অ্যালবামও রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়। এর বছরখানেক পরেই দলের সাথে মতানৈক্যের অভাবে ফিডব্যাক ছাড়েন মাকসুদ। তৈরি করেন নিজের ব্যান্ড মাকসুদ ও ঢাকা। এখন যাদের বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ, তারা দেখেছেন বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের সেই সোনালি দিন। বড় হয়েছেন মাকসুদের জনপ্রিয় সব গান শুনে। আজ ১৩ অক্টোবর সিডনিতে আয়োজিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশিদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাদেশ নাইট-২০১৮। সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স থিয়েটারে ৬  টায় আসর বসবে আসর এ অনুষ্ঠানের। এ মুহুর্তে এ কনসার্টে অংশ নিতে সিডনি আছেন মাকসুদ ও তার দল। ফিডব্যাক ছেড়ে যাওয়া, বাউল সঙ্গীতের ফিউশনসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাকসুদ। তারই কিছু অংশ থাকছে এখানে।

২০১৩ সালেও সিডনি এসেছিলেন। অ্যাডিলেড দিয়ে শুরু করেছেন আপনার এবারের অস্ট্রেলিয়া সফর, কেমন লাগছে?

‘ওই বছরের শোটাও ভালো ছিল; যদিও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছিলাম। এবার অনেক রিল্যাক্স। অ্যাডিলেড আমার প্রথম শো। খুবই ভালো লেগেছে। দর্শকরা খুবই প্রাণবন্ত ছিল। অনেক ঘোরাঘুরি করেছি।’

সিডনিতে নতুন কিছু দিচ্ছেন কি এবার?

‘আমি নতুন করে আসছি আবার। পাঁচ বছর আগের ব্যান্ডটা এখন অনেক পরিপক্ক। সবসময় সঙ্গীতকে নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টাই থাকে। এ যুগের সাথে মিল রেখেই আমরা সঙ্গীত পরিবেশনা করি। আশা করি নতুন কিছু দিতে পারব।’

আপনি নেই বলে ফিডব্যাককে প্রাণহীন মনে হয়। এটা কি আপনাকে কষ্ট দেয়?

‘আসলে ২১ বছর হয়েছে ফিডব্যাক ছেড়ে দিয়েছি। ওদের সাথে আমার ডিভোর্স বা সেপারেশন হয় নাই, শুধু চলে আসছি। মানুষের মুখেও শুনি হতাশার কথা। এখন আর আনন্দ, বেদনা বা কষ্ট লাগে না।’

ফিডব্যাকে ফেরা যায় না ? 

‘এরকম অনেকেই বলে। আমি যদি ওটা নিয়ে পড়ে থাকতাম তবে আজ যেখানে আছি এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। ২১ বছরে কিন্তু আমার অনেক অর্জন, ৩-৪টা এ্যালবাম আছে। অনেক আন্তর্জাতিক শো আছে। আর আমি ফিডব্যাক ছেড়ে এসেছি নতুন একটা দল করব বলে, যেটা করেছিও। আর এক হতে হলে অফারটা তাঁদের (ফিডব্যাক) কাছ থেকে আসতে হবে। আমি তো আর বলতে পারি না আমাকে নেন।’

বেঈমানি করব কি করে?

ফিডব্যাকে না ফেরার আরও একটা কারণ দেখান মাকসদু। বলেন, ‘আমার সাথে যারা ২১ বছর গান করেছে তারা কি করবে? তাদের সাথে আমি এত বড় একটা বেঈমানি করব কি করে? আমার ৪১ বছরের মিউজিক্যাল ক্যারিয়ারের ২০ বছর ফিডব্যাকে আর ২১ বছর এদের সাথে আমি কাটিয়ে দিয়েছি। আমার জন্য এটা অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত হবে।’

পোষাকে এত পরিবর্তন কেন ? 

লালনের ভক্ত বা সাধু চর্চা কোনো কিছুই তাঁর পোষাক-সাজসজ্জাকে প্রভাবিত করে না। বললেন, ‘পোশাকটা আমি পরিকল্পনা করে কিছু করি না। আমার ভালোলাগা থেকেই করি। ইংরেজিতে একটি কথা আছে—আপনি কী পোশাক পড়ছেন, সেটি ফ্যাশন নয়; বরং স্বয়ং আপনিই ফ্যাশন।’

সম্পর্ক লালনের সাথে, রবীন্দ্রনাথের সাথে নেই

রবীন্দ্র সঙ্গীতের সাথে অন্যান্য সঙ্গীতের মিশ্রণে নতুন ধরনের সঙ্গীত তৈরি করেছিলেন মাকসুদ। সে গানগুলো যেমন অনেক শ্রোতার মন কুড়িয়েছে, তেমনি মন ভেঙেছেও অনেকর। সে ধরনের মিশ্র গান আবারও করবেন? জবাবে মাকসুদ জানালেন, ‘রবীন্দ্র সঙ্গীত করব না এটা কিন্তু বলি নাই। এখন রবীন্দ্রনাথকে ডিজিটাল যুগে আমি কিভাবে উপস্থাপন করব? সেই তবলা, হারমোনিয়াম, ডুগডুগি দিয়ে হবে না। রবীন্দ্রনাথসহ আরো অনেক বড় সাধকদের নিয়েই কাজ করছি। পুরোপুরি রবীন্দ্র ফিক্সেশন আমার নেই, লালন ফিক্সেশন আছে।’

বাউল সঙ্গীতই বাংলাদেশের রুট রকস

‘৮৮ থেকে এই পথে আছি। বয়স বাড়ছে কমিটমেন্টের জায়গাও বাড়ছে। আগে যা বোঝতাম তার থেকে এখন আরো ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি। নতুন নতুন তত্ত্ব আসছে। সাধকদের মধ্যেতো আমার বন্ধুর অভাব নেই। বাউল মিউজিক হলো ‘রুট রকস’। এটা বাংলাদেশের আসল রক মিউজিক।