‘চিরকুট’ এবং ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডকে সিডনিবাসী মনে রাখবে বহুদিন

‘চিরকুট’ এবং ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডকে সিডনিবাসী মনে রাখবে বহুদিন

গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের সাইন্স থিয়েটারে এক ঝাঁক তরুণ আয়োজকদের একটি সফল আয়োজন ছিল বাংলাদেশ নাইট ১৮ এবং ‘লিসেন ফর’ সংগঠনের সফলতার আরও একটি মাইলফলক তৈরী হল সিডনিতে।
গত কয়েক মাস ধরে সিডনি তথা বিশ্ব বাংলা প্রচার মাধ্যমে বার বার ভেসে আসছিল যে ‘চিরকুট এবং ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ এই দুইটি ব্যান্ড আসছে সিডনিতে। ব্যান্ড দুটি আসল বাংলাদেশ থেকে এবং উপহার হিসেবে সাথে নিয়ে আসল খরায় আক্রান্ত অস্ট্রেলিয়ার জন্য বৃষ্টি এবং বৃষ্টি। কিন্তু ভক্তদের কে রুখে ? বিকাল হতেই মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ছুটে চললো ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের সাইন্স থিয়েটারে।

বৃষ্টির কারণে একটু বলম্ব হলেও যথারীতি অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণ সমাজের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুট আসল তাদের দলবল নিয়ে স্টেজে। চিরকুট শুধু ব্যান্ড সংগীতেই জনপ্রিয় না, তারা এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার চলচ্চিত্রেও গানের সুর ও পরিচালনায় ইতিমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। সুতরাং দর্শক ধরে রাখার মত যথেষ্ট পুঁজি তাদের ভাণ্ডারে ছিল। ‘কানামাছি’, ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ , আহারে জীবন , দুনিয়া , ‘খাজনা’, ‘মরে যাবরে’ এই গান গুলো গেয়ে শুধুমাত্র উপস্থিত দর্শকদের ছাড়াও ফেইসবুক লাইভের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে মুগ্ধ করেন শারমিন সুলতানা সুমি। তাকে ভোকাল ও বাদ্যযন্ত্রে সহায়তা করেন পাভেল আরিন,ইমন চৌধুরী,দিদার হাসান এবং জাহিদ হাসান নিরব। চিরকুট প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াতে এসেছেন এবং তাদের উপভোগ্য পরিবেশনা সিডনিবাসীর মনে গেথেঁ থাকবে বহুদিন।

সামান্য বিরতির পরেই আসেন বহুল প্রতীক্ষিত ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ রাত ১০ টা নাগাদ। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের জীবন্ত এক কিংবদন্তী মাথায় গামছা বেঁধে গত ৩০ বছরের আগের বেশে সেই চির তরুণ মাকসুদুল হক দৌড় দিয়ে স্টেজে আসেন এবং উপস্থিত দর্শকরাও উচ্ছসিত হয়ে করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান। মিনিটের মধ্যেই নব্বইয়ের দশকের সেই চেনা মাকসুদ শুরু করেন তার পুরানো ভঙ্গিমায় একটু গল্প এবং সেই গল্পের সাথে গানটির যুগসূত্রটা। দর্শকদের একের পর এক অনুরোধের তালে তালে চললো মাকসুদ ও ঢাকার দর্শক মাতানো গানের পরিবেশনা। অতীতেও মাকসুদ দর্শক শ্রোতাদের খুব কাছে টেনেই তার গানের পরিবেশন করতেন, তার একটুও ব্যতিক্রম ঘটেনি সিডনিতে। তিন থেকে চারবার তিনি স্টেজ থেকে নেমে আসেন দর্শকদের গ্যালারির কাছে এবং দর্শক শ্রোতারাও অভিভূত হয়ে সাথে সাথে গানের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে গান করেন। সিডনিবাসী এই ধরণের একটি ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা অনেকদিন মনে রাখবে। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে এক্স-শাহীন স্কুল এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদের প্রাক্তন সহপাঠী মাকসুদকে একটি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ‘উদাসী এই মনে ‘, ‘হে হে দেখা হয়নি বলে’, ‘কেন খুলেছ তোমার ও জানালো’,’কারো বুকের আলিঙ্গনে লুকিয়ে’,’তুমি কি মোর জীবন জ্বালা’, ‘কেন খুলেছি ‘মৌসুমী করে ভালবাস তুমি’,’মনে পরে তোমায়, মনে পরে আলিঙ্গনে’, ‘মাঝি তোর রেডিও নাই বইল্লা’, ‘মেলায় যাইরে’ গান সহ আরও কিছু গান পরিবেশন করেন যা কিনা রাত বারোটা পর্যন্ত গড়ায়। মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ডে আরও ছিলেন ফজলুল হক মন্টু, জন সুতন মুন্সী, একরামুল হক এবং গোলাম রাব্বানী সোহাগ।

অনুষ্ঠান চলাকালীন এবং অনুষ্ঠান শেষে সিডনিবাসীদের ফেইসবুক খুবই ব্যস্ত ছিল। অনেকেই ফেসবুকের লাইভ এ প্রায় সবকটি গানই দিতে দেখা গেছে। ‘চিরকুট’ এবং ‘মাকসুদ ও ঢাকা ‘ দুইটি ব্যান্ড তাদের গান পরিবেশনা শেষ করে দর্শকদের সাথে ফটোসেশনের জন্য অনেক সময় দেন, এতে দর্শক শ্রোতারা খুশিই হন এবং আয়োজকদের প্রশংসা করেন।

স্থানীয় সামাজিক, মিডিয়া বাক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজক ‘লিসেন ফর’ সংগঠনের পক্ষ থেকে ফয়সাল ফরিদ জয়, আক্তার উদ্দিন টিপু, মাহমুদ ইমন ও মৃদুল সবাইকে অংশগ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।