আওয়ামী লীগ বিএনপি দেখে করোনা রোগ ছড়াবেনা

আওয়ামী লীগ বিএনপি দেখে করোনা রোগ ছড়াবেনা

ফজলুল বারী:বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক একটা সন্তুষ্টিতে ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ায় করোনা ভাইরাস ঢুকেছে বেশ কিছুদিন আগে। সতর্ক বাংলাদেশ এর বাইরে ছিলো। মাঝে একজন লিখেছিলেন করোনা ভাইরাস আসলে নাকি বাংলাদেশে চলে এসেছে!  কিন্তু মুজিব জন্মশত বার্ষিকীর কারনে সরকার তা গোপন করছে! রবিবার সকালে বাংলাদেশে এ নিয়ে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথাও হচ্ছিল। তাকে তখন আমি বলেছিলাম, ভাইরে আজকের যুগে এসব লুকোনো অসম্ভব। কোন না কোনভাবে তা প্রকাশ পাবেই। অবশেষে রবিবার সরকারি ভাবে জানানো হলো ইতালি থেকে আসা দুই বাংলাদেশি, তাদের এক স্বজন করোনায় আক্রান্ত এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আক্রান্তদের একজন নারী, দু’জন পুরুষ।  আমার বন্ধুটি একটি প্রতিষ্ঠিত বায়িং হাউসের মালিক। ইতালির তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর ব্যবসা আছে। করোনা পরিস্থিতির কারনে এর দুটি এখন প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। একটি এখনো খোলা আছে। এই ব্যবসায়ী উদ্বেগ জানিয়ে বলছিলেন, তাদের ব্যবসাটি এমন যেখানে ফিজিক্যালি যেতে হয়। তাই প্রতিষ্ঠান বেশিদিন বন্ধ থাকলে ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বেই।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমনজনিত এবার এই বৈশ্বিক দুর্যোগকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নানা প্রস্তুতি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষনা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনার মিডিয়া ব্রিফিংটি আমার খুব পছন্দ হয়। সেখানে সব তথ্যই সেখানে চলে আসে। করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এখন প্রবাসীদের দেশে না ফিরতে অনুরোধ করা হচ্ছিল। কিন্তু বাংলাদেশিরা এই সময়েই দেশে ফিরতে চান। যাদের রোগ শনাক্ত হয়েছে তাদের নিঃসন্দেহে ভালো চিকিৎসা হবে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে সাহসের সঙ্গে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই একজন লোক মরে যায় না। মিডিয়ার লোকজনকে অনুরোধ করবো রিপোর্টটি করতে হবে সাবধানে। কোনভাবে অতি উৎসাহে নীতিমালার বাইরে যাওয়া যাবেনা। রোগীদের নাম সাকিন মিডিয়ায় প্রচার করে পরিবারগুলোকে সমাজ বিচ্ছিন্ন করবেননা প্লিজ। অস্ট্রেলিয়ায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের নাম পরিচয় আমরা কেউ জানিনা। সে চেষ্টাও কারও নেই।

দাবানলে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এরপর করোনা ভাইরাস লন্ডভন্ড করে দিয়েছে পর্যটন ও শিক্ষা খাতকে। প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়া শিক্ষাখাতে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করে। বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের সিংহভাগ চায়নিজ। কিন্তু করোনা সংক্রমন পরিস্থিতির কারনে তাদের সিংহভাগ এবার এখনও চীন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছতে পারেননি। এই ভাইরাস সংক্রমনের পর থেকে চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ বিমান যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে দক্ষিন কোরিয়ার সঙ্গে। ইতালি থেকে যারা আসছেন তাদের ব্যাপারেও বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে আনা অস্ট্রেলিয়ানদের কোয়ারেন্টাইন সময় কেটেছে মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ক্রিসমাস আইল্যান্ডে। এরপর কোয়ারেন্টাইন জোন করা হয়েছে নর্দান টেরিটোরির সাবেক মাইনিং এলাকার বিশ্রামাগারে। গত সপ্তাহে সিডনির এক স্কুল ছাত্রের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা ভাইরাস। এরপর অনেককে বাড়িতে থেকে অনলাইনে পড়াশুনার কথা বলা হচ্ছে। সবকিছুতে মূল সুরটি কোথাও যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়।

দাবানলের সময় বিপুল ব্যবহারের কারনে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে মাস্কের সংকট দেখা দেয়। এখন স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে সরকারি উদ্যোগে মাস্ক সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত অনেক ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী চীনে মারা গেছেন। সেই অভিজ্ঞতায় সতর্কতা হিসাবে ভিডিও কলের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু একজন ডাক্তার ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগী দেখতে বা রোগীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। কিন্তু নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদেরতো রোগীর সংস্পর্শে যতে থাকতেই হবে। এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বাসায় থেকে অনলাইনে কাজ করতে বলছে।

বাংলাদেশে করমর্দন করা, বুক মিলানো, কোলাকুলি করা এসব অভ্যর্থনার প্রচলিত মাধ্যম। করোনা পরিস্থিতির কারনে এসব বিষয়ে আপাতত নতুন সতর্কতার কথা ভাবতে হবে। করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যারা ফিরছেন তারা যাতে বিমান বন্দর থেকে বাসায় ফিরতে গণপরিবহন ব্যবহার না করেন। সব মিলিয়ে সতর্কতাই এই মূহুর্তের সবচেয়ে বড় করনীয়। এক সময় ঝড় সাইক্লোন বন্যায় বাংলাদেশে অনেক লোকজন মারা যেত। কিন্তু এখন এসব পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে লড়তে অভ্যস্ত সংগ্রামী মানুষেরা মৃত্যু কমেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চাইতে আমেরিকায় মৃত্যুহার বেশি। করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধেও আশা করি বাংলাদেশ নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে। আল্লাহর ওয়াস্তে  কেউ এ পরিস্থিতি নিয়ে দুষাদুষির রাজনীতি করবেননা। আওয়ামী লীগ বিএনপি দেখে এ রোগ ছড়ায়না। যিনি এই পরিস্থিতির সুযোগে দুষাদুষির বিষবাষ্প ছড়াতে চাইবেন তিনিই যে আক্রান্ত হবেননা এর কোন গ্যারান্টি নেই। অতএব সাধু, সাবধান।

ফজলুল বারী
fazlulbari2014@gmail.com