কালো গোলাপ

কালো গোলাপ

অন্যরকম একটা সময়ে আমরা আছি সবাই I এক গ্লাস পানি কিংবা এক কাপ চা হাজির হয়ে যেত সামনে, সেখানে বারান্দায় দেখা যাচ্ছে বাড়ির মাথা নির্দ্বিধায় মপ করছেন I যদিও তিনি হয়তো বালতিতে ন্যাকড়া নিংড়ে মেঝেতে বসে ঘর মুচ্ছেন না, সেটা আরো কষ্টের হতো I তবুও এটা এক নতুন পৃথিবীর দৃশ্য I আবার অন্য কোথাও হয়তো দেখা যাচ্ছে রান্না বান্নাও চালিয়ে নিচ্ছেন I বাড়ির ছেলেটিও হঠাৎ করেই কেমন বদলে গেল, মাকে জিজ্ঞেস করছে কোনো সাহায্য লাগবে কিনা I যে মেয়েটি দিন রাত অনলাইন কিংবা বন্ধু বান্ধব নিয়েই কাটাতো সে আজ ঘরের অনেক কাজের দায়িত্বই নিয়ে নিয়েছে I

করোনা আতংকে বাড়ির হেল্পারকে বিদায় দিতেই হলো I অবিশ্বাস্ব ঘটনা ঘটে গেলো হঠাৎ করেই I মানুষগুলো শিখে গেলো কি করে নিজের কাজ নিজেই করা যায় I

বিদেশে যারা চলে এসেছি কষ্ট হলেও দ্রুত এভাবেই আমাদেরকেও নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল I অনেক সময়ই শুনেছি বাংলাদেশের রান্নার কাজ অনেক ঝামেলার I মসল্লা বাটা, মাছ কুটা, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা সবকিছু হাতে করতে হয় I মানলাম অনেকেই হয়তো সবকিছুই হাতে করান হেল্পার কে দিয়ে I কিন্তু হেল্পার এর একটু আরামের কথা চিন্তা করে হলেও তো অনেক নিয়ম বদলে ফেলা যেত, আর তাছাড়া সেটা হয়তো অযথা উদ্বিগ্ন কমাত কিছুটা যখন হেল্পার ছুটিতে যেত কিংবা বিদায় নিতো I

এখানে আমরা ঘরে বাইরে সবকিছুই সামলে নেই I এখানে অনেক বাড়ির মাথাই আছেন ঠিক দেশের সুখস্মৃতিকে বহন করে চলেন, মানে ঘরের কাজে কোনো অবদান তারা রাখতে চান না I এদিক থেকে বাংলাদেশের ছেলেদের প্রশংসা করতে হয়, এই অল্পদিনের কোয়ারান্টিনে তারা অনেক মানবিক হয়ে উঠেছেন I এখানেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে অনেকের মাঝে I সবচাইতে বড় লাভ হয়েছে বাড়ির কর্তা বুঝতে পেরেছেন ঘরের কাজগুলো ফু দিলেই হয়ে যায়না I আলু ভর্তা আর ডাল ভাত করতেও কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন হয়, এটা তারা নতুন করে উপলব্ধি করলেন আর মনে মনে বললেন বাইরের কাজ ই অনেক ভালো I একটু বিবেকেও করা নাড়লো, না বুঝে কতই না কটাক্ষ করে বলেছি এইসব ঘরের কাজ করতে লাগে এক ঘন্টা I

তাহলে করোনা আমাদের সমাজ বিবর্তনের ক্ষেত্রে বহুবিধ অবদান রাখছে নিশ্বব্দে I প্রকৃতির নিয়মের কাছে যে অসহায় তা অনেকেই বুঝে গেছেন হয়তো এর মাঝেই I যারা বোঝেন নি তারা অন্তত মৃত্যুভয়ে আছেন I

পরিবেশ দূষণে আমরা অনেকটাই এগিয়ে I কোয়ালিটির থেকে কোয়ান্টিটির যুগে আমাদের বসবাস I প্লাষ্টিক আর প্লাষ্টিক উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম এ I নিম্নমানের সুতো দিয়ে অশংক্ষ কাপড় চোপড়ে বাজার ছেয়ে গেছে I আমাদের এত বেশি জিনিস নিত্য নতুন প্রয়োজন হয় যে আমরা একটিবারের জন্যও ভাবিনা এসবকিছুই পরিবেশের উপর কতটা চাপ ফেলছে I নবীকরণযোগ্য সংস্থান কিংবা রিসাইকেল আমাদের আধুনিক মানষিকতাতে কড়া নাড়ে না I অথচ এভাবে আমরা কতটাই না সাশ্রয় করতে পারতাম যা কিনা অন্য অনেক ভালো কাজে আসতে পারতো এবং পৃথিবীটা সুস্থ-সবল থাকতো I

আমার বড় মেয়ে আমার জন্মদিনের উপহার পাঠালো যা অনেক অর্থ বহন করে I উপহারটি ছিল একটা কালো গোলাপ বিশেষ ভাবে সংরক্ষন কড়া যা কিনা সারা বছর একইরকম প্রস্ফুটিত থাকবে I এটা সে কিনেছে একজন লোকাল এন্ট্রেপ্রেনিউর এর কাছ থেকে I এই উপহারটির বিশেষত্ব হলো: লোকাল বিসনেস এর প্রোডাকশন এবং নন-মেটেরিয়ালিস্টিক উপহার I লোকাল এন্টারপ্রেনিউরদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে যাতে আরো অনেকেই আমাদের কমিউনিটির জন্য কাজ করতে পারে I মেয়েটা আমার পছন্দের কথাও মনে রেখেছে, কালো গোলাপ আমার খুব পছন্দ I কালো গোলাপ দেওয়ার পিছনে আরেকটা কারণ বর্তমান দুর্যোগ I ছোট মেয়েটাও গৃহবন্দী, সে একটা কেক নিজের হাতে বানালো আর একটা পেইন্টিং করে দিলো আমাকে তার পুরোনো একটা ক্যানভাস এ নতুন রঙে I আমি বলেছিলাম এবার কোনো সেলেব্রেশন চাইনা I তবুও মেয়েরা একটু কিছু করতে চায়, ভালোই লাগলো I কোয়ারেন্টাইন অনেককেই ক্রিয়েটিভ কাজে উৎসাহিত করছে, অনেকেই প্রকৃতিকে নতুন করে দেখছে, ঘরে যা কিছু আছে তার যথোপযুক্ত ব্যবহার বেড়েছে I

কথাগুলো অনেকদিন থেকেই কড়া নাড়ছে মাথায় আজ ইচ্ছে হলো লিখতে I হয়তো কারো কাছে পৌঁছুবে I সচেতনতা আসতে হবে প্রতিটি ঘর থেকে, মূলত মেয়েরাই এই হাল ধরতে পারেন সবার আগে I আর হাল ধরা ছাড়া কোনো গতি নাই, প্রকৃতির ঝড় বার বার আসছে ভিন্নরূপে আর তা সবচাইতে এলোমেলো করছে প্রতিটা মেয়ের জীবনকে। একটু ভাববেন, একটু চোখ কান খুলে পৃথিবীর অন্য প্রান্তেও কি হয়ে যাচ্ছে খেয়াল করবেন জেনে যাবেন।

মলি সিদ্দিকা (পার্থ, অস্ট্রেলিয়া)