ফজলুল বারী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আওয়ামী সভাপতি রহমত উল্লাহ খুনি মোস্তাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মুখ ফসকে তিনি নাকি জাতির পিতার খুনিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেলেন! এটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া গরম। অনেকেই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। এ নিয়ে আপনি আপনার সুবিধা মাফিক হাসতে বা কাঁদতে পারেন।
ইদানিং এই রোগটা প্রায় প্রকাশ পাচ্ছে! কিন্তু রোগ প্রকাশ পাবার বেশি আলোচনা দেখলে পদচ্যুতি ছাড়া আর কিছু দেখবেননা। রোগ নিরাময়ের কোন উদ্যোগ নেই। শুধু লক্ষনে মলম লাগানো হচ্ছে! রহমত উল্লাহকে পদচ্যুত করার অবশ্য এখনও কোন লক্ষন নেই! সেখানে বাস করা তাদের ছাও এখন বেশি!
টিএসসিতে নামাজের জায়গা হবে থাকবে কিনা তা নিয়ে তারা এখন ব্যস্ত! কাছেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ। সেখানে যেতে কি পায়ে ব্যথা করে? টিএসসি নামাজ বা সব ধর্মীয় মানুষের ধর্ম চর্চার উদ্দেশে যে বানানো নয়, এই সাফ কথাটি বলার মতো লোকজনও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই!
এমন রোগে পদ হারিয়েছেন গাজীপুরের লাল্টু চেহারার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। টাকা তাকে মেয়র পদ কিনে দিয়েছিল। এমন উসিলায় যখন দলের ত্যাগী নেতা-প্রার্থীরা বঞ্চিত হন, তখন সাফ বলা হয় খেলায় মাঝে মাঝে ভালো খেলোয়াড় হায়ার করতে হয়! আজব এক যুক্তি!
তখন আপনাকে ভাবতেই হবে ‘পথিক পথ হারাইয়াছে’! আওয়ামী লীগ দলটাও এখন আর ত্যাগী নেতা-কর্মীর বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সংগঠন আর নয়। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলই এখন আর নীতিনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের দল নয়। এখন সব সহমত ভাই! আপনি সেরা ভাই! লাভইউ!
কোন নীতিনিষ্ঠ মানুষজনের রাজনৈতিক সংগঠন করার পরিবেশ ধংস করা হয়েছে! এরজন্যে এই আওয়ামী লীগকে নিয়ে দেশের মানুষের অনেক আশাভঙ্গের বেদনা থাকলেও জনগনের সামনে কোন সেকেন্ড চয়েস নেই। শেষমেশ অনেককে বলতে শুনবেন, ওগুলোতো আরও বড় চোর। বড় ডাকাত!
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে নানা ইস্যুতে প্রায় বিভিন্ন টিভিতে দেখা যেতো। গাজীপুরের মেয়র অথবা জাহাঙ্গীর আলম কোন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় চরিত্র-ব্যক্তিত্ব ছিলেননা। এরপরও তাকে কথায় কথায় টকশো সহ নানান উসিলায় টিভিতে দেখা যাবার কারন ছিল টাকা।
এই সেই মেয়র যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ক্ষমার অযোগ্য আপত্তিকর বক্তব্য সহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন! অথচ এরজন্যে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখিন করা হয়নি। কারন এসব যারা করবেন তাদের কাউকে কাউকে তিনি টাকা দিতেন। টাকার গুণে জাতির পিতাকে কটাক্ষ করা সেই মেয়র জেলখানার জীবনের স্বাদ পেলেননা।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মাইকে ডাকার সিরিয়াল মানা হয়নি এই অভিযোগে এক সরকারি কর্মকর্তাকে চড় মেরেছিলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ! নামে তার একটা বাদশাহী ভাবের পরিণতি নিয়ে তিনি ভাবেননি! অতএব তিনি পদ হারিয়েছেন।
অতঃপর এলাকা থেকে পালিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে এসে ওঠেন গদিচ্যুত শাহনেওয়াজ শাহানসাহ। সেখান থেকে আরও কয়েক সহযোগী সহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু গ্রেফতার করার সময় বলা হয় মাদক মামলার কথা! র্যাব বলেছে তিনি হোটেলে মাদক নিচ্ছিলেন!
শাহনেওয়াজ শাহানসাহ চেয়ারে থাকতে কখনো এসব বলা হলোনা, চেয়ার হারানোর সময় বলা হলো মাদকাসক্তির অভিযোগ! মোড় ঘুরে গেলো! এতে করে আরও কিছু লোকের টাকার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু আসল অসুখের চিকিৎসা হবেনা। চড় মারার অসুখের ওষুধ কি শুধুই গদিচ্যুতি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি রহমত উল্লাহ আওয়ামী লীগ সমর্থক ও আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগ্রহপ্রার্থী শিক্ষকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এখন এসব সংগঠনেও এখন আদর্শিক বিষয়াদি কাজ করে কম। সুযোগ-সুবিধাই মূল।
অতএব মগজে পচন ধরা সংগঠনের মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে খুনি খন্দকার মোশতাককেও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রহমত উল্লাহ! খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী ছিলেন। সেই একাত্তরেই মুক্তিযুদ্ধ বাদ দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের চেষ্টা করছিলেন খন্দকার মোশতাক!
এরজন্যে তখনই তাকে দায়িত্বে নিষ্ক্রিয় করা হয়। দেশের প্রথম সেই সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক কাজকর্ম করানো হচ্ছিল বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, আব্দুস সামাদ আজাদ প্রমুখকে দিয়ে। এদেরকেই তখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।
সেই খন্দকার মোশতাক এরপরও স্বাধীন বাংলাদেশে কিভাবে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলো, তাজউদ্দিন আহমদদের হটিয়ে হয়ে গেলো অপ্রতিরোধ্য তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোনদিন থিসিস-গবেষনার চিন্তা-চেষ্টা করেছে? না এ ব্যাপারে ওহী নেই?
ওহী নির্ভর এসব বিশ্ববিদ্যালয় চলছে দেশের জনগনের টাকায়। কিন্তু এসবের আউটকামটা কি? এখন আর পৃথিবীর মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। এটা নিয়ে কারও কোন আক্ষেপ-মনোপীড়াও নেই! চপ-সিঙ্গারার দাম নিয়েই উপাচার্য খুশি!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য কবি মুহাম্মদ সামাদ একজন পোড় খাওয়া মানুষ। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে সব সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। সেই অনুষ্ঠানে রহমত উল্লাহর খুনি খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানানোকে চ্যালঞ্জ করেন এই কবি মুহাম্মদ সামাদ।
এরপর সবার টনক নড়ে! রহমত উল্লাহর বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হয়। রহমত উল্লাহ এরজন্যে দূঃখ প্রকাশও করেছেন। তার নাকি মুখ ফসকে কথাটি বলে ফেলেছেন! কিন্তু এ ব্যাপারে শুধু কি দূঃখ প্রকাশই যথেষ্ট? এ বিষয়টি চুলচেরা বিশ্লেষনের মতো মানসম্পন্ন অবস্থায় কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে? এর জবাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।
রহমত উল্লাহকে গদিচ্যুত গ্রেফতার-বিচারের সম্মুখিন করার দাবিতে কোন আন্দোলন হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে? কোটা জাতীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়, টিএসসিতে নামাজের জায়গা ছাড়া কী এমন ইস্যুতে এখন কোন প্রশ্নের তৈরি হয় একদার জাতীয় সব আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার ছাত্রছাত্রীদের মনে-মননে?