সিডনির বাঙ্গালীদের বটবৃক্ষ গামা আব্দুল কাদিরের ৭৪ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

সিডনির বাঙ্গালীদের বটবৃক্ষ গামা আব্দুল কাদিরের ৭৪ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

সিডনিতে বাঙ্গালীদের গোড়াপত্তনে যে কয়েকজন বাঙ্গালী অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন তারমধ্যে গামা আব্দুল কাদির অন্যতম। কমিউনিটির কয়েকজন মিলে গত ৫ ফেব্রুয়ারী অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে সিডনি তথা অস্ট্রেলিয়ার বাঙ্গালী কমিউনিটিতে সবচেয়ে প্রিয় মুখটির ৭৪ তম জন্মদিন পালনের আয়োজন করেন সিডনির লাকেম্বাস্থ ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায়। গামা আব্দুল কাদির ১৯৪৯ সালে ২ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানায় জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি গামা আব্দুল কাদির অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থিতু হন। পেশাদার কাজে ও ব্যবসার পাশাপাশি তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে আসছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় সিডনির সনামধন্য ব্যাক্তিত্ব প্রয়াত নজরুল ইসলামের হাতে তৈরী করা বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়ার। সেই সংগঠনে ১৯৮১ সাল থেকে জনাব গামা কাদির তিন বার সাধারণ সম্পাদক এবং ১১ বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়া ১৯৮১ সালে সিডনির নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা শিক্ষার জন্য রেন্ডউইকের ৩৩ বান্ডক স্ট্রিটের কমিউনিটি হলে উইকেন্ড বাংলা স্কুল চালু করেন।
অবৈধ বাঙ্গালী যারা ৮১৬ ভিসায় সিডনিতে বসবাস করছিল তাদের মধ্যে প্রায় ৩৬০ জনের জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে গামা আব্দুল কাদিরের নেতৃত্বে ১৯৯২-৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সাথে জোর লবি করেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া সরকার অস্থায়ী বসবাসকারীদেরকে সাধারণ ক্ষমা করাতে তারা স্থায়ী বাসিন্দা হবার সুযোগ পান।
জনাব গামা কাদির সিডনির সেফটনে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সিডনিতে ১৯৯০ সালে প্রয়াত গাজী রুহুল হক উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। রুহুল হকের নেতৃত্বে গামা আব্দুল কাদির, মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তরুণ, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি ড.সিরাজুল হক ,প্রয়াত তসলিম মাহমুদ ও গিয়াস মোল্লার সমন্বয়ে ১৯৯২ সালে সিডনির বারুড গার্লস হাই স্কুলে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন করেন যেখানে প্রথম অস্ট্রেলিয়া সরকারের মন্ত্রী প্রথমবারের মতো বাংলালিদের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এসবিএস রেডিওতে ১৯৮০ সালে কলকাতা থেকে আগত রথীন্দ্র মুখার্জির পরিচালনায় রেডিওতে ভারতীয় বাংলা রেডিও ১ ঘন্টার জন্য প্রচার করা হতো। গামা আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে এসবিএস রেডিওর সাথে জোর তদবির করার পর প্রথমে বাংলাদেশিদের জন্য ১৫ দিন পর পর একটি এবং পরবর্তীতে সপ্তায় ১ ঘন্টা বাংলা রেডিও চালানোর অনুমতি নেয়ার কাজটিতে জোরালো ভূমিকা রাখেন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদ ভেঙ্গে গেলে ১৯৯৬ সালে গামা আব্দুল কাদেরের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৭ সালে ব্যবসায়ী প্রয়াত নুরুল আজাদকে সভাপতি করে এবং ড.সিরাজুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে এবং গিয়াস মোল্লাকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কয়েকজনই সদস্য নিয়ে কমিটি করে আওয়ামীলীগের কার্যক্রম শুরু করেন।
১৯৯২ গামা আব্দুল কাদির অস্ট্রেলিয়াতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং টিটু সোহেল সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান দুইজন ব্যক্তি সরাসরি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং ধর্ষিতা নারীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন যাদের নাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নথিতে রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া সেই দুইজন অস্ট্রেলিয়ান মুক্তিযোদ্ধাদের সেবকদের সাথে গামা আব্দুল কাদির পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করেন।
কমিউনিটিতে যেই ব্যক্তিটি এই দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে রেখেছেন তার জন্মদিন পালনের ছোট একটা নোটিশ গত দুই দিন আগে সামাজিক মাধ্যমে দেখার পর সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন কমিউনিটির সকল শ্রেনীর নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্টজন, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক জনাব গামা কাদিরকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন।তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করা হয়। চমৎকার একটি সংগীত সন্ধ্যা, সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং ডিনার অনুসরন করে এই বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। এই অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন মাকসুদুর রহমান চৌধুরী সুমন এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সফিকুল আলম,গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, লিয়াকত আলী লিটন ও অপু সারোয়ার ।
সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কৃষিবিদ কাইউম পারভেজ, কবিতা পারভেজ, ড. মোহাম্মদ আলী, অজয় দাস গুপ্ত, সফিকুল আলম,গিয়াস উদ্দিন মোল্লা,এনামুল হক ভূইয়া, জালাল আহমেদ, মারজিয়া জালাল, ইন্জিনিয়ার মতিন, অমিয়া মতিন, কায়সার আহমেদ, আব্দুল জলিল, নির্মল্য তালুকদার, আবু তারিক, ড. শাখাওয়াৎ নয়ন, অনিলা পারভিন, আতিক হেলাল, আরফিনা মিতা, কাজি সুলতানা শিমি, মোস্তাফিজুর রহমান, নুসরাত জাহান স্মৃতি , ফজলুল হক সফিক, শেখ হৃদয়, পল মধু,অশোক অধিকারী সহ আরো অনেকে। গান পরিবেশন করেন আতিক হেলাল , আরফিন মিতা, অমিয়া মতিন ও সাহানা চৌধুরী।
পরিশেষে গামা আব্দুল কাদির উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেন এমন একটি চমৎকার উপহার দেয়ার জন্য যেখানে ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছিল অনুষ্ঠান চত্বর। আবেগে আপ্লুত কন্ঠে সবাইকে দোয়া করতে বলেন যেন আগামীতে বছর যেন সবার মাঝে উপস্থিত থাকতে পারেন।