ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ- ভারতে একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেন আরো সাহিত্যিক

ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ- ভারতে একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেন আরো সাহিত্যিক

সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ভারতে সাহিত্যের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান
সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ভারতে সাহিত্যের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান

অনলাইন ডেস্ক:  ১৪ অক্টোবর ২০১৫

ভারতের আরও কয়েকজন সাহিত্যিক দেশটির সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এঁরা বলছেন, সেদেশে যেভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়িয়ে চলেছে হিন্দুত্ববাদীরা আর প্রধানমন্ত্রী এইসব ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন, তারই প্রতিবাদ এই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া।

 

 সম্প্রতি এক মুসলমান ব্যক্তিকে গরুর মাংস খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা বা হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে কলম ধরার জন্য এক লেখককে হত্যা করার ঘটনার প্রতিবাদ করছেন এই কবি-সাহিত্যিকরা।

তবে যে সম্মান তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছেন, সেই সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার কোনও সরকারী সম্মান নয়, তাই বিজেপি সরকারের ওপরে আদৌ কোনও চাপ তৈরী হচ্ছে কী না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কিছু সাহিত্যিক।

হিন্দী ভাষার যে নামকরা কবি এই প্রতিবাদের একেবারে গোড়ার দিকে তাঁর সাহিত্য একাডেমী সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, সেই অশোক বাজপেয়ী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যেভাবে শুধুমাত্র গুজবের ফলে একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল, এতো ধর্মীয় উন্মাদনা। সমস্ত মানুষই এই ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন আর কবি-সাহিত্যিকরা তো আরও সংবেদনশীল – তাই সম্মান ফিরিয়ে দিয়েই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সবাই।“

“এই প্রতিবাদ দেশের মানুষের বিবেককে কিছুটা হলেও বোধহয় নাড়া দেবে – সম্ভবত সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যারা এসব করছে, তাদেরও চোখ খুলবে – তারাও বুঝতে পারবে যে এই দেশ হিন্দু, মুসলমান, শিখ, ক্রীশ্চান – সবার জন্য

অশোক বাজপেয়ী, কবি”

“এই প্রতিবাদ দেশের মানুষের বিবেককে কিছুটা হলেও বোধহয় নাড়া দেবে – সম্ভবত সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যারা এসব করছে, তাদেরও চোখ খুলবে – তারাও বুঝতে পারবে যে এই দেশ হিন্দু, মুসলমান, শিখ, ক্রীশ্চান – সবার জন্য,” মন্তব্য কবি অশোক বাজপেয়ীর।

একের পর এক কবি সাহিত্যিক তাঁদের সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অমিত শাহ এইসব ঘটনা নিয়ে বিশেষ মুখ খোলেন নি। কবি অশোক বাজপেয়ীয়ের সন্দেহ অনেক সময়ে মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ হয় – এক্ষেত্রেই ব্যাপারটা সেরকম নয় তো!

কবি সাহিত্যিকেরা একসঙ্গে সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে কোনও ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন – এটা ভারতে বেশ বিরল – এমনকি আগেও কখনও ধর্মীয় দাঙ্গার পরে এভাবে প্রতিবাদ হয় নি।

ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা আর উন্মাদনার প্রতিবাদ করা নিয়ে কোনও বিরোধ না থাকলেও সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদের এই রূপ নিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে।

সাহিত্য একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখার্জি বলছিলেন, “বিষয়টার প্রতিবাদ তো হওয়ারই মতো – এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে কি প্রতিবাদ হয়? কেউ ইন্দিরা গান্ধীর আমলে পুরস্কার পেয়েছেন, এখন সেটা ফিরিয়ে দিয়ে কী হবে! আর ফিরিয়ে দেওয়াটাও তো অর্থহীন – পুরস্কার প্রাপকের নাম তো সব জায়গাতে রেকর্ড করা রয়েছে।“

“বিষয়টার প্রতিবাদ তো হওয়ারই মতো – এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে কি প্রতিবাদ হয়? কেউ ইন্দিরা গান্ধীর আমলে পুরস্কার পেয়েছেন, এখন সেটা ফিরিয়ে দিয়ে কী হবে! আর ফিরিয়ে দেওয়াটাও তো অর্থহীন – পুরস্কার প্রাপকের নাম তো সব জায়গাতে রেকর্ড করা রয়েছে

শীর্ষেন্‌দু মুখোপাধ্যায়, কথাসাহিত্যিক”

আরেক একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক অমর মিত্র মতে, “দেশটা যে খুব খারাপ দিকে যাচ্ছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু একাডেমী পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে কী সরকারের ওপরে চাপ তৈরী করা যাচ্ছে না মনে হচ্ছে সাহিত্য একাডেমী-ই ওই জঘন্য কাজ করেছে – তা তো না। আর সাহিত্য একাডেমী তো সরকারী প্রতিষ্ঠান নয়। আমার এই জায়গাটাতে গোলমাল লাগছে, তবে প্রতিবাদে রাস্তায় নামার দরকার রয়েছে।“

যেহেতু সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার কোনও সরকারী পুরস্কার নয়, তাই সরকারের ওপরে সরাসরি কোনও চাপ তৈরী করা যাচ্ছে না এভাবে – এমনটা মনে করেন অনেকে। সেই জন্যই সম্ভবত সরকার বা ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিশেষ উদ্বেগ যে নেই সেটা স্পষ্ট।

কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা তাই তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে পারেন “যাঁরা পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা লেখা তো বন্ধ করেন নি – লেখা বন্ধ হয়ে গেলে সরকার চিন্তাভাবনা করবে।“

গত এক সপ্তাহ ধরে একের পর এক লেখক-কবি তাঁদের সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন। আজ ১৬ জন তামিল সাহিত্যক আর কয়েকদিন আগে একঝাঁক কন্নড় সাহিত্যিক ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁদের রাজ্য সরকারগুলির দেওয়া পুরস্কার।

এঁরা সকলেই বলছেন ভারতে যেভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে, বাক স্বাধীনতার ওপরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো হস্তক্ষেপ করে চলেছে, তার ফলে তাঁদের সংবেদনশীল মনে গভীর ক্ষত তৈরী করেছে। (সুত্রঃ বিবিসি বাংলা)