ফজলুল বারী:পাকিস্তানে ক্রিকেট সফর বাংলাদেশ দলের জন্যে নিরাপদ নয়। এরজন্যে বাংলাদেশ সেদেশে লম্বা সময় ধরে অবস্থান অর্থাৎ টেস্ট ক্রিকেট খেলতে রাজি হয়নি। খেলতে চেয়েছে শুধু টি-টোয়েন্টি ম্যাচ এবং এর সবগুলো ম্যাচ হতে হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান! বলেছে তারা বাংলাদেশ বিরুদ্ধে আইসিসির কাছে নালিশ করবে, পাকিস্তান নিরাপদ, ইত্যাদি! এতো গেলো একটা দিক। আরেক দিক হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ভিতরের পাকিস্তান প্রেমিকরা অনেকদিন ধরে দলকে সেদেশে নিয়ে যাবার জন্যে নীরবে-গোপনে কাজ করে চলেছেন। এবং এটা যেনো কী রকম এক এসাইনমেন্ট যে তারা যেনো যে কোনভাবে বাংলাদেশ দলকে পাকিস্তান নেবেনই নেবেন! কিন্তু সর্বশেষ দেশের যে নিরাপত্তা দলটি পাকিস্তান ঘুরে এসেছে তারা রিপোর্ট দিয়েছে লম্বা সময়ের জন্যে পাকিস্তানে বাংলাদেশ দলের অবস্থান নিরাপদ নয়। এরজন্যে বলা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের কথা! যেখানে পাকিস্তান দেশটি বাংলাদেশ দলের জন্যে নিরাপদ নয় সেখানে ‘লম্বা সময়’ আর ‘সংক্ষিপ্ত সময়’ কী? এরপরও অনিরাপদ দেশে ক্রিকেটদলকে ঝুঁকিপূর্ন সফরে নিয়ে যেতে আগ্রহী পিছনের লোকজনকে শনাক্ত করতে হবে।
ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে বিসিবি অনেকদিন ধরেই দেশের মানুষের সঙ্গে একপ্রকার চোর-পুলিশ খেলছে! প্রথম বলা হয়েছে পাকিস্তান সফরের সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ সরকার। কারন এর আগে ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর বাতিলে সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। কারন নিরাপত্তা ইস্যু। পাকিস্তান কোন নিরাপদ দেশ নয় এরজন্যে ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সফর বাতিল করাতে বেশ কয়েক বছর ধরে সার্ক সম্মেলন হচ্ছেনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নানান দেশ সফরে যান, শুধু পাকিস্তান ছাড়া। কারন পাকিস্তান দেশটিকে তিনি নিরাপদ মনে করেননা। খেলার সঙ্গে রাজনীতি জড়ানো ঠিক নয়। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সম্পর্কটিও তিক্ত করেছে পাকিস্তান। যুদ্ধাপরাধীদের একেকটি ফাঁসির পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে পাকিস্তানের সংসদে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার মিছিল হয়েছে পাকিস্তানের রাস্তায়। সেখানে ক্রিকেট দলকে নিয়ে যেতে চাইছে কারা? ক্রিকেট দলের ওপর তাদের প্রতিশোধের সুযোগ করে দিতে?
পাকিস্তান বলতে চাইছে যে শ্রীলংকা দলের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়েছিল সেই শ্রীলংকা পাকিস্তানে এসে খেলে গেছে অতএব তারা এখন নিরাপদ! শ্রীলংকার নিরাপত্তার সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এক হয় কী করে? ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিন আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড এসব দলটি নিরাপদ পাকিস্তানে খেলতে গেছে? না যাবে? তাদের সঙ্গে খেলার আয়োজন করা হয় দুবাই-শারজায় আর বাংলাদেশ নিয়ে টানাহেঁচড়ার কারন কী? নানা কারনে পাকিস্তানের জনমত বাংলাদেশকে শত্রুদেশ মনে করে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে এই শত্রুতা আরও কঠোর হয়েছে। এর আগে জঙ্গি মুফতি হান্নান সহ আরও কিছু জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ফাঁসির আদেশ হয়েছে হলি আর্টিজানের ঘটনার জঙ্গিদের। এসব জঙ্গির হেডকোয়ার্টার পাকিস্তান। প্লিজ দেশের ক্রিকেটবীরদের জেনেশুনে মৃত্যুকূপে ঠেলে দেবেননা। নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশ লম্বা তথা টেস্ট সফর না, টি-টোয়েন্টি খেলতে রাজি হয়েছে, এটি জানাজানি হবার পর টি-টোয়েন্টি সফরকালীন বাংলাদেশ দলের ওপর হামলা হবেনা এই গ্যারান্টি কে দেবে? প্লিজ, এ ব্যাপারে সরকারকে হস্তক্ষেপ জরুরি। সরকার যদি দেশের ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি জুজু দেখিয়ে লাভ হবেনা।
কারন আইসিসি ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিন আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড এসব দলকে পাকিস্তান যেতে বাধ্য করতে পারবেনা। সবার আগে নিরাপত্তা, এরপর খেলা। নিরাপত্তাই যদি মনের মধ্যে না থাকে তাহলো ক্রিকেটাররা অনুশীলন-খেলায় মনোযোগ দেবে কী করে? পাকিস্তান সফর নিয়ে বিসিবি মাঝে আরেক চালাকির আশ্রয় নিয়ে বলেছিল ক্রিকেটারদের এ ব্যাপারে জোরাজুরি করা হবেনা। এরপর আবার নিজেরা নিজেরা বলেছে ক্রিকেটাররা পাকিস্তানে খেলতে যেতে চায়! লক্ষ্য করবেন সবকিছু বিসিবি নিজে নিজেই বলছে! অথচ আমরা দেখলাম টেস্ট দলের এক বোলার বলছে টি-টোয়েন্টি দলের বোলার যদি যেতে না চায় এই চান্সে সে যেতে চায় পাকিস্তানে! দল গেলেতো সিরিয়াসলি খেলার জন্যে কোন দেশে যায়। চান্স মোহাম্মদদের নিয়েতো একটা সফরের দল ঠিক করা হয়না বা করা উচিত না।
বাংলাদেশের বেশ কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষকের কথা শুনছিলাম টিভিতে। তারাও বলছিলেন শ্রীলংকার নিরাপত্তা শ্রীলংকার কাছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাংলাদেশের কাছে। তারাও এ অবস্থায় ক্রিকেট দলের পাকিস্তানে যাবার বিপক্ষে। কিন্তু বিসিবির স্বৈরতন্ত্র কারো কথায় আমল-পাত্তা দিচ্ছেনা! দলকে তারা পাকিস্তান যেনো নেবেই নেবে! ওই বললাম কার যেন এসাইনমেন্ট! এসাইনমেন্ট যাই থাক, বিসিবিতো সরাসরি বলতে পারে ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিন আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড এসব দেশ পাকিস্তানে গিয়ে আগে খেলুক, এরপর আমরা যাবো। কারন সে সব দেশের চাইতে পাকিস্তানে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি। ভয়ের ব্যাপার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিপদজ্জনক পাকিস্তান সফর নিয়ে আগে যেভাবে প্রতিবাদ হতো, এখন সবাই যেন অন্য কোথাও ব্যস্ত! আমি আমার দেশটাকে ভালোবাসি, ক্রিকেট দলটাকে ভালোবাসি, তাই একা একা প্রতিবাদ করেই চলেছি। প্রতিবাদ করো বাংলাদেশ। জাগো প্রিয় প্রজন্ম।