ফজলুল বারী:মুজিববর্ষেও অস্বাভাবিক একটি পরিস্থিতি চলছে বাংলাদেশে। অথবা অপেক্ষা করছে! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। সেই ১৯৪৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্যে প্রস্তুত করেন। তাঁর নামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তাঁকে সম্মান দেখানো এখন বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও। যেমন ভারতের মহাত্মা গান্ধী, পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। দলমত নির্বিশেষে সব দল ভারতে-পাকিস্তানে তাদের জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা করে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে! কারন ধর্মীয় সংগঠনগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তাই এই সংগঠনগুলো পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে সম্মান দেখালেও বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানেনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে দল হিসাবে বিএনপির সৃষ্টি এবং বিকাশ। অতএব বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নানান কর্মসূচি থাকলেও বিএনপি এবং এর রাজনৈতিক শরীকদের কোন কর্মসূচি নেই! কোন কর্মসূচি নেই বামপন্থীদেরও! অথচ এরা সবাই নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসাবে দাবি করে! হুমায়ুন আজাদ হয়তো এরজন্যে বলে গিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু একটি অপ্রস্তুত জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন!
এমন একটি স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে হচ্ছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। মুজিববর্ষে ঢাকার দুই সিটিতে এমন দু’জন মেয়র দরকার যারা মুজিববর্ষের নানা কর্মসূচিতে রাজধানীর মানুষকে নেতৃত্ব দেবেন। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে কোন দলের প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হতে পারেন। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবার। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা মেয়র পদে জয়ী হলে অনিবার্যভাবে তারা মুজিববর্ষের ঢাকার নানা কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকবেন। বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হলে তাদের ভূমিকা কী হবে? হাত গুটানো? বিএনপির দুই প্রার্থী ইশরাক হোসেন-তাবিথ আউয়াল প্রায় হাতগুটানো ভাব দেখিয়ে যেন বলেন নির্বাচিত হলে ঢাকায় উন্নয়ন নয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামানো তাদের লক্ষ্য! তাদের জানা দরকার ঢাকার মেয়ররা তা পারেননা। ঢাকার মেয়রদের শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী। তাবিথ-ইশরাকের তা মাথায় রাখা উচিত। মুজিববর্ষে কী ভূমিকা থাকবে তাবিথ-ইশরাকের? এসব তাদের এখনই স্পষ্ট করতে হবে। স্পষ্ট না করলে আইনগত ভূমিকা তাদের জানানোর দরকার আছে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। যে যেমন।
ডক্টর কামাল হোসেন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না ইনাদের কী কর্মসূচি মুজিববর্ষে? না মুখ ফুটে বলতে লজ্জা করে? না বিএনপির আপত্তি আছে? তাদের সাফ কথা বলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যান আ স ম আব্দুর রব। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের মতো বঙ্গবন্ধু বাদ দিয়ে বলা শুরু করেন ‘শেখ মুজিব’! এরশাদের গৃহপালিত বিরোধীদলের নেতা রব সাহেব ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। মন্ত্রিসভা বাদ পড়ার পর থেকে তিনি আবার বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা বিরোধী! জাসদ-বাসদ-গণমুক্তি পার্টি করে আওয়ামী লীগে এসেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ১/১১’র সময় জেনারেলদের দেখানো স্বপ্নে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার স্বপ্ন ধংস হবার পর তিনি খালেদা জিয়া-ধানের শীষে ক্ষমতার কাছে যাবার স্বপ্ন দেখছেন! তিনি জানেন খালেদার সঙ্গে থাকতে হলে বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে নিতে নেই!
বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য নুরুল হক নুরু নামের এমন একজন ডাকসু ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন যিনি স্বরস্বতী পুজার মধ্যে ঢাকা সিটির নির্বাচনের জেদাজেদির সময় মুখে কলুপ এঁটে বসেছিলেন! মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন-অনশনের মুখে নির্বাচনের তারিখ বদলাতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু স্বরস্বতী পুজায় হিন্দুয়ানি গন্ধের জন্যে নুরুর কিছু বলার ছিলোনা! অথচ ডাকসু ভিপিরা সব সময় অসাম্প্রদায়িক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনাকে ধারন করতেন। কোটা আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার ছবি মাথায় নিয়ে মিছিল করে লোকজনকে বিভ্রান্তও করেন নুরু! তখন বলেছিলেন টিউশনি করে তার জীবন চলে! এখন তিনি কোটিপতি ঠিকাদার আন্টির টেন্ডার দেখভাল করেন! মুজিববর্ষ নিয়ে নীরব হলেও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অন্যতম জিয়ার জন্মদিনে ফেসবুকে স্ট্যটাস দিয়েছেন নুরু। বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের চেতনাবাজ বলে কটাক্ষ করেন! মুজিবর্ষের কর্মসূচির বিষয়ে জবাবদিহির আওতায় আনতে ডাকসু ভিপিকে।
আগামী কয়েকদিন ঢাকার ভবিষ্যতের জন্যে গুরুত্বপূর্ন। ঢাকাবাসীকে এমন মেয়রদের নির্বাচিত করতে হবে যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতি যথাযথ সম্মান বজায় রেখেই ঢাকার উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা মানতে সম্মান করতে রাজি নন, এমন কেউ যেন আর কোদিন ঢাকার মেয়রের চেয়ারে বসতে না পারেন। আইনানুগ মেয়রের কার্যালয়ে থাকবে জাতির পিতা আর প্রধানমন্ত্রীর ছবি। মর্যাদা দিতে শূচিবায়ুগ্রস্ত কারও ঢাকার মেয়র হবার সুযোগ নেই। চলমান সাংবিধানিক আইন এটিই বলে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে কোন সাংবাদিক তাদের প্রশ্নটি করবেন কী? ভোটের আগে এর দফারফা হওয়া দরকার।