ফজলুল বারী: শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কত টাকার ক্ষতিপূরন মামলা এরচাইতে বড় বিষয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাধরদের অনেকে এখন দেশের আর কাউকে মানুষ মনে করেননা। মানীর মান তারা কথার ফুলঝুরিতে ঠুনকো মনে করেন। এরা ধরাকে সরাজ্ঞান মনে করেন সরকারি দলের দাপটে। সরকারি দলও তাদের শাসায়না। কিন্তু এতে যে ক্ষতি হয় সরকারি দলেরই, তা তারা ক্ষমতায় থাকতে বোঝেওনা। শাহজাহান খান এই সরকারের জন্যে তেমন একজন আপদের নাম। তার মাধ্যমে সরকারের একের পর এক বড় ক্ষতি হচ্ছে। বাস চাপায় মারা গিয়েছিল ঢাকার দুই স্কুল ছাত্র। শাহজাহান খান ক্লিক করে হাসি দিয়ে যে প্রতিক্রিয়া দেন, এর প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছে তা সামাল দিতে অনেক মেকিপনা করতে হয়েছে সরকারকে। বাংলাদেশের স্কুল ছাত্রদের কাছে অঙ্গিকার করা নিরাপদ সড়কের আইনকানুন সরকার আজ পর্যন্ত কার্যকর করতে পারেনি। এই বাধার অন্যতম নাম শাহজাহান খান। আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান পরিবহন শ্রমিকদের লেলিয়ে দিয়ে জিম্মি করে ফেলেন আওয়ামী লীগের সরকারকে! আর আওয়ামী লীগ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ দিয়ে তোষামোদি করে প্রাক্তন জাসদ নেতা শাহজাহান খানের!
ইলিয়াস কাঞ্চন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেতা। বেদের মেয়ে জোস্না ছবির জন্যেও দেশের অনেক মানুষ তাকে চেনেন জানেন। এক সড়ক দূর্ঘটনায় স্ত্রীর মৃত্যুর পর জীবন বদলে যায় ইলিয়াস কাঞ্চনের। স্ত্রীর জন্যে তাজমহল গড়েছেন সম্রাট শাহজাহান। আর ইলিয়াস কাঞ্চন গড়ে তুলেছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে একটি আন্দোলন। বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় প্রান হারায়। অনেকে সারাজীবনের জন্যে পঙ্গু হয়ে যায়। এর কারন বাংলাদেশের সড়ক, সড়ক ব্যবস্থাপনা নিরাপদ-দুর্নীতিমুক্ত নয়।
উন্নত বিশ্বে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া অনেক কঠিন। দীর্ঘ প্রশিক্ষনে শতভাগ নিখুঁত চালনা ছাড়া কাউকে ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাশ দেয়া হয়না। আর বাংলাদেশে টাকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। এরমাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ড্রাইভিং তথা মানুষ মারার লাইসেন্স! বাংলাদেশের এসব ভূয়া লাইসেন্স পৌঁছে গেছে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত! সিডনির রাস্তায় পাওয়া যায় আট রকম বাংলাদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স! সিডনির পুলিশের হাতে এভাবে দেশের বদনাম হচ্ছে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই সড়ক নিরাপত্তাকে বাগে আনতে পারছেনা সরকার! এ সরকার পদ্মা সেতু বানাতে পারে। দেশের পথকে নিরাপদ করতে পারেনা!
ইলিয়াস কাঞ্চন যেহেতু নিরাপদ সড়ক চাই শিরোনামের জনপ্রিয় আন্দোলনটি ধরে রেখেছেন তাই শাহজাহান খানের লেলিয়ে দেয়া শ্রমিক নামধারী পান্ডারা প্রায় ইলিয়াস কাঞ্চনের পিছু নেয়! সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সড়ক নিরাপত্তার আইনটি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়। আর শাহজাহান খানের লেলিয়ে দেয়া শ্রমিকরা এর প্রতিবাদে ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি ভাঙ্গচুর করে! আর শাহজাহান খান হঠাৎ করে বলা শুরু করেন ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান তা তিনি জানেন, ইত্যাদি! শেখ হাসিনা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের কড়াকড়ি কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছেন। শাহজাহান খানের মুরোদ নেই শেখ হাসিনাকে কিছু বলার। নিরীহ ইলিয়াস কাঞ্চনের ওপর সব রাগ তার।
অথচ টাকার কুমির হবার অভিযোগ শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে। একদার জাসদ নেতা শাহজাহান খান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কিভাবে টাকার কুমির বনেছেন, এর একদিন তদন্ত হবে। একবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবার অনিশ্চয়তা দেখে শাহজাহান খান বিএনপির মনোনয়ন নিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তেমন বিপদে পড়লে জাসদের শাহজাহান খান আওয়ামী লীগে থাকবেননা। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসব দুধের মাছির দায় বয়ে বেড়াচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এ দলের নানান নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ। আর এ দলের নেতারাই টাকার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে নিরীহ লোকজনের চরিত্র হনন করেন! একবার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আবু সাইয়ীদের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ করে বসেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম! শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি ছিলেন নাজিউর রহমান মঞ্জু। তার ছেলে আন্দালিব রহমান পার্থ বিএনপি জোটের নেতা। যিনি সারাক্ষন শেখ হাসিনার পতন কামনা করেন। দুর্নীতির কারনে তার আরেক ভগ্নিপতি ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। শেখ সেলিমকে আর কেনো মন্ত্রিসভায় নেয়া হয়না তা শেখ হাসিনাই জানেন।
আর এই শেখ সেলিম বাংলাদেশের অন্যতম জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আবু সাইয়ীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক টাকাকড়ির কল্পিত অভিযোগ করেন! যিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নামের বিশেষ একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশে। শেখ সেলিমের ওই বক্তব্যের পরও সরকার বিব্রত হয়েছে। নিরীহ অধ্যাপক আবু সাইয়ীদ তখন নিরীহ একটি কথা শুধু বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি ম্যাগসেসাই পুরস্কারটা যদি না পেতাম তাহলে আমার রক্ত পরীক্ষার টাকাও হতোনা। আরেকবারতো আওয়ামী লীগের ফেঞ্চুগঞ্জের এমপি অধ্যাপক জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে মিছিল করান! অথচ অধ্যাপক জাফর ইকবাল সরকারের নানা জনহিতৈষী কর্মকান্ডের পক্ষে জড়িত একজন মনিষী।
ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে টাকাকড়ির অভিযোগ তোলার পর সরকার সমর্থক নানা মহলও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। কারন নিরাপদ সড়ক বিষয়ক সরকারি নানা কমিটিরও সদস্য এই সাবেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকা। শাহজাহান খানের এই অনৈতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কিন্তু শাহজাহান খান এর কোন জবাব দেননি। এরপর মামলা করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে সমন করেছেন শাহজাহান খানকে। আদালতে হাজির হতে বলেছেন। এই মামলা কী চলবে? বিচার পাবেন কী ইলিয়াস কাঞ্চন? এর কোনটাই এখনও নিশ্চিত নয়। শাহজাহান খান যেখানে কাউকেই পরোয়া করেননা তাকে জবাবদিহি কে করাবে তাও কেউ জানেনা। বাংলাদেশে ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো নিরীহ ভদ্রলোকরা এখন সত্যি অসহায়।