ফজলুল বারী:ওবায়দুল কাদের বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁকে ফোন করেছিলেন। ফোনে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু প্যারোলে মুক্তির লিখিত আবেদন দেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়েও জমা দেননি এমন কোন আবেদন। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আর বিএনপির মহাসচিবের মধ্যে কথা হয়েছে বা কথা শুরু হয়েছে, এটিকে একটি অগ্রগতি ভাবতে শুরু করি। এখানেও রাজনীতির মারপ্যাচ! প্যারোল অথবা জামিনে মুক্তি। দলের নেতা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে মির্জা ফখরুলও খালেদা জিয়ার বোনের ভাষায় ‘মানবিক কারনে খালেদার মুক্তি চাইলেন’! খালেদা এবং যুদ্ধাপরাধীদের হেড উকিল খন্দকার মাহবুব হোসেন বললেন তারা হাইকোর্টে আবার জামিনের আবেদন পাবেন। জামিন পেলে ভাববেন দেশে আইনের শাসন আছে। এরমাধ্যমে খালেদার মুক্তি কৌশলের চালাচালিতে বিলম্বিত হতে পারে।
সরকারি দলের নেতাদের কথাবার্তায় মোটামুটি ধারনা করা যায় সরকারি দল খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিতে চায়। খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চান কিনা বলা মুশকিল। কারন খালেদা জিয়া একজন জেদি মহিলা। মরে যাবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার কাছে মাথা নোয়াবেননা। যে শেখ হাসিনার নাম তিনি গালি অথবা উন্নাসিক উক্তি ছাড়া মুখেও আনেননা। বিএনপি মুক্তি চায় জামিনে। রাজনৈতিক ভাষা নিঃশর্ত মুক্তি। আর খালেদার পরিবার চায় যে কোন উপায়ে মুক্তি। যে কোন উপায়ে মুক্তির পর তারা খালেদাকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ পাঠাতে চায়। এটি খালেদা জিয়ার বোন বলেছেন। আর খালেদা জিয়ার ভাই এমন একটি আবেদন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে। যদিও তিনিও হয়তো জানেন চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে ডিসচার্জ করতে পারেন। কিন্তু মুক্তি দিতে পারেননা। সর্বশেষ মানবিক কারনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবার কথা বলেছেন তাঁর বোন। যেটা খালেদাও নেবেননা সরকারও দেবেনা।
কিন্তু আসল প্রয়োজন হলো, খালেদা জিয়ার মুক্তি দরকার। সরকারও তাদের সুবিধামতো তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দিতে চায়। প্যারোলে মুক্তি মানে শর্ত সাপেক্ষ মুক্তি। প্যারোলে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেননা। দরকষাকষির এ পর্যায়ে সরকার সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারন খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে বিএনপি কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। আন্দোলন গড়তে পারলে সরকার হয়তো বিএনপির চাপ মানতে সরকার বাধ্য হতো। কথায় বলে বাচ্চা না কাঁদলে মা-ও বাচ্চাকে দুধ দেননা।
খালেদা জিয়ার কারাজীবনের পিছনে প্রতিদিন রাষ্ট্রের যে খরচ সে হিসাব হয়তো একদিন জানা যাবে। খালেদা জিয়ার চলতি শারীরিক অবস্থার কারন অনভ্যস্ত জেল জীবন। কারন তিনি বিলাস জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। এখন হাসপাতালের ভিভিআইপি কেবিনে রাখুন আর ফাতেমার সঙ্গে রাখুন এটা তাঁর অভ্যস্ত বিলাস জীবন নয়। খালেদা জিয়ার কারাজীবন নিয়ে বিএনপি মোটাদাগের কিছু মিথ্যাচার করেছে। প্রথম যে সত্য তারা বেমালুম চেপে যায় তাহলো দুর্নীতির মামলার দন্ডিত তাদের নেত্রী। খালেদার মতো দন্ড নিয়ে হাজার হাজার বন্দী সারাদেশের বিভিন্ন কারাগারে আছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার জন্যে আলাদা বিবেচনা চায় বিএনপি। খালেদার মূল দুটি শারীরিক সমস্যা আর্থাইটিজ এবং ডায়াবেটিকস। এ দুটি রোগে মানুষ মারা যায়না। কষ্ট পায়। নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। এ দুটি রোগ নির্মূল করা যায়না। আর ডায়াবেটিকস যার থাকে তার অন্য রোগগুলোর নিয়ন্ত্রন করতে চাইলে আগে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রন করতে হয়। ডায়াবেটিকসের রোগীদের পরিমিত আহারের পাশাপাশি হাঁটাহাঁটি করতে হয়। এসব খালেদা জিয়া আগেও করেননি, কারাজীবনে নিয়ম মেনে করেন এটা বলা মুশকিল।
এই আর্থাইটিজের সমস্যা নিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন, বিরোধীদলের নেত্রী ছিলেন। আর্থাইটিজের সর্বোচ্চ চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। যা খালেদা জিয়ার দু’বার বিদেশে হয়েছে। এই অস্ত্রোপচার দেশেও হয়। এছাড়া ইনজেকশন, ফিজিও থেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে রাখা হয় আর্থাইটিজ। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের চিকিৎসকরা বলেছেন খালেদা জিয়া তাদের সহযোগিতা করেননা। ডাক্তারের কাজ ডাক্তারকে করতে না দিলে রোগীর রোগ নিরাময় দুরূহ। আর্থাইটিজ ডায়াবেটিকস দুটো রোগই রোগীর মানসিক অবস্থার কারনে বাড়ে কমে। জেল জীবনে খালেদার মন ভালো থাকার কথা নয়। আজ তিনি মুক্তি পেলে দেখা যাবে দ্রুত তাঁর অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু মুক্তি খালেদা এবং বিএনপিকে বাস্তব অবস্থা মাথায় রাখতে হবে। মুক্তি নিতে হবে সরকারি ফর্মূলায়। রাজনৈতিক লাভক্ষতির হিসাব সরকার-বিএনপি উভয় পক্ষের আছে। খালেদার মুক্তির স্বার্থে বিএনপিকে প্রয়োজনে নতজানু হতে হবে। রাজনৈতিক লাভক্ষতির হিসাবে কষতে দেরি করতে গেলে তাতে খালেদা জিয়ার শারিরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাতো খালেদা-বিএনপি কারও উপকারে আসবেনা।