অনলাইন ডেস্কঃ ৩ জুলাই ২০১৫
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র লুট ও কারাগারে হামলা চালিয়ে জঙ্গি নেতাদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার উপমহাদেশীয় শাখা। এছাড়া দেশজুড়ে বড় হামলা চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার ছকও এঁকেছিল তারা। কিন্তু তার আগেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিদের এই পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দেয়ার দাবি করেছে র্যাব। আল-কায়েদার উপমহাদেশীয় শাখার ‘প্রধান সমন্বয়কারী’সহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত বুধবার ভোর থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত পুরান ঢাকার সদর ঘাট, বিমানবন্দর রেল স্টেশন ও মিরপুর এলাকায় টানা ২৪ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা হলো একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও সাবেক হুজি নেতা মাওলানা মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিম ওরফে নানা ওরফে বদিউল, একিউআইএসের উপদেষ্টা মুফতি জাফর আমিন ওরফে সালমান, সক্রিয় সদস্য মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, আবদুল রহমান বেপারী, আল আমিন ওরফে ইব্রাহিম, মোজাহিদুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, হাবিব উল্লাহ, শহিদুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে আড়াই লিটার সালফিউরিক অ্যাসিড, এক লিটার এসিটন, এক কেজি গন্ধক, এক কেজি সালফার, ৪০০ গ্রাম পটাশিয়াম ক্লোরেট, ৪৯ হাজার ৪৯৪ টাকা, মার্বেল ৫৫০টি, দুই লিটার গ্লিসারিন, ৫ কেজি সোডিয়াম বাই কার্বোনেট, ৫টি জার, ৫ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, একটি সিপিইউ, একটি ব্যাংক চেক, ১৬টি মোবাইল ফোন, একটি ক্যামেরা, দুই কয়েল ক্যাবল, ৪টি নান চাকু, ৬টি ছুরি, একটি চাপাতি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, এক কার্টন দিয়াশলাই, ১৫টি বিস্ফোরক, ১০টি ঘড়ি, ১৪৯টি জিহাদি বই এবং ৩০টি প্রশিক্ষণ বই জব্দ করা হয়।
গতকাল দুপুরে কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি মাইনুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে ছাড়িয়ে নিতে কারাগার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল। সফল হতে পারলে এক সাথে সারা দেশে হামলার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি প্রদেশ ও বাংলাদেশ নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করাই তাদের পরিকল্পনা। তারা আল কায়েদা ও আইএসের শাখা একিউআইএসের কার্যক্রম বাংলাদেশেও শুরু করে। ঈদের পর রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর জন্য বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য ঢাকায় জড়ো করার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য তারা রাজধানীর মিরপুরে একটি বাসাও ভাড়া নেয়। সেই বাসায় বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য মিলিত হতে বরিশাল ও খুলনা থেকে রওয়ানা দেয় বলে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগে খবর আসে। তিনি আরও বলেন, মাওলানা মুফতি মাইনুদ্দিন ওরফে আবুল জান্দাল বৃটিশ হাইকমিশনের ওপর হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি জেলহাজতে থেকে মোবাইল ও চিঠির মাধ্যমে জেলের বাইরে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংগঠনটির নাম ‘দাওয়াতে তবলীগ’ এবং পরে ‘৩১৩ বদরের সৈনিক’ নামে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালায়। তিন স্তরে কাজও শুরু করেছে দাওয়াতে তবলীগ। তারা ঢাকার বাইরে ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করে। এজন্য বগুড়ায় একটি মাদরাসার মাঠও নির্ধারণ করেছিল। ওই ট্রেনিং পরিচালনার জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ বই নির্দেশিকা জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল একটি বোমা তৈরি কর- তোমার মায়ের রান্না ঘরে, কিভাবে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিস্ফোরক বানাতে হয়, তথ্য সুরক্ষায় একজন মুজাহিদের পাথেয়, নিরাপত্তা ও ইন্টেলিজেন্স বিষয়ক কোর্স, একে-৪৭ এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ (২য় পর্ব), নীরবে হত্যার কৌশল, এয়ার-লানচেড গাইডেড মিসাইল অ্যান্ড গাইডেড মিসাইল লঞ্চার, বালাকোট মিডিয়া, যারা মিডিয়ার মাঠে তাদের জন্য একটি বার্তা এবং শতাব্দীর আন্দামানা হতে বলছিসহ বিভিন্ন ধরনের জিহাদি বই ও ভিডিও চিত্র।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা অনেকটাই নিস্ক্রিয়। একারণে সংগঠনটি নতুন পন্থায় দাঁড়ানোর লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার ও হোটস এ্যাপ্সের মাধ্যমে তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। (সুত্রঃ মানবজমিন , ৩ জুলাই ২০১৫)