কেমন থাকেন বাংলাদেশি অভিবাসীদের সন্তানেরা?

কেমন থাকেন বাংলাদেশি অভিবাসীদের সন্তানেরা?

মুস্তাক
আড়াই বছর বয়স থেকে নানা নানীর কাছে বড় হচ্ছে মুস্তাক।

অনলাইন ডেস্কঃ ১৯ জুলাই ২০১৫

এ্যালবাম খুলে বাবা মায়ের ছবি দেখাচ্ছিল ৮ বছর বয়সী মুস্তাক তাসীন।

তার বাবা মা দুজনেই লেবাননে কাজ করেন।

আড়াই বছর বয়স থেকে মুস্তাকের দেখাশোনা করছেন তার নানা নানী।

বাবা মায়ের চেহারা মনে করতে পারে না মুস্তাক।

পুরনো ফটোগ্রাফ দেখে সে জেনেছে তার মায়ের লম্বা কালো চুল আছে।

ছবি দেখা, টেলিফোন আলাপ আর মাঝে মাঝে ভিডিও চ্যাট এটুকুই বাবা মায়ের সাথে তার বন্ধন টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায়।

নানী হোসনে আরা বেগম বলছিলেন অন্য ছেলেদের থেকে মুস্তাক একটু যেন আলাদা।

“বাবা মা দুরে থাকে বলে কিনা জানিনা তবে সে একদমই বাইরে যায় না। বাইরে যেতে সে ভয় পায়। কারো সাথে খেলতেও না”, বলছিলেন তিনি।

null
সানজিদার মা হংকং এ গৃহকর্মীর কাজ করেন।

বাবা মায়ের অনুপস্থিতিতে শিশুদের জীবন যেমন বদলে যায় তেমনি তার প্রভাব পড়ে তাদের দেখাশোনা করা আত্মীয়দের জীবনেও।

হোসনে আরা বলছেন, মুস্তাককে নিয়ে মনে তার সবসময় উৎকণ্ঠা থাকে।

তিনি বলছিলেন, “আমার মেয়ের বাচ্চা হলেও সে অন্যের সন্তান তাই মনের মধ্যে ভয় সবসময় থাকে। যদি অসুখ করে। যদি স্কুলে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে বা কেউ ওকে ধরে নিয়ে যায়। এসব ভয় সবসময় মনে থাকে”

আশুলিয়ার ছোট্ট ঘরে বিদেশ থেকে পাঠানো নানান ধরনের খেলনা।

মুস্তাককে খুশি রাখতে তার বাবা মা সেগুলো পাঠিয়েছেন।

ঢাকার জেলার সাথে লাগোয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মুস্তাকের মতোই আত্মীয়দের কাছে বড় হচ্ছে ১২ বছর বয়সী সানজিদা আক্তার।

মা হংকং এ গৃহকর্মীর কাজ করেন তাই তার অনুপস্থিতিতে একটু আগেই যেন বড় হতে হয়েছে এই কিশোরীকে।

null
মায়ের অনুপস্থিতে একটু আগেই পরিবারে কিছু দায়িত্ব নিতে হয়েছে সানজিদাকে।

সানজিদা বলছিলো মা দুরে থাকেন বলে তাকে ঘরের কিছু দায়িত্ব আগেভাগেই নিতে হয়েছে।

সে বলছিল, “আমি ঘরদোর গুছাই। নিজের কাপড় ধুই। কখনো আব্বুরটাও ধুতে হয়। মাঝে মাঝে চাচীদের রান্নায়ও সাহায্য করি”

সানজিদা বা মুস্তাকের মতো এরকম কত শিশু বাবা মায়েদের অভিবাসনের ফলে আত্মীয়দের কাছে বড় হচ্ছে সেনিয়ে কোনও জরীপ বাংলাদেশে হয়নি।

তবে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে প্রায় ৯০ লাখের মতো বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন।

রয়েছেন অবৈধভাবে যাওয়া আরও অনেক অভিবাসী। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তারা গত বছর দেশে পাঠিয়েছেন ১৫শ কোটি ডলার।

বাংলাদেশের জন্য সবচাইতে বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন অভিবাসীরা।

কিন্তু তাদের অনুপস্থিতি সন্তানদের উপর কি প্রভাব ফেলছে সেনিয়ে সরকারি বা বেসরকারি কোন সহায়তা নেই।

ফেলে আসা প্রিয় সন্তানের জন্য তাই আত্মীয়রাই ভরসা। ( সুত্রঃ বিবিসি বাংলা, ১৮ জুলাই ২০১৫)