কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ আহমেদের অত্যন্ত ফলপ্রসু ভারত ও বাংলাদেশ সফর

কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ আহমেদের অত্যন্ত ফলপ্রসু ভারত ও বাংলাদেশ সফর

(ডঃ আহমেদ বিহার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানীদের সাথে)

সিডনি প্রতিনিধি:ডাবল্ড হ্যাপ্লয়েড নামে একটি আধুনিক গম প্রজনন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত এবং বাংলাদেশ সফর করেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ । প্রায় দুই সপ্তাহ ভারতে অবস্থানকালে ডঃ আহমেদ বিহার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিরসা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এই পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

ইতিপূর্বে তিনি উপমহাদেশের আরো কয়েকটি খ্যাতনামা গম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দেন । এই সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে Directorate of Wheat Research (DWR), ভারত; পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত; National Institute of Biotechnology and Genetic Engineering (NIBGE), পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI) ।

বাংলাদেশে অবস্থানকালে ডঃ আহমেদ গম গবেষনার উপর ৫ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার ব্যাপারে BARI-এর মহা পরিচালক ডঃ রফিকুল ইসলাম মন্ডল এবং উচ্চ পদস্থ গম বিজ্ঞানীদের সাথে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। Australian Centre for International Agricultural Research (ACIAR)- এর আর্থিক সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি ২০১৭ সালের মাঝামাঝি শুরু হতে পারে । ডাবল্ড হ্যাপ্লয়েড এবং মলিকুলার মার্কার প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে গমের উন্নত জাত তৈরি করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য ।

এই সফরকালে ডঃ আহমেদ BARI ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BSMRAU) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি (IUBAT)-এর সিলভার জুবলি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে এই পদ্ধতির উপর সেমিনার প্রদান করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে IUBAT-এর পক্ষে ডঃ আহমেদ কে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্য প্রফেসর ডঃ আলী আকবর।

সম্মানিত IUBAT-এর উপাচার্য প্রফেসর ডঃ আলিমুল্লাহ মিয়া এবং BSMRAU-এর উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মাহবুবুর রহমান তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাবল্ড হ্যাপ্লয়েড পদ্ধতির উপর গবেষণা শুরু করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে ডঃ আহমেদ সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন ।

তা ছাড়াও তিনি খ্যাতনামা ACI কোম্পানির একটি বায়োটেকনোলজি ল্যাব পরিদর্শন করেন এবং আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি Dr. Paul Fox -এর সাথে এই পদ্ধতির উপর মত বিনিময় করেন।

(BSMRAU-এর বায়োটেকনোলজি ল্যাব পরিদর্শনে ডঃ আহমেদ )
(BSMRAU-এর বায়োটেকনোলজি ল্যাব পরিদর্শনে ডঃ আহমেদ )

উল্লেখ্য ডঃ আহমেদ ২০০১ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাবল্ড হ্যাপ্লয়েড পদ্ধতির উপর গবেষণা শুরু করেন । কিছুদিনের মধ্যেই একটি কার্যকরী ডাবল্ড হ্যাপ্লয়েড পদ্ধতি উদ্ভাবন করে গমের নতুন  জাত তৈরি করার সময় ৩ বছর কমিয়ে আনেন। ফলশ্রুতিতে  অস্ট্রেলিয়ার গম শিল্পে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই পদ্ধতি অবলম্বনে ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকার জন্য মোট ৬টি নতুন জাত তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো এখন কৃষকের মাঠে শোভা পাচ্ছে। বিশ্ববিখ্যাত Agro-Science Company- অস্ট্রেলিয়ার Longreach Plant Breeders (আমেরিকার Pacific Seeds , নেদারল্যান্ডের Syngenta), আমেরিকার DOW এবং জার্মানির Bayer বর্তমানে এই পদ্ধতি ব্যাবহারের জন্য ডঃ আহমেদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ।

গম বিশ্বের প্রধান খাদ্য শস্য । গম থেকে যত রকমের খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হয় অন্য কোন শস্য থেকে তা হয় না । বাংলাদেশেও গমজাত খাবারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন টন গম ব্যাবহার করা হয়। তার মধ্যে ৩ মিলিয়ন টন বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে বর্তমান সরকার সম্প্রতি দিনাজপুরে অবস্থিত গম গবেষণা কেন্দ্রকে গম গবেষণা ইন্সটিটিঊটে রূপান্তরিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। উৎপাদন বাড়ানোর এই লক্ষ্য অর্জনে ডঃ আহমেদের এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রখাতে পারে বলে গম বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

 

(ডঃ আহমেদকে ক্রেস্ট প্রদান করছেন BAU-এর উপাচার্য )
(ডঃ আহমেদকে ক্রেস্ট প্রদান করছেন BAU-এর উপাচার্য )

উল্লেখ্য যে, গত গম মৌসমে বাংলাদেশে ব্লাস্ট নামে একটি রোগ প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। ভবিষ্যতেও এ ধরনের নতুন রোগ দেশে আসতে পারে অথবা বিদ্যমান রোগগুলো রূপ পরিবর্তন করে আরো বেশি আক্রমনাত্বক হয়ে উঠতে পারে । এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে যত সম্ভব দ্রুত ঐ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত তৈরি করতে হবে। একমাত্র ডাবল্ড হেল্পয়েড পদ্ধতির মাধ্যমেই তা অর্জন করা সম্ভব। সম্প্রতি ACIAR-এর আর্থিক সহায়তায় BARI-এর ২ জন বিজ্ঞানীকে এই পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ দেন ডঃ আহমেদ । এই প্রযুক্তিকে বাংলাদেশে কার্যকরী করার জন্য এখন দরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা ।

গবেষণার পাশাপাশি ডঃ আহমেদ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকেন। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর যাবত অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করলেও তিনি প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কথা ভুলে যাননি । অন্যান্য সামজিক কাজের মধ্যে তিনি তার এলাকার ২৬ জন গরীব ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়মিত উপবৃত্তি প্রদান করে আসছেন। প্রথম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী এই বৃত্তি পেয়ে থাকে। পরিবার ছোট রাখতে সাধারন মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য যে সকল পরিবারে সন্তানের সংখ্যা ২ জনের বেশি নয় কেবল সেই সকল পরিবারকেই তিনি এই আর্থিক সুবিধা  প্রদান করেন।

ডঃ আহমেদ ১৯৫৫ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার সুগন্ধি গ্রামের এক মুসলিম  পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৭২ সালে তার এলাকার শরীফ উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় অস্টম স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৮০ সালে বাংলদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি এজি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন ।

ডঃ আহমেদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে । উভয়েই কর্মক্ষেত্রে অতি অল্প বয়সে অসাধারন সাফল্য অর্জন করেন । তার ছেলে নওশাদ আহমেদ মাত্র ২৭ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার ANZ ব্যাঙ্কের State Manager হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঐ ব্যাঙ্কের Client Services and Investment Lending-এর প্রধান কর্মকর্তা । অন্যদিকে তার মেয়ে সানজানা আহমেদ মাত্র ২৬ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহত Commonwealth Bank-এর প্রধান কার্যালয়ে  সিনিয়র ম্যানেজার পদে অধিষ্ঠিত হন।

নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অসাধারন সাফল্য অর্জন করায় আমরা ডঃ আহমেদ এবং তার ছেলে ও মেয়েকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।